দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হতে চাই : ইমরান
বিশ্ব ইনডোর অ্যাথলেটিক্সে বাংলাদেশ আগে অংশগ্রহণ করেনি৷ বর্তমান দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান অংশগ্রহণ করে সেমিফাইনাল খেলেছেন। যা বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্স ও সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বেশ বড় অর্জন। ইমরানের এই অর্জনে দেশের ক্রীড়াঙ্গন দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানবের খেতাব পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে। গতকাল সার্বিয়ার বেলগ্রেড থেকে মুঠোফোনে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরকে জানিয়েছেন তার বর্তমান ও আগামীর নানা কথা।
অসাধারণ পারফরম্যান্স করে সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হলেন। কী হয়েছিল সেমিফাইনালে দৌড়ালেন না যে!
বিজ্ঞাপন
ইমরান: আমার পাশে ছিলেন কেনিয়ান অ্যাথলেট। তিনি বডি আগেই মুভ করেছিলেন। এতে আমার মনোযোগ বিঘ্ন ঘটেছে এবং আইনত সেটা ফলস স্টার্ট। এ রকম আগে পা নাড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত দশ বারের মধ্যে নয় বারই ডিসকোয়ালাইড হয়।
আপনি জাজদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপও করেছেন দেখলাম অনলাইন ভিডিওতে। তারা কি বললেন। আপনি ছাড়া বাকি সাত জন কিন্তু দৌড় শেষ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ইমরান: আমি জাজদের বলেছি, কেনিয়ান অ্যাথলেট আগে মুভ করেছে। এটা রিহিট হওয়া প্রয়োজন। জাজরা বলল তাদের কাছে মুভমেন্ট ধরা পড়েনি। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফিরে ইয়োহান ব্ল্যাকের কোচকে বলার পর তিনি বলছিলেন, এই হিট পুনরায় নেয়ার মতো ছিল। আসলে বিষয়টি খুব টাফ কল ছিল।
আপনার হিট থেকে যিনি ফাইনালে গিয়েছেন তার টাইমিং আপনার চেয়ে মাত্র ০.০১ কম।
ইমরান: এই বিষয়টি আমাকে বেশ পীড়া দিচ্ছে। ২০ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর এখনো মনে হচ্ছে আমি ফাইনাল খেলার মতো অবস্থানে ছিলাম।
ফাইনাল খেলতে না পারলেও আপনি বিশ্ব আসরে সেমিফাইনালে উঠেছেন। যা বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সের জন্য অনন্য অর্জন। আপনার অনুভূতি কেমন?
ইমরান: বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমার ভালো লেগেছে। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো করব। সত্যি বলতে, ফাইনাল পর্যন্ত আমার লক্ষ্য ছিল।
প্রথম রাউন্ডের হিটে আপনি দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানবকে পেছনে ফেলেছেন। মালদ্বীপের হাসান সাঈদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
ইমরান: বিস্তর আলাপ হয়নি। অবশ্য সেই সময়ও হয়নি। হিটের আগে সবাই যার যার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। হিটের পর আমি সেমিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় আরো বেশি মনোযোগী হই সেও নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
৬০ মিটার ইনডোরে যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ান দ্রুততম মানবকে পেছনে ফেলেছেন। ফলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে দ্রুততম মানব হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নিশ্চয়ই।
ইমরান: বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস থেকে স্বর্ণ পদক এনে দেয়াই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি।
বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমী ও ফেডারেশন আপনাকে নিয়ে আরো একটু বেশি স্বপ্ন দেখে। এশিয়ান পর্যায় থেকে আপনার পদক আনার সক্ষমতা রয়েছে । আপনি কি মনে করেন?
ইমরান: আমার প্রতি আস্থার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। এই বছর চীনে এশিয়ান গেমস আছে। আমার লক্ষ্য থাকবে ফাইনাল রাউন্ড খেলার। বর্তমান টাইমিং ও ফিটনেসে আশা করি পারব। এশিয়ান পদক জেতার ইচ্ছে থাকলেও বিষয়টি অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি বাস্তবতা জানি। এই বছর কমনওয়েলথ গেমসও রয়েছে। সেখানে সেমিফাইনালে গেলেও খুশি হব।
বাংলাদেশের হয়ে আপনি খেলা শুরু করলেন ২৮ বছরের পরে এসে। এখন মনে হয় না কয়েক বছর আগে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে ভালো হতো?
