১৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এএইচএফ কাপ হকি। সেই টুর্নামেন্ট উপলক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন ১৮ সদস্যের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। সেই দলে জায়গা করে নিতে পারেননি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের অধিনায়ক মেহরাব হোসেন সামিন। তার নেতৃত্বেই গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যুব হকির বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল।

ঈদের আগে হকি ফেডারেশন ২৪ জনের স্কোয়াড রেখেছিল। ঈদের পর তিন দিন অনুশীলন শেষে ছয় জন খেলোয়াড় বাদ দিয়ে স্কোয়াড চূড়ান্ত করেছে। যুব দলের অধিনায়কের চূড়ান্ত দলে জায়গা না হওয়া প্রসঙ্গে দলের হেড কোচ মামুনুর রশীদ বলেন, 'পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দল নির্বাচন করা হয়েছে। তার পজিশনে (ডিফেন্স) সবুজ, আশরাফুল, হুজায়ফা, শিতুলের মতো খেলোয়াড় রয়েছে। এজন্যই সে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রয়েছে।'

যুব দলের অধিনায়ক সামিনের একটু দুঃসময়ই যাচ্ছে। ঈদের দিন তার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। একটু স্বাভাবিক হয়ে বাবাকে বাসায় রেখে ক্যাম্পে ফিরেছেন একটু বিলম্বে গত পরশু রাতে। এক দিন অনুশীলন পরেই মূল দলে জায়গা করে নিতে পারলেন না। এতে অবশ্য তার আক্ষেপের চেয়ে জিদই বেশি কাজ করছে, 'আমি নিজেকে সামনের জন্য আরো প্রস্তুত করব। এটা তো সিনিয়র দল, এরপরও আমাদের ২১ দলের চার জন জায়গা পেয়েছে।’

ছয় জন খেলোয়াড় বাদ পড়লেও তারা আরো কয়েক দিন ক্যাম্পে থেকে অনুশীলন করবেন। এই সময়ের মধ্যে ইনজুরি বা কোনো সমস্যা হলে তাদের রিপ্লেস হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হকিতে এবারই প্রথম হেড কোচ, সহকারী কোচ, ফিজিও, ট্রেইনার, ভিডিও এনালিস্ট প্রায় পূর্ণাঙ্গ কোচিং স্টাফ নিয়ে দল বিদেশ সফর করছে।

হকি ফেডারেশন এএইচএফ কাপের জন্য ৫০ জনের অধিক খেলোয়াড়ের একটি প্রাথমিক তালিকা করেছিল। সেই প্রাথমিক তালিকায় দেশের হকির অন্যতম কিংবদন্তী রাসেল মাহমুদ জিমিকে রাখেনি। ফেডারেশনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল, ৩২ বছরের বেশি খেলোয়াড়দের দলে ডাকবে না। তরুণ খেলোয়াড়দের তৈরি করতে চেয়েছেন তারা। অনূর্ধ্ব-২১ দল সিনিয়র জাতীয় দলের আগের ধাপ। সিনিয়র দলের ১৮ জনের মধ্যে চার জন জায়গা করতে পেরেছেন। এর অর্থ সিনিয়ররা এখনো অনেকটাই ফিটনেস ও পারফরম্যান্সে জুনিয়রদের থেকে এগিয়ে এবং জুনিয়ররা এখনো সেই জায়গা নিতে পারছেন না।

ফেডারেশন এক দিকে সিনিয়র খেলোয়াড় জিমিকে দলে ডাকেনি। অন্য দিকে আবার দলের অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড দিয়েছে পুস্কর ক্ষিসা মিমোর হাতেই। যার বয়স প্রায় ৩২ এর কাছাকাছি। ১৮ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডের মধ্যে মিমোই সবচেয়ে সিনিয়র। বাংলাদেশ দলে দীর্ঘদিন খেললেও কখনো অধিনায়কত্ব করেনি। এজন্যই এবার তাকে ফেডারেশন সম্মান দেখিয়েছে। ফেডারেশনের সিদ্ধান্তকে প্রধান কোচও গ্রহণ করেছে।

ক্রিকেটে বোলার পরির্বতন, ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে অধিনায়কের মুন্সিয়ানা দেখানো যায়। ফুটবল, হকিতে অবশ্য তেমন ভূমিকার সুযোগ নেই অধিনায়কের। হকির অধিনায়কত্ব অনেকটা ফুটবল মতোই টসের আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিনিয়ত খেলোয়াড় ততোধিকবার বদলের সুযোগ থাকায় ফুটবলের চেয়েও কম প্রভাব হকির অধিনায়কত্বের।

এএইচএফ কাপ মূলত এশিয়ান কাপ হকির বাছাই। বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবারও সেই রকমই লক্ষ্য। প্রায় দেড় মাস অনুশীলন হলেও বিদেশি দলের বিপেক্ষ প্রস্তুতি ম্যাচ না হওয়ায় খানিকটা ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি খানিকটা পুষাতে ১৪ এপ্রিল দেশ ছাড়ার আগে আরো স্থানীয়ভাবে আরো দু’টি অনুশীলন ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল।

১৮ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড-

পুস্কর ক্ষিসা মিমো (অধিনায়ক), ফজলে হোসেন রাব্বি (সহ-অধিনায়ক), হুজাইফা হোসেন, রেজাউল করিম, সোহানুর রহমান সবুজ, ফরহাদ আহমেদ শিতুল, আশরাফুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, আবেদ উদ্দিন, নাইম উদ্দিন, আল নাহিয়ান, রোমান সরকার, আরশাদ হোসেন, ওবায়দুল হোসেন, রাকিবুল হাসান, মাহবুব হোসেন, বিপ্লব কুজুর ও আবু সাঈদ নিপ্পন।

স্ট্যান্ডবাই-

মেহরাব হোসেন সামিন, প্রিতম রায়, মেহেদী হাসান, নুরুজ্জামান নয়ন, তৈয়ব আলী ও মাইনুল ইসলাম।

এজেড/এইচজেএস