আশি-নব্বইয়ের দশকে ফুটবলের পর ক্রিকেট, হকির মতোই আকর্ষণীয় ছিল দেশের টেবিল টেনিস। সেই আশি-নব্বই দশকে বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের অন্যতম তারকা আবু মমতাজ সাদউদ্দিন আহমেদ কিসলু। টিটি ও খেলার অঙ্গনে মানুষরা যাকে কিসলু নামেই চেনেন। দুই বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া কিসলু গত মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন৷ টিটির এক সময়ের নাম্বার ওয়ান কিসলু পেশাগত অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন মায়ের নাম মমতাজে। 

কিসলু যখন টিটির বোর্ডে দুর্দান্ত ফর্মে ঠিক তখনই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ১৫ তম ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন৷ চাকুরিতে প্রবেশের কয়েক মাস পরেই টিটির জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল। সেই চ্যাম্পিয়নশিপের এককের ফাইনালের হারটি ২৭ বছর পরও পীড়া দেয় তাকে, ‘১৯৯৫ সাল ছিল আমার হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। রানার আপ হয়ে মিস করি। এতে খুব খারাপ লেগেছিল চাকুরিতে মাত্র যোগদান করায় সেইভাবে অনুশীলন ও মনোযোগ দিতে পারিনি। এখন মনে হয় চ্যাম্পিয়নশিপ মিস ও টিটি ক্যারিয়ার আরও বড় না হওয়ার পেছনে সেটাই কারণ।’ 

কিছুটা অতৃপ্তি থাকলেও এখন নিজের পেশাগত জীবন নিয়ে বেশ তৃপ্তি তাঁর, ‘প্রতিটি পেশাই সম্মানের। তবে প্রশাসনের এই পেশায় সরাসরি জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ততা ও সেবা করার সুযোগ ও সেবা প্রদান করতে পেরে আমি সন্তুষ্ট।’ প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের পূর্বে সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। 

১৯৯৫ সাল সাবেক এই টিটি তারকার জন্য বহুল ঘটনার। হ্যাটট্রিক শিরোপা মিস, বিসিএসে যোগদান, বিয়ের পাশাপাশি বাবাকে হারানোর বছরও। কিসলুর বাবা জালাল আহমদ ছিলেন বেশ জনপ্রিয় এক আমলা। যার ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিন সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিরল কৃতিত্ব রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুব স্নেহধন্য ছিলেন। 

জালালের স্বপ্ন ছিল তার সন্তানরাও আমলা হবেন। দশ সন্তানের মধ্যে সবাই শিক্ষকতা ও গবেষণায় গেলেও কিসলু এবং তার ছোট বোন ফারহানা মমতাজ বাবার পেশায় আসেন। দুই ভাই বোন একই সঙ্গে ১৫ তম ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারেই যোগদান করেন (অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতিও একই সঙ্গে)। মৃত্যুর আগে বাবার বলে যাওয়া, ‘যাক আমার দুই বাচ্চা সিভিল সার্ভিসে এলো’ এই কথা বড় প্রশান্তি দেয় কিসলুকে। বাবার পাশাপাশি কিসলুর মায়েরও ইচ্ছে ছিল সন্তানদের আমলা বানানো। কিসলুর নানাও ছিলেন আমলা। তাই তার মায়ের একটি কথা ছিল, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে; ম্যাজিস্ট্রেটের বৌ আমি ম্যাজিস্ট্রেটের মা হবো না কেন!’ 

কিসলুর বাবা দশ সন্তানের নামের সঙ্গে স্ত্রীর মমতাজ নাম যুক্ত করেছেন। মমতাজ নামেই কিসলু প্রশাসন অঙ্গনে পরিচিত। 

বাবা জালাল আহমদের মতো ক্রীড়াঙ্গনে কিসলুর গুরুর নামও ছিল জালাল আহমেদ। আশির দশকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও টেবিল টেনিস তারকাদের আঁতুড়ঘর ছিল আজিমপুর। কিসলুর খেলোয়াড় হয়ে উঠা সেই আজিমপুর কলোনিতেই৷ কলোনিতে প্রথমে ক্রিকেট খেলা শুরু করলেও প্রয়াত কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীর পরামর্শে টেবিল টেনিসে আসা তাঁর, ‘জালাল ভাই আমার পথটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ক্রিকেট খেলতাম আগে, জালাল ভাই বললেন, তুমি ক্রিকেট নয়, টেবিল টেনিসে ভালো করবে। তাঁর পরামর্শেই টেবিল টেনিসে আসা।’ জালাল আহমেদ চৌধুরী সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ হলেও ছিলেন টিটি সংগঠকও। 

আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে টেবিল টেনিস বোর্ড ছিল। সেই বোর্ডে হাতেখড়ি নিয়ে রচি, কিসলুরা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আজিমপুর থেকে উঠে আসাদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নাজমুন নুর রবিন। সাবেক এই ক্রিকেটার আমেরিকা থেকে আজিমপুরের টিটির প্রচলন সম্পর্কে বলেন, ‘খুব সম্ভবত স্বাধীনতার আগেই অথবা পরপরই কমিউনিটি সেন্টারে বোর্ড আসে। সেই বোর্ডে সিনিয়ররা বেশি খেলার সুযোগ পেত৷ জুনিয়ররা আলাদা বোর্ডে সেরা প্রমাণ করে সিনিয়রদের বোর্ডে আসতে হতো। কিসলু ছোটবেলা থেকেই টিটিতে দারুণ দক্ষ ছিল।’ 

খেলোয়াড় অসংখ্য বোর্ড মাত্র দুটি। বিশেষ করে জুনিয়রদের বোর্ডে ভিড় বেশি৷ টিটির শুরুর দিনগুলোর কথা এখনো ভোলেননি কিসলু, ‘কমিউনিটি সেন্টারের বোর্ডই সম্বল। জুনিয়রদের বোর্ডে এক গেম হারলেই বাদ। হেরে গেলে আবার খেলার জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা। আবার টানা দুই গেম জিতলেও বেশি খেলার সুযোগ নেই,  অন্যদের খেলার জন্য ছেড়ে দিতে হতো৷’ 

আজিমপুর কলোনি থেকে এভাবেই বেড়ে উঠে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কচি-কিসলুরা। খেলোয়াড় হয়ে উঠার পেছনে আজিমপুরের সেই কলোনিকেই অবদান দিলেন কিসলু, ‘আজিমপুরে না থাকলে আমার ক্রীড়াঙ্গনেই আসা হতে না হয়তো। টিটির কিসলু হতে পেরেছি, আজিমপুরে ছিলাম বলেই।’ 

আজিমপুর থেকে অসংখ্য ক্রিকেটার, টিটি খেলোয়াড় উঠে আসার কারণ সম্পর্কে সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার গেলাম নওশের প্রিন্স আমেরিকা থেকে বলেন, ‘আজিমপুর কলোনিতে যারা ছিলেন সবার বাবাই সরকারি অফিসার। অভিভাবকদের মানসিকতা, আর্থিক সামর্থ্য একই পর্যায়ের পাশাপাশি সমবয়সী বাচ্চারা একটি সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। মাঠ থাকায় ক্রিকেট ও কমিউনিটি সেন্টারে বোর্ড থাকায় টিটি খেলোয়াড় বেশি উঠে এসেছে। এখন মাঠ নেই খেলোয়াড়ও নেই।’

বাংলাদেশ অভিষেক টেস্টের কোচ সারওয়ার ইমরানও আজিমপুরের। তার মতে, ‘ফুটবল ও অন্যান্য খেলোয়াড় এবং সংস্কৃতিতেও আজিমপুর তখন এগিয়ে ছিল৷ ক্রিকেট ও টিটিতে জাতীয় খেলোয়াড় বেশি থাকায় এই দুই খেলা বেশি ফোকাস পেয়েছে৷’

১৯৮১-৯৫ এই ১৫ বছর বেশ দাপটের সঙ্গেই খেলেছেন কিসলু। জাতীয় টিটি দলের হয়ে বিশ্ব, এশিয়ান ও সাফ গেমস খেলেছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এককে দুই বার চ্যাম্পিয়ন হলেও দ্বৈতে, মিশ্র বিভাগে অনেক শিরোপা রয়েছে তার। গিনেস বুকে নাম লেখানো জোবেরা রহমান লিনুর সঙ্গে মিশ্র দ্বৈতে শিরোপা রয়েছে তার৷ পুরুষ দ্বৈতে কিসলুর পার্টনার ছিলেন আখলাক। বোর্ডের সঙ্গী ছিলেন আখলাক, আর আখলাকের বোন পরবর্তীতে কিসলুর জীবনসঙ্গী হয়েছেন।

টিটি বোর্ড ও পড়ার টেবিল একসঙ্গে সামলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। এরপর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিসিএসেও নিজের নাম লিখিয়েছেন। টিটির বোর্ডের শ্রেষ্ঠত্ব ও একাডেমিক সাফল্য সমান্তরালে রাখার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেন, ‘খেলাধুলা ও পড়াশোনা এই দু’টি কাজই আমি করেছি। খেলার সময় খেলা এবং পড়ার সময় পড়া। এর বাইরে কোনও আড্ডা ছিল না আমার। এজন্য হয়তো দুই ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি।’ বিসিএস রিটেন দেয়া অবস্থায় প্রস্তাব ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক গোলাম মোস্তফার পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ না দিয়ে বিসিএস ভাইভা দেন এবং উত্তীর্ণ হন। ১৫ তম বিসিএসে যোগদান করায় আর ১৬ তম বিসিএসের ভাইভা দেননি যাতে তার জন্য আরেকজন চাকরি বঞ্চিত না হন৷ 