ইমরান: এই সময়ে এসে মনে হচ্ছে আরো পাচ বছর আগে বাংলাদেশের হয়ে খেললে আমার জন্য এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্য দারুণ হতো। অবশ্য সময় এবং পরিস্থিতির উপর কারো হাত নেই। ২০১৭ সালে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেই সময় কিছু লিগ্যাল ইস্যু ছিল। ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ দুতাবাস, অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন অনেক সাহায্য করেছে এসব ক্ষেত্রে। পরে আবার কোভিড ইস্যু। আমিও কিছুটা ইনজুরিতে ছিলাম। আসলে বিধাতা যা করবেন সেটাই মঙ্গল।
আপনি এখন ত্রিশের কাছাকাছি। কত দিন বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে পারেন বলে মনে করেন।
ইমরান: আমি অন্তত ৩৬ বছর পর্যন্ত খেলতে চাই। জাস্টিন গ্যাটলিন ৩৭ বছর বয়সেও তার সেরা টাইমিং করে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা এখনো খেলছে। ফর্ম ও ফিটনেস ঠিক থাকলে বয়স কোনো বিষয় নয়।
ফর্ম ও ফিটনেস ধরে রাখা অনেক কষ্টের বিষয়। আপনি কি রকম সময় দেন প্রতিদিন।
ইমরান: সপ্তাহে ছয় দিন অনুশীলন করি। প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টার বেশি সময় অনুশীলনে কাটে। অনুশীলনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবনযাপনে রুটিন মেনে চলি৷
আপনি ইংল্যান্ড থাকেন এবং পারিবারিক সক্ষমতা আপনার পারফরম্যান্স ভালো হওয়ার পেছনে অন্যতম একটি বিষয়। বাংলাদেশের অন্য অ্যাথলেটরা কি আপনার মানে যেতে পারবে?
ইমরান: আমি ইতিবাচক মানুষ। আমি সেমিফাইনালে গিয়েছি, এজন্য বলব কেউ পারবে না। আমি এ রকম মানসিকতার লোক নই৷ বাংলাদেশের অ্যাথলেটরাও অত্যন্ত মেধাবী। তারাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে সক্ষম। এজন্য প্রয়োজন ফেডারেশন ও খেলোয়াড়ের পরিকল্পনা ও ইচ্ছার সম্মিলন।
ফেডারেশনের সীমাবদ্ধতা অনেক। আপনার পাশে ফেডারেশনকে কতটুকু পান?
ইমরান: আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি এজন্য ফেডারেশনের অবদান অনেক বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক মন্টু স্যারের (অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু)। এই বিশ্ব ইনডোরে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ফেডারেশন ওয়াল্ড অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সঙ্গে সকল কিছু সমন্বয় করেছে৷ ফেডারেশনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ তাদের হয়ে আমাকে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ায়।
আপনি বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হলেন। বিশ্ব ইনডোরে সেমিফাইনালে খেললেন। আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কি?
ইমরান: আমার পরিবার খুবই খুশি। তারা চেয়েছিল আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলি। আমার মা সেমিফাইনালের ফলস স্টার্ট নিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছে এভাবে, ‘রোনালদোও ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে। চিন্তা করো না । সামনে ভালো কিছু হবে।’
আপনার বাবা, মা ইংল্যান্ডে। আপনার নিজস্ব পরিবার ইংল্যান্ড কেন্দ্রীকই হওয়ার কথা অদুর ভবিষৎতে। আপনার ভাষ্যমতে ৩৬ বছর বয়সে অবসর নেবেন। এরপর বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকস কি অন্য কোনো ভুমিকায় আপনাকে পাওয়ার আশা করতে পারে?
ইমরান: আমি ইংল্যান্ডেই বসবাস করব আবার এটাও ঠিক বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসের সঙ্গেও থাকব। বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসের যে কোনো প্রয়োজনে আমি ছুটে যাব৷ আমার কোনো পরামর্শ, মতামত বা উপস্থিতিও যদি বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে প্রয়োজন পড়ে আমি অবশ্যই যাব।
এজেড/এটি