একে একে ২০ বার গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের কনক কর্মকার। বিশ্বমণ্ডলে তুলে ধরেছেন প্রিয় মাতৃভূমির নাম। ব্যালেন্সিং, ফুটবল ফ্রি স্টাইল এবং বঙ্গবন্ধু ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এই তিন ক্যাটাগরিতে রেকর্ডগুলো করেছেন কনক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ ২০টি গিনেস রেকর্ড থাকলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন বারবার।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গিনেস বুকে নাম লেখানোর শুরু তার। আর সর্বশেষ নাম লেখালেন এর তিন বছর বাদে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।

কনক শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃত্রিম ফুল দিয়ে সবচেয়ে বড় বাক্য লিখে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কনক। তার এই কাজও জায়গা করে নিয়েছে গিনেস বুকে। সেই সাথে বাংলা ভাষাকেও বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন কনক কর্মকার।

পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে হলেও নোয়াখালীতেই স্থায়ীভাবে থাকছে কনক ও তার পরিবার। বাবা বাবুল কর্মকার প্রবাসী, মা শিল্পী কর্মকার গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে কনক বড়। কনক কর্মকার বর্তমানে লেখাপড়া করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র তিনি।

কনক তার রেকর্ডের অধিকাংশই করেছেন ব্যালেন্সিং ক্যাটাগরিতে। এই ক্যাটাগরিতে ১০টি রেকর্ডের পাশাপাশি ফুটবল ফ্রি স্টাইলে ৯টি এবং বঙ্গবন্ধু ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ক্যাটাগরিতে ১টি রেকর্ড করেছেন তিনি।

কনকের রেকর্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে কপালে ১১৫০ টি কাগজের কাপ ৬৬ সেকেন্ড রাখা, কপালের উপর ২৫ মিনিট গিটার ব্যালেন্স করা, ঘাড় দিয়ে এক মিনিটে ৩৬ বার বাস্কেটবল ক্যাচ ধরা, থুতনিতে ১৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড গিটার ব্যালেন্স করা, হাতের তালুর বিপরীত পাশে ১৫টি ডিম ব্যালেন্স করে রাখা, এক মিনিটে সর্বোচ্চ (১৬৩) বার হাঁটুর উপর ফুটবল ড্রপ দেওয়া, হাঁটুর উপর ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ড ফুটবল ব্যালেন্স করা, থুতনির উপর চেয়ার ৩৫ মিনিট ১০ সেকেন্ড ব্যালেন্স করা, এক মিনিটে ১৬২ বার হাঁটুতে ফুটবল বাউন্স করানো।

এছাড়া আরও রয়েছে চিবুকের উপর দীর্ঘ ৩৫ মিনিট চেয়ার ব্যালেন্স করা, মাথার উপর ১৫টি টয়লেট পেপারের রোল ব্যালেন্স করা, ৩০ সেকেন্ডে ৫০টি কয়েনের স্তূপীকৃত টাওয়ার (দুই জনের দল) তৈরি, এক মিনিটে ৭৫টি কয়েনের স্তূপীকৃত টাওয়ার (দুই জনের দল) তৈরি, এক মিনিটে ৭৬ বার ফুটবল আর্ম রোল করা, ৬৩ বার ফুটবল (সকার বল) হেড স্টল থেকে নোজ স্টলে স্থানান্তর, এক মিনিটে সবচেয়ে বেশিবার ফুটবলে (সকার) পায়ের আঙুলের টোকা দেওয়া, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দিয়ে সবচেয়ে বড় আকারের বাক্য লেখা, একটানা সবচেয়ে বেশিবার স্পিনিং বাস্কেটবল ক্যাচ ধরা, ৩০ সেকেন্ডে সর্বাধিক আর্ম রোল (ফুটবল) করা এবং ৩০ সেকেন্ডে সবচেয়ে বেশি ফুটবল 'হটস্টেপার' বল নিয়ন্ত্রণের কৌশল দেখানো।

২০ তম রেকর্ডের অনুভূতি জানিয়ে কনক কর্মকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে প্রতিটি রেকর্ড খুব আনন্দ দেয়। যা কথায় প্রকাশ করে শেষ করা যাবেনা। এক কথায় খুবই ভাল লাগছে। দেশের নামটা বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে সবসময় ভাল লাগে। 

কনক কর্মকার আরও বলেন, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আর মানুষের সহযোগিতায় ১ম বাংলাদেশি হিসেবে ২০টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সম্মাননা। এই ২০ টি রেকর্ডের পিছনে মানুষের ভালোবাসার সাথে আমার ৩ বছরের সাধনা ছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে যারা সব সময় উৎসাহিত করে আসছে।

বাংলাদেশের হয়ে ১০০ রেকর্ডের মাইলফলক স্পর্শ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে কনক বলেন, স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো বরং স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না। আমার ১০০ রেকর্ড করার স্বপ্ন আছে। আমি তা পূরণ করতে চাই। 

কনক কর্মকার আরও বলেন, গিনেস জগতে আইডল হিসেবে ডেভিড রাশকে মানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নাগরিক দুই শত বারের অধিক গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছেন। আমিও ১০০ রেকর্ড করতে চাই। এই জন্য কঠিন অধ্যবসায় করতে হচ্ছে। তবে কোনো স্বীকৃত না পাওয়ায় মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে যাই। বাংলাদেশ সরকার যদি আমাকে সহযোগিতা করেন তাহলে খুব দ্রুত সময়ে শতাধিক রেকর্ড করতে পারবো।

চৌমুহনী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র তাকিব উদ্দিন চৌধুরী রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, কনক কর্মকার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কৃতি সন্তান। সে টানা ২০ টা রেকর্ড করেছে। যেটা বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী কোনো স্বীকৃতি পাচ্ছেনা। নিজের চেষ্টায় সে রেকর্ড গুলো করছে। যখন আমরা সামাজিকভাবে হোক, সরকারি ভাবে হোক তাকে এ কাজে উৎসাহ দিবো তখন এ রেকর্ড আরও বৃদ্ধি পাবে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যারা ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করি তাদের উচিৎ কনকের পাশে দাঁড়ানো। তার প্রতিভাকে বিকাশ ঘটানোর জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যা করা দরকার আমরা করবো। আমরা সকল সময়ে তার পাশে থাকবো।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কনক কর্মকার ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন অনুশীলন করে থাকে। সে ২০ টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারী হয়েছে। তার লক্ষ্য ১০০টি রেকর্ড করা। এটি একটি ভাল উদ্যোগ আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। ১০০ টি রেকর্ড করার জন্য তার পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই তা করবো। এছাড়াও তাকে আমরা উৎসাহ ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।