ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতির জন্য তুরস্কের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। আর সেই তুরস্কের মধ্যে কোনিয়ার রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। কারণ এখানে বসবাস ও ইন্তেকাল করেছেন মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি। তুরস্কের অন্য সব শহরের পাশ্চাত্যের ছোঁয়া প্রকট হলেও রুমির শহরে এখনো অনেকটা প্রাচ্যের ধারা বিদ্যমান।

কোনিয়ার সেলকুক বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসনের উপর পিএইচডি ডিগ্রি করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সোহান। তিন বছরের বেশি সময় তুরস্ক থেকে তার উপলব্ধি, ‘ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা ও অন্য শহরে তার্কিদের জীবনযাত্রা প্রায় পুরোটাই ইউরোপিয়ানদের মতো। একমাত্র কোনিয়াতেই ব্যতিক্রম। জালালউদ্দিন রুমির শহর বলেই হয়তো এখানে জীবনযাত্রায় ইসলামিক ছোঁয়া এখনো অনেক।’ এজন্যই তুরস্কের সরকার ইসলামিক সলিডারিটি গেমস রুমির শহর কোনিয়াতেই আয়োজন করছে।

ইসলামিক গেমসে এশিয়ার বাইরে অন্য মহাদেশও অংশগ্রহণ করছে। তাদের অনেকেই গেমসে অংশগ্রহণের আগে থেকে রুমির ব্যাপারে অবগত ছিলেন। আফ্রিকা মহাদেশের সেনেগালের স্প্রিন্টার কামার আহমেদ রুমির শহরের গেমসে অংশ নিতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘তিনি অত্যন্ত বড় মাপের ইসলামের সাধক। তাকে নিয়ে আমাদের দেশেও আলোচনা হয়। তার শহরে ইসলামিক গেমস খেলতে পারা খুবই গর্বের।’ মরক্কোর সাংবাদিক আহমেদ উমরও জানেন রুমির সম্পর্কে, ‘ইসলামের প্রচারের ক্ষেত্রে তার অবদান অসম্ভব। বিশেষ করে এই অঞ্চলে তিনি ছিলেন ইসলামের অগ্রগণ্য সৈনিক।’

রুমির শহরকে আরো বেশি পরিচিত করতে চেষ্টার কোনো কমতি নেই আয়োজকদের। আয়তনের দিক থেকে রুমির শহরটি তুরস্কের অন্যতম বড়। পাহাড় ঘেরা উঁচু-নিচু এই শহরে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে দেখা যায় রুমির অমর কিছু বাণী।

‘মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়, আলো দেওয়ার জন্য নিজেকেই পুড়তে হয়’ এ রকম অসংখ্য বাণী ইংরেজী কার্ডের মাধ্যমে গেমসে অংশগ্রহণকারীদের দিচ্ছেন আয়োজকরা। গেমসের মেইন প্রেস সেন্টারেও রয়েছে রুমির বাণী সম্বলিত কিছু বই।

গেমস উপলক্ষ্যে এই শহরটি সেজেছে যেন নতুন রুপে। এখানকার রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্ত। রাস্তার দুই ধারেই গেমসের লোগো দৃশ্যমান। রাস্তার এক অংশ জুড়ে রয়েছে ট্রামলাইন। ট্রামগুলোতেও গেমসের লোগা আঁকা হয়েছে। বেশ নিরিবিলি ও শান্ত শহর কোনিয়া। উঁচু দালান, শপিং মল থাকলেও বিস্তৃত খালি মাঠ ও গাছগাছালিও অনেক। শহর এবং গ্রাম্য জীবনের মিশেল রয়েছে রুমির শহরে।

৫ম ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পদকের লড়াই ইতোমধ্যে শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ। স্থানীয় সময় রাত আটটায় শুরু হয়ে সাড়ে দশটায় শেষ হওয়ার কথা এই অনুষ্ঠান। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে কিছু অংশ জুড়ে থাকবে রুমিকে নিয়ে। আয়োজক কমিটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ‘অনুষ্ঠানে বেশ কিছু চমক থাকবে। এজন্য অনেক কিছুই অপ্রকাশিত। তবে জালালউদ্দিন রুমিকে নিয়ে কিছু অংশ থাকবে সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’ 

রুমির শহরকে আরো বেশি পরিচিত করতে চেষ্টার কোনো কমতি নেই আয়োজকদের। আয়তনের দিক থেকে রুমির শহরটি তুরস্কের অন্যতম বড়। পাহাড় ঘেরা উঁচু-নিচু এই শহরে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে দেখা যায় রুমির অমর কিছু বাণী। ‘মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়, আলো দেওয়ার জন্য নিজেকেই পুড়তে হয়’ এ রকম অসংখ্য বাণী ইংরেজী কার্ডের মাধ্যমে গেমসে অংশগ্রহণকারীদের দিচ্ছেন আয়োজকরা। গেমসের মেইন প্রেস সেন্টারেও রয়েছে রুমির বাণী সম্বলিত কিছু বই।

আজকের (মঙ্গলবার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান সহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

আজকের গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুমির প্রচারিত শান্তির বার্তাই উপস্থাপনের চেষ্টা থাকবে আয়োজকদের। মাঠে পদকের লড়াই থাকলেও ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পরিক সৌহাদ্য বৃদ্ধিই এই গেমসের আসল লক্ষ্য। রুমির শহর এখন সেই লক্ষ্য সাধনের মঞ্চ।

এজেড/এটি/এনইউ