জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে হেঁটে যেতে সময় লাগে পাঁচ মিনিট। সেই পথ পাড়ি দিতে জাকির হোসেনের লেগেছে মিনেট বিশেক। ৫৬ বছর বয়স্ক তায়কোয়ান্দোকা জাকির হোসেন বাংলাদেশ গেমসে এখন অন্যতম এক চরিত্র। 

৩২ উর্ধ্ব ক্যাটাগরিতেও ব্রোঞ্জ জিতেও আলোচনা ও আগ্রহের শীর্ষে দিনাজপুরের এই মধ্যবসয়ী পুরুষ, ‘অলিম্পিকে আসার সময় হ্যান্ডবল, রোলার স্কেটিং, কাবাডির সামনে কিছুক্ষণ থামতে হয়েছে। অনেকেই আমার সঙ্গে আলাপ করলেন।’
 
দাবাড়ু রাণী হামিদ সত্তরের বেশি বয়সে খেলে যাচ্ছেন। নিয়াজ মোর্শেদের বয়সও ৫৬ এর বেশি। অন্য কোনো ডিসিপ্লিনে জাতীয় পর্যায়ের খেলায় এত বেশি বছরে কাউকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় না। তাই জাকিরকে নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি। প্রকৃত বয়স ৫৬ হলেও সার্টিফিকেটে জাকিরের বয়স ৫২। 

আমৃত্যু তায়কোয়ান্দো খেলে যেতে চান দিনাজপুরের এই সন্তান, ‘মাঝে তায়কোয়ান্দো ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওজন বেড়ে গিয়েছিল অনেক। আবার তায়কোয়ান্দোতে ফেরায় শরীরের ওজনে ভারসাম্যতা এসেছে। যে কয়েকদিন বেঁচে থাকব, খেলেই যাব।’
 
৫৬ বছর বয়স্ক জাকিরের স্ত্রী ও এক মেয়ে। পরিবার থেকে প্রথমে জাকিরকে খানিকটা বাধা দিলেও এখন সায় দেয়। আর এই গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ের পর পরিবার আরও বেশি উৎসাহিত বলেন জাকির, ‘আমার একমাত্র মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে। আমি কয়েকবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছি। এবারের মতো আলোচনায় আসিনি। এবার আমার ফলাফল ও অংশগ্রহণের বিষয়টি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় আমার পরিবারও এখন সন্তুষ্ট।’
 
দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করা জাকির তমিজউদ্দিন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। অন্য খেলায় না গিয়ে তায়কোয়ান্দোতে আসার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘কারাতে ডিসিপ্লিনগুলোর ওপর আমার আকর্ষণ ছিল। কারাতের অন্য ডিসিপ্লিনগুলোতে পেশী শক্তির প্রদর্শন বেশি। সেটা তায়কোয়ান্দোতে কম। অন্যদিকে তায়কোয়ান্দোর মাধ্যমে শরীরে শক্তি সঞ্চার করা যায়। এজন্য তায়কোয়ান্দোকে বেছে নিয়েছি।’ 

পদক নয় অংশগ্রহণই বড় কথা। এই আদর্শ ধারণ করেন জাকির, ‘এই বয়সে আমি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ব্রোঞ্জ জিতেছি, এটাই অনেক। খেলায় অংশগ্রহণ করে আমি মজা পাই ও নিজেকে সুস্থ রাখতে পারি।’ 

খেলাধুলায় বয়স বাধা নয় সেটা প্রমাণ করছেন দিনাজপুরের এই ব্যক্তি, ‘বিদেশে দেখি নব্বই বছরের বেশি বয়সে অনেক নারী-পুরুষ খেলছে। আর আমি মাত্র ৫৬। খেলাধুলার ক্ষেত্রে মানসিক শক্তিটাই আসল।’

২০০১ সালে তায়কোয়ান্দো যাত্রা শুরু হয়। এরপর দিনাজপুরে এরশাদ আলীর মাধ্যমে তায়কোয়ান্দো খেলা শুরু করেন জাকির। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। এবার বাংলাদেশ গেমসের আগেও জাতীয় পর্যায়ে তার ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে দুটি।
 
এজেড/এমএইচ