আজিমপুরে বেড়ে ওঠা কিসলু ১৯৯৫ সালে প্রশাসনে যোগ দেয়ার পর ঢাকার বাইরেই মাঠ পর্যায়ে বেশি সময় কেটেছে। ফলে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টিটিতে আর সেভাবে খেলা হয়নি। 

জাতীয় পর্যায়ে খেলা না হলেও টিটির সাথে দূরত্ব কখনো কমেনি সাবেক এই চ্যাম্পিয়নের, ‘টেবিল টেনিস আমার জীবনের অংশ ও রক্তের মধ্যে। অফিস শেষ করে খেলার পোশাক পড়ে বেরিয়ে গেছি অনেক সময়। আমি সব সময় টেবিল টেনিসের সঙ্গেই রয়েছি।’ 

অতিরিক্ত সচিব হয়েও নিজেকে খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ তাঁর, ‘আমলা পরিচয়ের চেয়ে সাবেক খেলোয়াড় পরিচয় দিতে আমি বেশি তৃপ্তি বোধ করি। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, আনুষ্ঠানিক অফিসিয়াল বক্তব্যেও আমি বলে থাকি টেবিল টেনিস খেলোয়াড় পরিচয় দিতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য পাই।’  

কিসলুর বর্তমান কর্মস্থল বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শিক্ষা ও পররাষ্ট্র ক্যাডার ছাড়া অন্য সব ক্যাডারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ হয় এখানে। সকল প্রশিক্ষণের কোর্সের তত্ত্বাবধানে থাকেন সাবেক এই টিটি খেলোয়াড়। 

কোর্স অনুষ্ঠানগুলোতে তিনি টিটি ও খেলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন, ‘একজন অ্যাথলেট অফিসার ও নন অ্যাথলেট অফিসারের মধ্যে পার্থক্যগুলো কোর্স পরিচালনার সময় বলে থাকি। একজন অ্যাথলেট অফিসারের ফিটনেস বেশি থাকে ফলে সে অতিরিক্ত কাজের চাপ বহন করতে পারে পাশাপাশি কঠিন পরিস্থিতির সময় ভেঙে পড়বে না।’

ক্রিকেটার হয়েও টিটি খেলে অনেক উপকৃত হয়েছেন বাংলাদেশে প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, ‘স্কুল ও ঢাকা কলেজে অনেক টিটি খেলেছি। টিটি খেলার ফলে ফুটওয়ার্ক, বলের প্রতি মনোযোগ ও ফিটনেস সব কিছুতেই আমার ইতিবাচক প্রভাব হয়েছে।’ পেশাগত জীবনে যখন যেখানে কাজ করেছেন সেখানেই টিটির প্রসারে ভূমিকা রাখছেন। 

লোক প্রশাসন কেন্দ্রে যোগদানের পর টেবিল টেনিস বোর্ডের সংখ্যা বাড়িয়েছেন। অফিস শেষে ও কাজের ফাঁকে নিজে এখনও টিটি ব্যাট হাতে নেমে পড়েন। সহকর্মী ও তরুণ অফিসারদেরও উদ্বুদ্ধ করেন। ঢাকার বেইলি রোডস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের ক্লাব অফিসার্স ক্লাবে টেবিল টেনিস বোর্ড স্থাপন ও খেলার প্রচলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তার।

২৭ বছর সরকারের প্রশাসনে বিভিন্ন দপ্তর ও অফিসে কাজ করলেও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কখনো পদায়ন হয়নি এই সাবেক চ্যাম্পিয়নের। ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ এই সংস্থাগুলোতে কর্মকর্তা হিসেবে তিনি থাকলে শুধু টিটি নয় সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনও অগ্রগতি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এ নিয়ে কিসলুর মন্তব্য, ‘সরকারের প্রতি আমি সময় শ্রদ্ধাশীল। সরকার যখন যেখানে আমাকে দিয়েছে সেখানেই কাজ করেছি। কোনও কিছু চাওয়া আমার স্বভাবে নেই। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কাজ করলে ভিন্ন রকম ভালোবাসা অবশ্যই থাকত এবং ভিন্ন কিছু করার সুযোগও হতো।’ 

