কোনিয়া শহরের নাগরিকরা দৈনন্দিন কাজে ট্রাম ব্যবহার করেন। শহর থেকে একটু দূরে এক ট্রাম বদলে আরেক ট্র্যামে উঠতে হয় মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির জাদুঘরে যেতে। আদলিয়ে থেকে পুনরায় ট্রেনে ওঠার এক স্টেশন পরেই মেভলানা (মাওলানা) স্টেশন। 

ট্রামে বসেই দেখা যায় দলে দলে সবাই জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমির জাদুঘরে প্রবেশ করছেন। স্বল্প পরিসরের মধ্যে বেশ গোছালো এক জাদুঘর। তার্কিশ ও বিদেশি পর্যটকরা সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনামূল্যে পরিদর্শন করতে পারেন মুসলিম সাধকের এই জাদুঘর। তার্কিশরা ইংরেজিতে অভ্যস্ত না হলেও পর্যটকদের আকর্ষণীয় এই স্থানটিতে তার্কিশ, আরবির পাশাপাশি ইংরেজি নির্দেশনাও রেখেছে। ফলে গাইড না থাকলেও রুমি ও তার ইতিহাস জানা যায় সহজেই।

জালালউদ্দিন রুমি কোনিয়া শহরে বেশ কয়েক বছর বসবাসের পর ১২৭৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ২ বছর পর এই সমাধিস্থল সংরক্ষণের উদ্যোগ শুরু হয় । প্রথম দিকে রুমির পরিবার ও অনুসারীরা এটি দেখাশোনা করলেও পরবর্তীতে রাষ্ট্র এটির দায়িত্ব নেয়। এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে এই জাদুঘর। এটি এখন তুরস্ক তো বটেই মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। 

রুমির সমাধিস্থলকেই জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়েছে। বেশ উঁচু সবুজ রংয়ে অঙ্কিত রুমির সমাধির পাশে তার ত্রিশ জন অনুসারীর সমাধি রয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত মুসলিমরা এখানে প্রার্থনা করেন। সমাধিস্থলের মাঝেই রয়েছে ছোট প্রার্থনাকক্ষ। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা। 

জাদুঘরের উল্টো দিকেই ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষ। যেগুলোতে রুমির অনুসারীদের নানা নিদর্শন। প্রতিটি কক্ষের নামকরণ রুমির অনুসারীদের (দরবেশ) নামে। জাদুঘর প্রাঙ্গণে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ রান্না ও খাবার ঘর। একটি বৈঠক খানা রয়েছে এর নিচের অংশে দুই অনুসারীর প্রতিকৃতি। এদের একজন বাজার করতেন আরেকজন রান্না-বান্না। জাদুঘর, দরবেশদের কক্ষ ও রান্নাঘর একটি অংশের মধ্যে। এর বাইরের অংশে রয়েছে বেশ খোলা বাগান, রুমির উপর নির্মিত নানা সুভিনয়র। মূল প্রাঙ্গণের এক পাশে রয়েছে মওলানা রুমি আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন। আরেক পাশে রয়েছে সুলতান মসজিদ। 

মসজিদের সামনে করা হয়েছে চলমান ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের লোগো দিয়ে মঞ্চ। কোনিয়া শহর বাড়তি বিশেষত্ব পেয়েছে রুমির জন্য। রুমির শহরে এখন ইসলামিক সলিডারিটি গেমস চলছে। তাই এখন একটু ভিড় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। খেলার ফাঁকে অথবা খেলার শেষে গেমসে আগতরা এক পলক রুমির জাদুঘর পরিদর্শনের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের কন্টিনজেন্টের অনেকেই ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। 
 
মুসলিম বিশ্ব ছাড়াও ইউরোপিয়ান, আমেরিকানরাও কোনিয়া আসলে একবার ঘুরে যান এই জাদুঘরে। মুসলিম সাধকের জাদুঘর হলেও অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও প্রবেশাধিকার রয়েছে। তারাও এটি বেশ উপভোগ করেন, ‘কে কোন ধর্মের সেটা বিষয় নয়, একজন ভালো মানুষ হওয়া প্রয়োজন৷ যে কোনো ভালো মানুষের ইতিহাস জানতে আসাই যায়’ -বলছিলেন ফ্রান্স থেকে আগত এক ক্যাথলিক নারী পর্যটক। 

এজেড/এটি