প্রিমিয়ার হকি লিগ মানেই যেন নানা বিতর্ক। এবারের লিগে অঘোষিত ফাইনালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মোহামেডান পুনরায় মাঠে ফেরেনি এতে আবাহনী ৫-০ ব্যবধানে জয়ী হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে ঐ ম্যাচের আম্পায়ারের শাস্তি, সেই ফলাফল বাতিলসহ হকি ফেডারেশন পুনঃগঠনের দাবি জানিয়েছে মোহামেডান।

ম্যাচের এক দিন পর আজ দুপুরে ক্লাব প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, 'আমাদের বিপক্ষে হকি লিগ জুড়ে যে অন্যায়-অবিচার হয়েছে। এজন্য আমরা ফেডারেশনকে নানা সময়ে চিঠি দিয়েছি, সেই চিঠির প্রতিকার পাইনি। তাই এখন বাধ্য হয়ে মাননীয় ক্রীড়া মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সুবিচারের দাবিতে।'

মোহামেডান ম্যাচের দিনই ভিডিও রেফারেল দেখে লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার করার দাবি জানিয়েছিল আম্পায়ারকে। আজকের সংবাদ সম্মেলনও সেই অবস্থানেই রয়েছে। সেই আম্পায়ার ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন। হকি ফেডারেশন আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করে এখন আবাহনী-মেরিনার্স প্লে অফ নিয়ে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে বাস্তবিক অর্থে মন্ত্রীর পক্ষে মোহামেডানের দাবি মানা সম্ভবপর হবে না বলাই যায়।

মোহামেডানের সাবেক পরিচালক ও কিংবদন্তী হকি এবং ফুটবলার প্রতাপ শঙ্কর হাজরা আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'এই লিগে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। একটি লিগে তিনটি নিয়ম কিভাবে হয় সেই জবাব চাই ফেডারেশনের কাছে। এক ম্যাচে ( আজাদ-বাংলাদেশ স্পোর্টিং ) এক কোয়ার্টার না খেলিয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি, আরেক ম্যাচ পরের দিন কয়েক মিনিট খেলা হলো আর আবাহনী-মোহামেডান খেলা শেষের আগেই ফলাফল ঘোষণা করা হলো।'

গত দুই দশকে মোহামেডানের ফুটবল ও ক্রিকেটে সাফল্য অনেকটাই কম সেই তুলনায় সফল হকিতে। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি সফল ডিসিপ্লিন থেকে নিজেদের সরে আসার পরিকল্পনা করছে। 'আম্পায়ারিং ও ফেডারেশন নিরপেক্ষ না হলে সেই লিগে অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নেই। মন্ত্রী যদি বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত বা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তখন আমাদের পরিচালনা পর্ষদ হকি না খেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’, বলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। হকিতে অংশগ্রহণ না করার পাশাপাশি হকি ফেডারেশনের কমিটিতে মোহামেডানের স্থায়ী সদস্যরাও পদত্যাগ করতে পারেন।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নে জর্জরিত ছিলেন মোহামেডানের কর্মকর্তারাও। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মোহামেডান ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল। ম্যাচের বাকি ছিল মাত্র ১৭ মিনিট। সেই মুহূর্তে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা কেন আবাহনী খেলোয়াড়দের ফাদে পড়ে বিবাদে জড়াল এবং টেন্ট থেকে পুরো দল গিয়ে কেন মারামারি করল? এই প্রশ্নের উত্তরে মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স বলেন, 'আবাহনীর খেলোয়াড় মিমো আগে আক্রমণ করেছে। সেই আক্রমণের প্রেক্ষিতে আমাদের খেলোয়াড়রা রক্তাক্ত হয়েছে। অথচ আম্পায়ার আমাদের বেশি কার্ড দিয়েছে। হকিতে উত্তেজিত মুহূর্তে খেলোয়াড় জড়ায় সেটি অনেক দিন থেকেই নতুন কিছু নয়।'

প্রতাপ শঙ্কর হাজরা হকি ফেডারেশনেরও কর্মকর্তা ছিলেন। তবে বর্তমান ফেডারেশনের কমিটির পরিবর্তন চান তিনি, 'মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নিরপেক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে ফেডারেশন পরিচালনা করা উচিত। না হলে হকির সামনে মৃত্যু ঘটবে।’

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ২০১৯ সালের নির্বাচনের মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মোহামেডান প্যানেল থেকে নির্বাচন করেই তিনি হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। পাঁচ বছরের মধ্যেই সেই মোহামেডান সাঈদকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে।

মোহামেডান হকির আম্পায়ারিং এবং ফেডারেশনের অনিয়ম নিয়ে এখন বেশ সোচ্চার। গত দেড় দুই বছর আগে ফুটবলের রেফারিং নিয়েও ক্লাবটি ফুটবল ফেডারেশনে চিঠি ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। দেশের আরেক শীর্ষ খেলা ক্রিকেটের আম্পায়ারিং নিয়ে অবশ্য বড়ই নিরব ক্লাবটি। গত বেশ কয়েক বছর আবাহনী ম্যাচে আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠে। আবাহনীর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি হয়েও মোহামেডান ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মোহামেডানের একাধিক কর্মকর্তা ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকের মতে, আবাহনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে মোহামেডানের ক্রিকেট কর্তারা বোর্ডে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখেন।

এজেড/এইচজেএস