চীনের হাংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাপ্তি বক্সার সেলিম। এশিয়ান গেমসে ব্যক্তিগত পদকের দোরগোড়ায় ছিলেন এই বক্সার। কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানি বক্সারের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়েও সেলিমের সেমিতে ওঠা হয়নি। সেমিফাইনালে উঠলেই এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে তিনি পদক নিশ্চিত করতেন।

বক্সার সেলিম চীন থেকে ফেরার এক সপ্তাহ পরই আবার দেশ ছেড়েছেন। তবে খেলার জন্য নয়, জীবন-জীবিকার তাগিদে ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি ছুটছেন কঙ্গোতে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে এক বছরের জন্য কঙ্গোতে সেলিম। প্রায় সপ্তাহ তিনেক কঙ্গোতেই দিন কাটছে সেলিমের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে কঙ্গোতে শান্তিরক্ষার কাজ করছেন। এর মধ্যেও বক্সিংয়ে মনোযোগ রাখার চেষ্টা সেলিমের, ‘আমার সেনাবাহিনীর স্যাররা অত্যন্ত আন্তরিক। এখানে রিং বক্সিং সম্ভব নয়, এরপরও সকালের পিটি এবং বিকেলের গেম সেশনে নিজেকে ফিট এবং আলাদাভাবে কিছুক্ষণ বক্সিংয়ের জন্য সময় রাখি। স্যাররাও আমাকে যথেষ্ট সহায়তা এবং উৎসাহিত করেন।’

এশিয়ান গেমসে পদকের সম্ভাবনা জাগানো সেলিমের এখন বক্সিং রিংয়েই সময় কাটানোর কথা। দেশি-বিদেশি কোচের অধীনে অনুশীলনে নিজেকে শাণিত করার পরিবর্তে পরিবারের আর্থিক নিশ্চয়তার টানে ছুটতে হয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ কঙ্গোতে। শুধু বক্সার সেলিম নয়, মাস কয়েক আগে নারী আরচ্যারও গিয়েছেন মিশনে। ক্রিকেট, ফুটবলের বাইরে দেশের অন্য সকল খেলার খেলোয়াড়রা আর্থিকভাবে তেমন সাবলম্বী নন। অ্যাথলেটিক্স, সাতার, বক্সিং, কাবাডি, শুটিং এমনকি হকিসহ প্রায় সব খেলার খেলোয়াড়রাই বিভিন্ন সার্ভিসেস সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক/স্থায়ী ভিত্তিতে চাকুরি করেন। খেলার পাশাপাশি সেই সংস্থার হয়ে ডিউটিও তাদের পেশাগত বড় দায়িত্ব। সেরকম দায়িত্বের অংশ হিসেবেই সেলিমের কঙ্গো যাত্রা। 

প্রায় ১৪ বছর যাবৎ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত সেলিম। এখন তার পদ কর্পোরাল। বক্সিংয়ে যেমন তিনি দেশের জন্য লড়েন, তেমনি সেনাবাহিনীর হয়েও দেশের সম্মান বৃদ্ধির শতভাগ প্রতিজ্ঞা ঝরল সুদূর কঙ্গো থেকে, ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক সুনাম। আমার কাজের মাধ্যমেও দেশের সেই সুনাম আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির চেষ্টা করব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ।’

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদক বক্সার মোশাররফ হোসেনের। ১৯৮৬ সিউল এশিয়াডে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন তিনি। ৩৭ বছর পর সেলিম মোশাররফের সেই অর্জনের বেশ কাছাকাছি ছিলেন। গেমস থেকে ফিরে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে সময় কাটাতেও পারেননি বলে জানান সেলিম, ‘আসলে আমি চীন থেকে ফিরে দ্রুতই কঙ্গো আসতে হয়েছে। তাই সেভাবে অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারিনি। এজন্য অবশ্য আমার কোনো আফসোসও নেই। আমি নিজের ইচ্ছেতেই মিশন বেছে নিয়েছি।’

বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের জন্য মূল আকর্ষণ দক্ষিণ এশিয়ান গেমস। সেই গেমসে স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্য সেলিমেরও, ‘এশিয়ান গেমস আমার মাঝে পদকের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে পদক জিততে চাই। এজন্য সেভাবে প্রস্তুত করতে চাই নিজেকে।’

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা। শত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকেও বিশ্ব মঞ্চে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। অন্যদিকে নানা প্রতিবন্ধকতায় থেকেও বক্সার সেলিম, স্প্রিন্টার ইমরানরা দেশকে বড় কিছুই উপহার দিচ্ছেন। বড় মঞ্চে বড় কিছু উপহার দিয়েও তারা থাকেন আলোচনার বাইরে। এ নিয়ে সেলিমের মন্তব্য, ‘ক্রিকেটারদের আমি দোষারোপ করব না। তারাও চেষ্টা করছে কিন্তু হয়তো পারছে না। দেশের জার্সি গায়ে সব খেলোয়াড়ই জিততে চায়। আমার শুধু অনুরোধ থাকবে দেশের সকল ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়াঙ্গনের সকলের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত ইভেন্টের দিকেও একটু নজর দেওয়ার।’

এজেড/এএইচএস