দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবাই মুখিয়ে থাকেন বাংলাদেশ গেমসের জন্য। ২০১৩ সালের পর আবার বাংলাদেশ গেমস হলো। এবারের গেমস অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। করোনা পরিস্থিতি, লকডাউনের মধ্যেই চলেছে গেমস। এত শঙ্কার মধ্যেও ক্রীড়াবিদরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করেছেন।

অনেক ক্রীড়াবিদ রেকর্ডসহ স্বর্ণ জিতেছেন। অনেকে গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। এসব ক্রীড়াবিদদের শুধু পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। নেই কোনো অর্থ পুরস্কার। গেমস শেষে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) ঘোষণা করেনি আসরের সেরা অ্যাথলেটও।

২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে সাত স্বর্ণ ও এক রৌপ্য জিতে সেরা অ্যাথলেট হয়েছিলেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। এবারের গেমসেও দুই রেকর্ডসহ চারটি স্বর্ণ জিতেছেন। এবারের গেমসে সেরা অ্যাথলেট ঘোষণা না থাকায় খানিকটা বিস্মিত দেশ সেরা এই সাতারু, ‘গত আসরে আমাকে সেরা ষোষণা করা হয়েছিল। এই আসরেও অনেক ক্রীড়াবিদ ভালো পারফরম্যান্স করেছে। তারা আশায় ছিল।’ 

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ মামুন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এবারের গেমসটি আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে করেছি। এজন্য অনেক কিছুই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও করা যায়নি।’ 

২০২০ সালেই আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ গেমস। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য এক বছর পিছিয়ে এই বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর গেমসের বাজেট ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির জন্য এই বছর অর্ধেক বাজেটে (২০ কোটি ) গেমস আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। 

২০ কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে এখনো পুরো অর্থ পায়নি বিওএ। সরকার ৫০ শতাংশের মতো অর্থ দিয়েছে। বাকি পঞ্চাশ শতাংশ অর্থ পাবে অলিম্পিক গেমসের হিসাব দেওয়ার পর। কিছুটা টানাটানির মধ্যে থেকেই গেমস শেষ করেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ সংস্থা। 

গেমসে অনেক খরচই হয়েছে। এর মধ্যে রেকর্ডধারী ক্রীড়াবিদদের পুরস্কৃত করলে গেমসের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেত। ২০১৩ সালে গেমসে রেকর্ডধারীরা পুরস্কৃত হলেও এবার তা হননি। সাধারণত ফেডারেশনগুলো জাতীয় প্রতিযোগিতায় রেকর্ড সৃষ্টিকারীদের আর্থিক পুরস্কার দেয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ গেমসে রেকর্ডকারীদের পুরস্কার প্রত্যাশা করাটা স্বাভাবিকই। 

বাংলাদেশ গেমসে ভারত্তোলনে রেকর্ড গড়া মাবিয়া আক্তার সীমান্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো পুরস্কার বা ঘোষণা শুনিনি অলিম্পিকের কাছ থেকে। তবে আমাদের আনসার স্বর্ণপদক জয়ীদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করবে।’ 

বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য এমবি সাইফ রেকর্ডের পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের সাঁতারে বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে। বিওএ থেকে তেমন ঘোষনা না থাকায় আমরা আলাদাভাবে ফেডারেশন থেকে কিছু করিনি। আমাদের সাতারুদের আলাদাভাবে কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’ 

সেরা অ্যাথলেট ঘোষণা নেই, ছিল না রেকর্ডধারীদের পুরস্কার। সেই অর্থে ক্রীড়াবিদদের প্রাপ্তি বলতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক। স্বর্ণ পদক বলা হলেও প্রকৃত অর্থে স্বর্ণ থাকে না শুধু স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্রর ছবি বা প্রতিকৃতিতে দেয়া হয় পদক। অন্য গেমসের তুলনায় এবার পদক পেয়ে সন্তুষ্ট ক্রীড়াবিদরা। 

দেশের শীর্ষ শ্যুটার শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে এবারের পদকটি খুব সুন্দর করা হয়েছে। অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে এবারের পদকটি ভালো।’ 

করোনার জন্য বাংলাদেশ গেমসে ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কমানো হয়েছে। অনেক ক্রীড়াবিদ অংশ নিতে পারেননি। আবার যারা অংশ নিয়েছেন এদের মধ্যে সবাই পদকও পাননি। বড় একটি অংশ শুধু অনেকটা খালি হাতেই ফিরে গেছেন। ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে যারা ঢাকায় ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে ৫ তারিখের পর বাড়ি গিয়েছেন। 

এরপরও গেমসের খানিকটা প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন, ‘বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন সার্ভিসেস বাহিনী নির্ভর। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনেক খেলোয়াড় গেমসে রৌপ্য, ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। তাদের অনেকেই বিভিন্ন সংস্থার দৃষ্টিতে এসেছেন। সেটা পরিবারের জন্য বড় পাওয়া।’

এজেড/এটি/এমএইচ