খেলোয়াড়, সংগঠক, কোচরাই খেলাধুলার প্রাণ। এরা অনেক সময় নানা প্রশাসনিক কাজে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, মন্ত্রণালয়ের ছোটখাটো কাজের জন্য ভোগান্তির শিকার হন। সাবেক ক্রীড়াবিদ ও বর্তমানে আমলা কিসলুর দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সব অফিসারদের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন, ‘জনগণের ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে আমার বেতন হয়৷ আমাকে নিযুক্ত করা হয়েছে জনগণের সেবক হিসেবে। জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা ও সম্মান দেয়াই আমার দায়িত্ব। মানুষ যত বড় হয় তত বিনয়ী হয়, তেমনি অফিসার যত বড় পদে হয় তারও সেবা প্রদানের মাত্রা ও মান বড় হতে হয়। এটা আমার বাবার শিক্ষা।’ কিসলু অতিরিক্ত সচিব, তার স্ত্রী চিকিৎসক। উচ্চ শিক্ষিত ও পেশাজীবী এই দম্পতি খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন। ঢাকায় নিজস্ব কোনো ফ্ল্যাটও নেই; ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন৷ 

ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ সম্মাননা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। অনেক যোগ্য ব্যক্তিরা নানা কারণে পুরস্কার পাননা৷ কিসলু সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, তার হাত ধরে অসংখ্য টিটি খেলোয়াড় উঠে এসেছে এবং স্কুল পর্যায়ে থাকতেই তিনি টিটি সংগঠক। তার মতো এমন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই ক্রীড়া পুরস্কার পাননি। এর পেছনে ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট অনেকেই আমলা নির্ভরতাকে দায়ী করেন কারণ তারা ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় অনেক সময় যোগ্য ব্যক্তিরা পিছিয়ে পড়েন। 

এ ব্যাপারে কিসলুর পর্যবেক্ষণ, ‘ক্রীড়া পুরস্কারে ফেডারেশন থেকে মনোনয়ন, আবেদন নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়া ও কমিটিতে আমলারা থাকলেও কমিটিতে ক্রীড়াঙ্গনের লোকজনও থাকেন। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার না পাওয়ার চাইতে ক্রীড়া সাংবাদিকদের দুই সংস্থা থেকে কোনও পদক না পাওয়াটা আমার বেশি আক্ষেপ৷’

অনেক ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে এখন দেশের আমলারা আসীন হচ্ছেন৷ অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক টিটি চ্যাম্পিয়ন হয়েও তিনি কোনও ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত নন। বিশেষ করে টিটির সঙ্গে যুক্ত না থাকতে পারা তাকে খুবই পীড়া দেয়, ‘ক্রীড়ামনস্ক আমলাদের ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বর্তমান ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ স্যার অত্যন্ত ক্রীড়ামোদী। স্যারের নেতৃত্বে ক্রীড়াঙ্গন গতিশীলতা পাবে নিশ্চয়ই। আমাকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ফেডারেশন কোনও পক্ষ থেকে সম্পৃক্ত করে না ফলে আনুষ্ঠানিক ক্রীড়া কাঠামো থেকে দূরেই রয়েছি।’

১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ক্রীড়াঙ্গনেও গণতন্ত্র আনার জন্য খেলোয়াড়েরাও সক্রিয় ছিলেন। খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে কিসলু সবাইকে শপথ করিয়েছিলেন।

ফেডারেশনের কোনও পদে না থাকলেও টিটির টানে প্রায়ই ছুটে যান পল্টনস্থ টিটি ভেন্যুতে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট দেখতে৷ এক সময়ের আকর্ষণীয় খেলাটি এখন অনেক বিবর্ণ। এতে বেশ কষ্ট সাবেক চ্যাম্পিয়নের, ‘আমাদের সময় অনেক খেলোয়াড় ছিল। এখন খেলোয়াড় কমে গেছে। সংখ্যা না বাড়লে মান উন্নয়ন সম্ভব নয় এবং সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।’ 

পেশাগত ক্যারিয়ারের প্রায় সায়াহ্নে উপস্থিত হয়েছেন কিসলু। বছর চার-পাঁচেক পরেই অবসর। পেশাগত জীবন শেষেও টিটির সঙ্গেই থাকতে চান সাবেক এই চ্যাম্পিয়ন, ‘স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে আমার পরিবার। অবসর জীবনে পরিবারকে সময় দেব। কিছু লেখালেখি করব এবং টিটি খেলব।’ 

অবসরকালীন সময়ে খেলার জায়গাও ঠিক করা আছে তাঁর, ‘মোহাম্মদের (সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ) বাড়িতে টিটি খেলি সময় পেলেই। অন্য কোথাও না খেলতে পারলেও অবসরের পর এখানে প্রতিদিনই খেলতে পারব। যতদিন বাঁচব, টিটির সঙ্গেই বাঁচব৷’ 

এজেড/এটি/এনইউ