শুরুতে আবাহনী ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। এরপর হ্যাটট্রিক করেন মোহামেডানের মালয়েশিয়ান খেলোয়াড় ফাতিহ। ফলে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান, তবুও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। এতে বাইলজ অনুযায়ী ৫-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয় আবাহনীকে। 

মোহামেডান লিডে থেকেও কেন খেলতে অস্বীকৃতি জানাল এর কারণ পরবর্তীতে ব্যাখ্যা করেছেন ক্লাব ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স, ‘আমাদের একটা রেফারেল বাকি ছিল। আম্পায়ারকে বারবার রেফারেল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের দুই খেলোয়াড়কে লাল কার্ড ও এক খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেয়। ম্যাচের বাকি সময় ৭ জন নিয়ে (মূলত ৮ জন) খেলা সম্ভব নয়। তাই আমরা আর খেলতে যাইনি।’

এর আগে ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচের ৪২ মিনিটে। আবাহনীর আফ্ফান ইউসুফের সঙ্গে মোহামেডানের মালয়েশিয়ান খেলোয়াড় জুল পিদাউস বিন মিজানের ধাক্কাধাক্কি হয়। ওই সময় হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান মোহামেডান ও আবাহনীর একাধিক খেলোয়াড়। একপর্যায়ে মিনিট খানেকের মধ্যে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। বিশেষ করে মোহামেডানের খেলো গুরুতর আকার ধারণ করে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। মাঠে থাকা দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগ দেন ডাগআউটের বাকি খেলোয়াড়রাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওমানি আম্পায়াররা লাল কার্ড দেখান মোহামেডানের দুই খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম ও তানভীর সিয়ামকে। লাল কার্ড দেখেন আবাহনীর মো. নাঈমুদ্দিনও। হলুদ কার্ড দেখেন মোহামেডানের জুল পিদাউস ও আবাহনীর আফ্ফান ইউসুফ।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মোহামেডানের কাঠগড়ায় ওমানের আম্পায়ার হুসেইন আল হুসাইনি, ‘জিমিকে লাল কার্ড দিয়েছে এই আম্পায়ার। তিনিই আজ এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ফলে এটা স্পষ্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাদের মোহামেডানের খেলোয়াড় নয়, আবাহনীর মিমোই সমস্যার সৃষ্টি করেছে।’

এই লিগেই অনেক ম্যাচ দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ের অপেক্ষায় শেষ হয়েছে। তবে আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত কেন? এর উত্তরে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘আজকের ম্যাচে বাইলজের শতভাগ প্রয়োগ নিয়ে আমরা সচেষ্ট ছিলাম। আম্পায়াররা সেটাই অনুসরণ করেছে। দশ মিনিট অপেক্ষা করার কথা, সেখানে আরও বেশি সময় দেওয়া হলেও মোহামেডান আসেনি।’

বাইলজ ও নিয়মের কথা বললেও আজকের ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর শুরু হয়েছে। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগের ম্যাচ দেরিতে হওয়ায় এই ম্যাচও দেরি হয়েছে। তাছাড়া আজ অনেক গরম থাকায় হিট স্ট্রোক এড়াতে কিছুটা বিলম্ব করা হয়েছে খেলায়।’

মোহামেডান রিফিউজ টু প্লে হওয়ায় আবাহনী জয়ী। ফলে মোহামেডান ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে। এরপরও মোহামেডান শিরোপা উৎসব করেছে। এর কারণ সম্পর্কে দলটির কোচ শহিদুল্লাহ টিটু বলেন, ‘আমরা খেলায় ৩-২ গোলে এগিয়ে আছি তাই উৎসব করছি।’

অন্যদিকে, আবাহনী অবশ্য তেমন উল্লাস করেনি। আবাহনীর ম্যানেজার মাহবুব হারুন ম্যাচের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে বলেন, ‘খেলায় এ রকম ঘটনা ঘটেই। আম্পায়ার মোহামেডানকে ম্যাচে আসতে বলেছিল। তারা আসেনি, তাই খেলা শেষ করায় আমরা জয়ী।’

মোহামেডান তাদের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমিকে ছাড়াই এদিন খেলতে নামে। তৃতীয় মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে আফফান ইউসুফের নিখুঁত হিটে এগিয়ে যায় আবাহনী। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শুরুর দিকে পেনাল্টি কর্নারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি জানায় মোহামেডান। তখন অবশ্য তারা খুব বেশি সময় নেয়নি। পেনাল্টি কর্নার থেকে পুস্কর ক্ষীসা মিমো আবাহনীকে দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। 

মধ্য বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ায় মোহামেডান। মালয়েশিয়ার ফয়সাল বিন সারি দারুণ খেলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। তৃতীয় কোয়ার্টারের শুরুর দিকে ফয়সাল বিন সারি একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে রিভার্স হিটে গোল করেন। এরপর পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে সমতায় ফেরান সারি। তৃতীয় কোয়াটার্রের শেষদিকে তিনি হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। 

এজেড/এএইচএস