আগামীকাল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় হকি দলের রিপোর্টিং। এর আগে হকি অঙ্গনে জাতীয় দলের হেড কোচ, কোচিং স্টাফ, ক্যাম্প বিভিন্ন ইস্যুতে চলছে নানা কথা। আগামী মাসে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে ফেডারেশনের মধ্যে দুইটি পক্ষ এবং অনৈক্য হঠাৎ ফুটে উঠল।

আগামী মাসে ঢাকায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হকি। গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের কোচিং করানোর কথা ছিল মাহবুব হারুনের। ব্যক্তিগত কারণে তিনি কোচিং না করানোর বিষয়টি ফেডারেশনকে জানান। কিছুদিন আগে ফেডারেশন বিকেএসপির হকি উপদেষ্টা কোচ মালয়েশিয়ান গোপীনাথানকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেয়।
 
গোপীনাথানকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় হকি ফেডারেশনের একটি পক্ষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেকশন কমিটির অন্যতম সদস্য কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘হারুন ব্যক্তিগত কারণে সরে যাওয়ার পর আমরা মামুনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। মামুন দেশের অন্যতম সেরা কোচ, সে খেলোয়াড়দের ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। মামুন ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছে। লিগেও ভালো করেছে। গোবীনাথান কীভাবে কোচ হল বিষয়টি আমার জানা নেই।’
 
ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও সিলেকশন কমিটির প্রধান সাজেদ এএ আদেল গোপীনাথানের যোগ্যতা-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘গোপীনাথান কোচ হিসেবে ভালো এবং বাংলাদেশে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সে কোচ হতেই পারে। কিন্তু তাকে কোচ নিয়োগ দেওয়ার আগে একজন সহ-সভাপতি হিসেবে জাতীয় দলের কোচ কে হচ্ছেন এটা আমার জানার এবং মতামত দেওয়ার অধিকার অবশ্যই রয়েছে। গোপীকে নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই, আমার প্রশ্ন তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে।’
 
ফেডারেশনের এক পক্ষের দাবি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, এক সহ-সভাপতি ও আর দুই একজন বিকেএসপিতে গিয়ে গোবীনাথানকে জাতীয় দলের কোচ ও জাহিদ হোসেন রাজুকে সহকারী কোচ নিয়োগ দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউসুফের বক্তব্য, ‘মাহবুব হারুনের অপারগতা প্রকাশের পর গোপীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাকে নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি সবাই অবগত।’
 
ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত ছিল সহকারী কোচ থাকবেন জহিরুল ইসলাম মিতুল। গোপীনাথান কোচ হওয়ায় তার সহকারী হয়েছেন বিকেএসপির আরেক কোচ জাহিদ হোসেন রাজু। জাতীয় দলে কোচিং করাবেন, এজন্য মিতুল সিলেকশন কমিটি থেকে পদত্যাগও করেছিলেন। 

কোচিং স্টাফ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘এখানে আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় রয়েছে। এ নিয়ে কাজ হচ্ছে। তাছাড়া কোচিং স্টাফে একাধিক কোচ থাকতেই পারে।’ তবে সূত্রের খবর, মিতুল আগামীকালের ক্যাম্পে অনুপস্থিত থাকবেন। 

আগামীকাল থেকে বিকেএসপিতে শুরু হচ্ছে জাতীয় দলের ক্যাম্প। সিলেকশন কমিটির সুপারিশ ছিল মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার। তাদের যুক্তি ছিল ভাসানী স্টেডিয়ামের টার্ফের সঙ্গে বিকেএসপির টার্ফের পার্থক্য রয়েছে। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম এশিয়ান হকি ফেডারেশনের তত্ত্বাবধায়নে। 

এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সদস্য ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুর রশীদ শিকদারকে টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কোচ নিয়োগের মত এই চেয়ারম্যান প্রক্রিয়া নিয়েও এক পক্ষের প্রশ্ন, আনুষ্ঠানিক সভা ছাড়াই হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। 

এই প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের উত্তর, ‘কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি এশিয়ান হকির টুর্নামেন্ট। যাকে করা হয়েছে তিনি এএইচএফের সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ হকির সঙ্গেও দীর্ঘদিন রয়েছে।’
 
সিলেকশন কমিটি ২৮ জন খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করেছে। সিলেকশন কমিটির নাম প্রকাশের প্রক্রিয়া নিয়ে আবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্ন, ‘২৮ জনের নাম দিয়েছে আমি মিডিয়ায় দেখেছি, আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা দেয়নি।’ ২৮ জনের প্রাথমিক তালিকা থেকে চূড়ান্ত স্কোয়াড হবে ২০ জনের। সিলেকশন কমিটি তাদের পরামর্শ ছাড়া কোচ নিয়োগ হওয়ায় এখন চূড়ান্ত স্কোয়াড বাছাইয়ের দায়িত্ব নিজেদের পরিবর্তে দিতে চান বিদেশি কোচের ঘাড়েই।

হকি ফেডারেশনে অর্ন্তদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হকির আগে এটি আবার প্রকাশ পেল। এর প্রভাব জিমিদের পারফরম্যান্সের উপর না পড়লেই হয়। 

এজেড/এমএইচ