দুই মেয়াদে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বরত। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ইতোমধ্যে দুই বছর কাটিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে গত দু’বছরের খতিয়ান, আগামী তিন বছরের প্রত্যাশা সহ যুব ও ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।

ঢাকা পোস্ট: ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দুই বছর অতিক্রম করলেন। আপনার দৃষ্টিতে দু’বছরের মূল্যায়ন?

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী: পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে আমরা প্রায় অর্ধেক পর্যায়ে আছি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় গত দুই বছর অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রথমবারের মতো আমরা যুব বিশ্বকাপ জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। এই দুই বছরের মধ্যেই সাউথ এশিয়ান গেমসে রেকর্ড সংখ্যক স্বর্ণ সহ অন্যান্য পদক পেয়েছি। খেলার বিভিন্ন সেক্টরে সাফল্য পেয়েছি ও উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে আরচ্যারিতে সরাসরি অলিম্পিকে খেলা নিশ্চিত করা একটা বড় অর্জন।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন দুই মেয়াদে। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে আগের দায়িত্ব কতটুকু সহায়ক হয়েছে?

সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান থাকায় ক্রীড়া ও যুব খাত নিয়ে আমার সম্যক ধারণা ছিল। অনেক ক্রীড়াবিদ,সংগঠক, কোচের সঙ্গে আগে থেকেই ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। ফলে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নে অনেকটা সহজ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ আমাকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য। প্রথম দু’বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ছিল।

বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনেক কর্মসূচি ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের। করোনার জন্য সূচিতে ব্যাঘাত ঘটলেও আসন্ন পরিকল্পনা কি?

জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের প্রোগ্রাম সবচেয়ে বেশি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা অনুমোদন দিয়েছিলেন। করোনার জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারিনি। মুজিব বর্ষ চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা শতাধিকের বেশি অনুষ্ঠান করব। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের আয়োজনগুলো ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে বিশ্বাস করি। ক্রীড়াঙ্গনে নতুন জাগরণ তৈরি করতে চাই।

অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তুলনায় করোনা মোকাবেলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনেকটা সামনে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে...

প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করোনা মোকাবেলার চেষ্টা করেছে। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে কাজ করেছি। প্রায় ৫ হাজার অধিক ক্রীড়াবিদ/ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে চার কোটি টাকা বন্টন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্রীড়াপ্রেমী। অসুস্থ, অস্বচ্ছল ক্রীড়াবিদদের জন্য তিনি দশ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা এই অর্থের লভ্যাংশ থেকে দুস্থ ক্রীড়াবিদদের সহায়তা করব। সমাজের অনেক সেক্টরে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা ব্যবস্থা থাকলেও ক্রীড়াঙ্গনে ছিল না। আমরা ক্রীড়াঙ্গনে খুব শীঘ্রই ভাতা বাস্তবায়ন করব।

ভালো ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে হলে প্রয়োজন ভালো মাঠ ও প্রশিক্ষক। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে কতটুকু মনোযোগী ?

আমরা প্রায় সকল জেলাতেই ক্রীড়া অফিসার নিয়োগ দিয়েছি। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ভালো মানের কোচ আনা হচ্ছে। বিশেষ করে সাভার বিকেএসপিতে উন্নত মানের বিদেশি কোচ আনছি। আঞ্চলিক বিকেএসপির মান উন্নয়ন হচ্ছে। ময়মনসিংহ, রাজশাহীতে নতুন বিকেএসপি খোলা হবে। জেলা পর্যায়ে জিমনিশিয়াম, টেনিস কমপ্লেক্সগুলো আমরা আধুনিকায়ন করছি।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রের অন্যতম চাবিকাঠি জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা। সেই জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন ও এজিএম। অনেকে ফেডারেশন, জেলা ক্রীড়া সংস্থায় অ্যাডহক কমিটি ও এজিএম অনিয়মিত...

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা। তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমিও চাই প্রতিটি ফেডারেশন ও ক্রীড়া সংস্থাগুলো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধীনেই নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হোক। অনেক ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির পরিবর্তে নির্বাচন দেয়া হয়েছে। আরো কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নির্বাচনের পাশাপাশি এজিএমও প্রয়োজন। আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে বিশেষত ফেডারেশনগুলোতে এজিএম আয়োজনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাব।
 

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার অনেকটা অনিয়মিত হয়ে আছে। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নীতিমালা ও নিয়মিত করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ?

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ পুরস্কার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার হালনাগাদের জন্য আমরা কার্যকরি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। করোনার জন্য সেই উদ্যোগে ভাটা পড়েছিল। কয়েকটি বছরের পুরস্কার ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ২০১৭ ও ১৮ সালের পুরস্কারের জন্য যাচাই বাছাই কমিটি করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলে আশা করি ক্রীড়া পুরস্কার হস্তান্তর করার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।

আগামী তিন বছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা?

আমরা ইতোমধ্যে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা একটি অলিম্পিক ভিলেজ করব, ক্রীড়াবিদরা অলিম্পিক থেকে পদক আনবে আমরা সেই স্বপ্ন দেখি। দেশের স্টেডিয়ামগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে রূপ দেয়া হবে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে শীঘ্রই।

ক্রীড়ার পাশাপাশি যুব ক্ষেত্রও আমরা সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আ প্রত্যয়ী হওয়ার কথা বলেছেন। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই যেন চাকরি দিতে পারে যুবকরা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। যুবরা নিজেরা আত্মপ্রত্যয়ী হবে। ইতোমধ্যে ৬২ লক্ষ যুবককে আমরা বিভিন্ন ট্রেনিং দিয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ২২ লাখ যুবক আত্ম-কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছে। যুবকদের সহজ শর্তে ঋণের জন্য আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাথে চুক্তি করেছি। বিনা শর্তে পাচ লাখ টাকা পর্যন্ত যুবকরা ঋণ নিতে পারবে। যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড চালু করেছি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে আদর্শ মন্ত্রণালয় হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আদর্শ মন্ত্রণালয় হিসেবে গড়ে ওঠুক সেই কামনা রইল। আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকে ও ঢাকা পোস্টকে ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্ট দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে ক্রীড়া ও যুব খাতকে এগিয়ে নেবে সেই প্রত্যাশা রইল।

এজেড/এটি