প্রধানমন্ত্রীর ১ কোটি টাকা অনুদান প্রাপ্তির পর যখন প্রিমিয়ার হকি লিগ শুরুর প্রস্তুতি চলছে ঠিক তখনই দু’টি চিঠিতে আবারও চাঙ্গা হচ্ছে হকির পুরনো রাজনীতি ও নোংরামি। সাত ক্লাবের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চিঠিটি দেয়া হয়েছে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে।

একই দিন হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছে ফেডারেশন সভাপতিকে। এই দুই চিঠির সুর একই; ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের প্রতি আস্থাহীনতা এবং সাধারণ সম্পাদকের পদে স্থায়ী কাউকে বসিয়ে টার্ফে লিগ চালু করা। চিঠির উদ্দেশ্য এক হলেও কার্যত দেখা যাচ্ছে ভিন্ন। চিঠি দেওয়ার দুই দিনের মধ্যে বর্তমান কমিটি থেকে চলছে অনেকের পদত্যাগের প্রক্রিয়া। কমিটির কয়েকজন পদত্যাগ করলে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে অ্যাডহক কমিটি গঠনই যেন অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বলে অনুমান হকি সংশ্লিষ্টদের।

সাবেক হকি তারকা ও নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম কামাল পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

মন্ত্রীর কাছে দেয়া ৭ ক্লাবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে ধরা পড়েছে অনেক আপত্তি ও অসঙ্গতি। মোহামেডানের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন আবু সাঈদ শাহীন। যিনি আগের মেয়াদে হকি কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশের শীর্ষ ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নতুন পরিচালনা পর্ষদ এই চিঠিতে বিব্রত।

সেই চিঠি

চিঠি প্রসঙ্গে মোহামেডানের ক্লাবের একাধিক পরিচালকের বক্তব্য, ‘স্বাক্ষরিত চিঠির সঙ্গে মোহামেডান ক্লাবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং স্বাক্ষরিত ব্যক্তির এখতিয়ারও নেই এই বিষয়ে স্বাক্ষর করার। আমাদের ফুটবল ও ক্রিকেট কমিটি হলেও হকিকে এখনো কমিটি হয়নি। সভাপতি মহোদয় নিজে হকি খেলোয়াড় ছিলেন, তিনি হকির বিষয়টি দেখভাল করছেন।’ 

সাত ক্লাবের স্বাক্ষরিত চিঠি মন্ত্রী বরাবর দিলেও সেই ক্লাবগুলোর অনেক শীর্ষ কর্তারা অবশ্য সেই চিঠির সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। দেশের সবচেয়ে পুরনো ক্লাব ওয়ারী। সেই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান মিরাজ স্পষ্টত বলেন, ‘ক্লাবের এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরের এখতিয়ার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। ওই চিঠির সাথে ওয়ারী ক্লাব কোনোভাবেই একমত নয়। আমরা খেলতে চাই, খেলার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি যা ইতোমধ্যে ফেডারেশনকে আমরা জানিয়েছি।’ তিনি এই প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘ওয়ারী ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ফলে আমাদের কমিটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যে ব্যক্তি আমাদের ক্লাবের হয়ে স্বাক্ষর করেছেন তার ব্যাপারে আমরা আলোচনা সাপেক্ষে ডিসিপ্লিনারি পদক্ষেপ নিতে পারি।’ ওয়ারীর মতো একই অবস্থান দেশের আরেক শীর্ষ ক্লাব ভিক্টোরিয়ার।

মন্ত্রী বরাবর চিঠিতে ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হয়ে স্বাক্ষর করেছেন গত হকি নির্বাচনে ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কাউন্সিলর। কাউন্সিলর হলেও তিনি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত নন। কাউন্সিলরের চিঠির স্বাক্ষর প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়ার সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনের পর কাউন্সিলের এই রকম কাজের এখতিয়ার আছে কিনা এই বিষয়ে আলোচনা করব।’

সাত ক্লাবের মধ্যে রয়েছে ঢাকা আবাহনী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং। এই দুই ক্লাবের হয়ে স্বাক্ষর করেছেন যথাক্রমে জাকি আহমেদ রিপন ও মোঃ হুমায়ুন। তারা আবার বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ। কমিটিতে থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা বিষয়ে তাদের দুই জনের সঙ্গেই যোগাযোগের কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি। কমিটির দুই জনের এই স্বাক্ষরে বিব্রত বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউসুফ, ‘কোষাধ্যক্ষ একবার সভাপতি ও আমার অনুমতি ছাড়াই অর্থ উত্তোলন করে খরচ করেছেন। এই বিষয়টি পরবর্তীতে তিনি ভুল স্বীকার করে চিঠি দেয়ায় মেনে নেয়া হয়েছে। এখন আবার কেন এই কাজ করলেন বুঝলাম না।  তিনি তো আমার সাথে কিছুদিন আগে ক্লাবে ক্লাবে গিয়েছেন খেলার জন্য।’

হকি অঙ্গনে আন্দোলন বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয় মেরিনার ইয়াংস ক্লাব। মেরিনার হকির উদ্ভুত অস্থিরতা নিরসন চায়, ‘আমরা খেলার জন্য প্রস্তুত। একটি কুচক্রী মহল খেলার চেয়ে কমিটিকে প্রাধান্য দিয়ে নানা কাজ করে খেলাকে বাধা দিচ্ছে।’ -বলেন বদরুল ইসলাম দিপু।  

২০১৯ সালের এপ্রিলে হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে ঢাকা আবাহনীর প্রার্থী আব্দুস সাদেককে পরাজিত করে নির্বাচিত হন মমিনুল হক সাঈদ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো কাণ্ডের পর থেকে তিনি দেশের বাইরে পলাতক অবস্থায়। এরপর থেকে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউসুফ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিমানবাহিনীর প্রধান অবসরে যাওয়ায় ও নতুন প্রধান হকি ফেডারেশনের সভাপতি দায়িত্ব নেয়ার আগে এই শূন্য অবস্থায় একটি পক্ষ এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে৷ 

এজেড/এটি