বাংলাদেশের হকিতে আরমানিটোলা স্কুল ও  স্কুলের মাঠ অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরমানিটোলা স্কুল থেকে উত্তর দিকে তাকালেই চোখে পড়বে ‘শরফুদ্দীন হাউজ।’ ঢাকার অন্যতম বনেদী আদেল পরিবারের আদি নিবাস। বাংলাদেশের হকিও এই পরিবারের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। বংশ পরম্পরায় এই পরিবারের সন্তানরা হকিতে এসেছে।

সেই ঐতিহাসিক শারফুদ্দিন আহমেদ হাউজে এক ব্যতিক্রমী হকি উৎসব সম্পন্ন হলো। প্রয়াত জাতীয় হকি খেলোয়াড় শোয়েব এ আদেল স্মরণে নাইট হকি টুর্নামেন্ট। বাড়ির উঠোনেই অল্প জায়গার মধ্যেই ফোর এ সাইড নাইট হকি টুর্নামেন্ট। পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্টের ফাইনালটি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। 

দেশের হকির সুপারস্টার রাসেল মাহমুদ জিমির ঢাকা ফিল্ড মার্শাল ৮-১০ গোলে নাইম ইসলামের আরমানিয়ান বয়েজের কাছে হেরেছে। প্রথমার্ধে অবশ্য জিমির দল ৬-৩ গোলে এগিয়ে ছিল। টুর্নামেন্টটি শুধু আয়তন, রাতে ফ্লাডলাইটে খেলাতেই স্বাতন্ত্র্যতা নয় অন্য ক্ষেত্রেও রয়েছে সৃজনশীলতা। ফোর এ সাইড ম্যাচে দু’জন ক্ষুদে খেলোয়াড় থাকা বাধ্যতামূলক। ১২ বছরের সাবিদ, জিহাদ এত ছোট জায়গার মধ্যেও অসাধারণ স্টিকওয়ার্ক প্রমাণ করে আরমানিটোলাবাসীদের রক্তেই হকি। শুধু স্টিকে নয়, হকির প্রতি আবেগও রয়েছে ক্ষুদেদের। তাই তো চ্যাম্পিয়ন না হতে পারায় এক ঘন্টা পর্যন্ত ফুপিয়ে কেঁদেছেন ফিল্ড মার্শালের ক্ষুদে খেলোয়াড় আজান। 

আজানের বাবা তারেক আদেলই এই খেলার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। জাহাঙ্গীর আদেলের সাত ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। তারেক আদেলরা তিন ভাই হকি খেলেছেন। প্রয়াত শোয়েব আদেল ১৯৮২ দিল্লি এশিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঘরোয়া লিগে দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোতেও খেলেছেন। ভাইয়ের স্মরণে নিজেদের বাড়িতেই ব্যতিক্রমী এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন তারেক। 

আনন্দ উৎসবের টুর্নামেন্ট হলেও মাঠে আনুষ্ঠাকিতা ও সিরিয়াসনেস ছিল লিগের মতোই। ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত, ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত আম্পায়ার। দুই অর্ধে ১৮ মিনিট করে খেলা। আয়তন ছোট হলেও ছোট বক্স রয়েছে দুই গোলপোস্টের সামনেই। পেনাল্টি কর্নার না থাকলেও পেনাল্টি স্ট্রোক রয়েছে। পেনাল্টি স্ট্রোক নেয়াটাও ব্যতিক্রম। নিজেদের বক্সের শেষ বিন্দু থেকে শট নিতে হয়। 

জিমি দেশসেরা ফরোয়ার্ড। ফোর এ সাইড ম্যাচে রক্ষণেই খেলেছেন বেশি। পেনাল্টি স্ট্রোক,গোলের সিদ্ধান্ত নিয়ে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আবার গোলের আনন্দে ভেসেছে শারফুদ্দিন হাউজের বাড়ির বারান্দায়-ছাদে থাকা নারী-পুরুষ মিলিয়ে শ’খানেক দর্শক। 
শোয়েব এ আদেল স্মৃতি হকি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপ ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে হকিরই। 

ফাইনালে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় দলের কোচ ও ঢাকা আবাহনীর কোচ মাহবুব হারুন, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত হকি খেলোয়াড় মামুনুর রশীদ। সেই মঞ্চে প্রধান অতিথি ছিলেন শোয়েব আদেলের বড় ভাই সাজেদ এএ আদেল। চলমান হকির অস্থিরতা ভুলে ‘শোয়েব আদেল’ স্মরণে আবাহনী, মোহামেডান, মেরিনার, উষা সহ আরো কয়েক ক্লাব কর্তা এক কাতারে এসেছিল ঘন্টা খানেকের জন্য। এই একতা যদি হকি ফেডারেশনে থাকত তাহলে দেশের হকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুনাম আরো বৃদ্ধি পেত।

এজেড/এটি