ফুটবলাঙ্গনে অত্যন্ত পরিচিত মুখ আজাদ রহমান। দুই দশকের বেশি সময় দেশের রেফারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আজাদ রহমানের পরিচিতি এখন রেফারি হলেও তিনি মূলত হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল খেলোয়াড়। 

১৯৮৯ সাল থেকে হ্যান্ডবল খেলা শুরু করেছিলেন। এর কিছু সময় পর বাস্কেটবল। দুই খেলাই দুই যুগের বেশি সময় খেলেছেন যুগপৎভাবে। হ্যান্ডবলই আজাদ রহমানকে ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করেছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন হ্যান্ডবলের খেলার সূত্রেই । প্রথম হ্যান্ডবল খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু পেয়েছেন। পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা অফিসে চাকরি করছেন। এই চাকরি পাওয়ার পেছনে হ্যান্ডবলের পাশাপাশি বাস্কেটবলেরও অবদান রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদানের আগে বিকেএসপিতে বাস্কেটবলে কাজ করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানে ভুমিকা রেখেছে যথেষ্ট। আজাদ রহমানের আজকের অবস্থানের পেছনে হ্যান্ডবলের অবদানকে বেশি দেখছেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনে আমার শুরু হ্যান্ডবল দিয়ে। হ্যান্ডবলে না আসলে আমার হয়তো ক্রীড়াঙ্গনেই আসা হতো না। আমার অতীত ও সব কিছুর মূলে হ্যান্ডবল। পেশাগত ক্ষেত্রে বাস্কেটবলও অনেক ভুমিকা রেখেছে। দেশের বাইরে ট্রেনিং কোর্স করেছি বাস্কেটবলে।’

দুই যুগের বেশি হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল বল খেললেও আজাদ রহমানের পরিচিতি বিস্তৃতি হয়েছে ফুটবলের মাধ্যমে। রেফারিংয়ের প্রতিও তার সমান ভালোবাসা, ‘হ্যান্ডবল আমাকে ক্রীড়াঙ্গনে রেখেছে আর ফুটবল দিয়েছে পরিচিতি এবং সম্মান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফুটবলের মাধ্যমে আমি বড় সম্মেলনে গিয়েছি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাঁশি বাজিয়েছি।’

সাবেক হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় আজাদের ফুটবলে রেফারি হওয়াটা আকস্মিকভাবেই, ‘২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক খেলায় বাঁশি বাজাচ্ছিলাম। সেই সময় খালেক স্যার বললেন ফুটবল রেফারিংও আমি ভালো করতে পারি।’ এরপর থেকেই তার রেফারিংয়ে যাত্রা শুরু। প্রথমে জুনিয়র পর্যায়ে ম্যাচ করেছেন৷ নানা ধাপ পেরিয়ে ২০০৯ সালে ফিফা রেফারি হন। ২০১৭ সালে রেফারি হিসেবে অবসর নেন। 

রেফারি হিসেবে অবসর বছর চারেক আগে হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। ৪০ বছরের বেশি বয়সেও দুই খেলা সমানভাবে খেলেছেন৷ পাশাপাশি রেফারিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরিও করেছেন। এত কিছু সমন্বয় করেছেন আজাদ এভাবে, ‘রেফারিংয়ে আসার পর ফিটনেসে জোর দিয়েছি। সেই ফিটনেসের মাধ্যমে হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবলও খেলেছি।’ এমনও দিন গেছে একই দিন বাস্কেটবল খেলে হ্যান্ডবল খেলেছেন। দুই খেলাতেই এক দিন সর্বোচ্চ স্কোরার হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার। 

হ্যান্ডবল বাস্কেটবল দুই যুগের বেশি সময় খেললেও জাতীয় দলে সেভাবে খেলা হয়নি, ‘জাতীয় দলে হ্যান্ডবল শুরুর দিকে খুব কম টুর্নামেন্ট থাকতো। টুর্নামেন্ট থাকলেও অনেক দিন ক্যাম্প করতে হতো। এক দেড় মাসের ছুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্ভব ছিল না। তাই ঘরোয়া খেলাই বেশি খেলা হয়েছে।’ হ্যান্ডবলে ওল্ড আইডিয়ালস, নারিন্দা প্রগতি সংঘ, মেরিনার্স, ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে খেলেছেন। বাস্কেটবলে ঈগলসের হয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন। ১৯৯১ সালে যুব হ্যান্ডবল দলের হয়ে কমনওয়েলথ ইয়ুথ হ্যান্ডবল খেলেছেন। 

আজাদ রহমানের ডাক নাম খোকন। হ্যান্ডবলে সবাই তাকে খোকন নামেই ডাকে। অনেকে বড় খোকন বলে তাকে, ‘প্রথমে আমাকে খোকন বলত। এরপর গোলরক্ষক খোকন আসে। তখন আমাকে বড় খোকন ডাকা শুরু করে।’ হ্যান্ডবলে এখনো সবাই তার ডাক নাম খোকন ধরেই ডাকে। ফুটবল রেফারিংয়ে গিয়ে তার আসল নাম আজাদ রহমানের ব্যবহার হতে শুরু করে।’ 

হ্যান্ডবল-বাস্কেটবলের আজাদ এখন ফুটবলের রেফারিদের রেফারি। বিষয়টি ভাবতে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে তৃপ্ত বোধ করেন,‘অন্য দুই খেলার খেলোয়াড় হয়েও আমি দেশের জনপ্রিয় একটি খেলায় বিশেষ অবস্থান করতে পেরেছি এজন্য খুবই ভালো লাগে। এর পেছনে প্রথম অবদান খালেক স্যারের। এরপর আমার চেষ্টা ও সকলের সহযোগিতা।’

২০০০ সালের পর হঠাৎ রেফারিংয়ে এসে ভিন্ন পথ ঘরোয়া রেফারিং করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৭ সালে রেফারি হিসেবে অবসর নেন। এরপর ম্যাচ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সাল থেকে ফেডারেশনে হেড অফ রেফারিজ হিসেবে কর্মরত। 

সদালাপী, উচ্চ শিক্ষিত আজাদের ফুটবলাঙ্গনে ছিল বেশ জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। সেই আজাদ হেড অফ রেফারিজ হিসেবে এখন তার অনেক সতীর্থ ও অনুজদের কাছে অনেকটা সমালোচিতও। কিছু দিন আগে তার পদত্যাগের দাবিও উঠেছিল । এ নিয়ে অবশ্য তেমন প্রতিক্রিয়া নেই তার, ‘আসলে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। রেফারির উন্নয়ন চাই এজন্য এই দায়িত্ব নিয়েছি। এই পদটি এএফসির নির্দেশনায় ফেডারেশন করেছে। কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে। আমি ফেডারেশন ও রেফারিদের মধ্যে প্রশাসনিক সেতুবন্ধন করি।’

বাস্কেটবলে এখন সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই আজাদের। হ্যান্ডবলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ফুটবল রেফারিং নিয়ে বেশি ভাবেন তিনি, ‘তৈয়ব হাসানের পর এএফসি এলিট রেফারি নেই। এলিট রেফারি ও সহকারী রেফারি তৈরি করাই এখন আমার লক্ষ্য।’

আজাদ রহমানের শুরু হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল হলেও ফুটবলের সঙ্গে এমনভাবে মিশেছেন এখন তিনি ফুটবলেরও। নিজের পরিচয়ে তাই খানিকটা কুটনীতির আশ্রয়, ‘আসলে আমি ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ, দুটোই দারুণ উপভোগ্য। হ্যান্ডবলেও আমার, ফুটবলও।’

এজেড/এটি