মাবিয়া আক্তার সীমান্ত

১৪ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট গমনাগমন বন্ধ বাংলাদেশে। এই কারণে ঢাকা আবাহনীর এএফসি কাপের ম্যাচ পড়েছে জটিলতায়। আবাহনীর ফুটবল দল ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনে এর প্রভাব ভালোই পড়েছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির তত্ত্বাবধানে ফ্রান্সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সাঁতারু আরিফুল ইসলাম। 

বাংলাদেশ গেমস শেষ করে ১৪ এপ্রিল ভোর চারটা ২৫ মিনিটে ছিল তার ফ্লাইট। চার ঘণ্টার জন্য আটকে গেলেন সাঁতারু আরিফ। তিনি জানান, ‘আমার টিকিটটি ফ্রান্স থেকেই করা। ভেবেছিলাম অনেক দিন পর দেশে যাচ্ছি। কিছুদিন দেশে কাটিয়ে আসি। ১৪ তারিখ থেকেই এমন সিদ্ধান্ত আসবে এটা ভাবিনি।’ 

ফ্রান্সে টিকিট এজেন্সি সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইট পরিবর্তন করবেন বলে জানালেন এই সাঁতারু, ‘এক সপ্তাহ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে বাংলাদেশে। আমি হয়ত এরপরই যাব।’ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফ্রান্সে ট্রেনিংয়ে রয়েছেন আরিফ। বাংলাদেশ গেমসে তার নিজের সেরা টাইমিংকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি- এ নিয়ে চলছে ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনা। 

এই প্রসঙ্গে তার ব্যাখ্যা, ‘লকডাউনে ইউরোপে অনেক দিন পানিতে নামা যায়নি। ঢাকায় এসে নৌবাহিনী আমাকে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিল। সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্যই আগের টাইমিং ছাড়িয়ে যেতে পারিনি। অলিম্পিকে অংশ নিতে পারলে অবশ্যই নিজের সেরা টাইমিংকে অতিক্রম করব।’ 

অলিম্পিক বৃত্তির প্রকল্পে থাকায় টোকিও অলিম্পিকে খেলা আরিফের অনেকটাই নিশ্চিত।

এদিকে অলিম্পিকে অংশ নিতে এখনো ওয়াইল্ড কার্ডের আশায় আছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। ভারত্তোলনে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকে। সেই শর্ত পূরণের জন্য ১৯ এপ্রিল উজবেকিস্তান যাওয়ার কথা ছিল মাবিয়া আক্তার সীমান্তের। উজবেকিস্তানে এশিয়ান ভারত্তোলন  চ্যাম্পিয়নশিপে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত অংশগ্রহণ করতে পারলে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ত। 

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণায় সেই সুযোগ আর থাকছে না বলে মনে করেন মাবিয়া, ‘১৬ এপ্রিল থেকে টুর্নামেন্ট শুরু। আমরা বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করতাম ২১ এপ্রিল থেকে। আমাদের বাংলাদেশের সমস্যার জন্য তো আর টুর্নামেন্ট বন্ধ থাকছে না। অন্য প্রতিযোগিরা ভেন্যুতে চলে যাচ্ছেন। ফলে আমার ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই ক্ষীণ হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া তো আর কিছু করার নেই।’ 

বিশ্ব ভারত্তোলন ফেডারেশন বা আইওসি বিশেষ বিবেচনা তখন একমাত্র ভরসা থাকবে মাবিয়ার, ‘করোনা ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের জন্য যেতে পারিনি সেটা যদি বিবেচনা করে তাহলে হয়তো আমার ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে। সেটা তাদের বিবেচনার ওপর। আর এই টুর্নামেন্টে আমি অংশ নিতে পারলে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়াটা আমার অধিকারই হতো তখন।’ 

অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার জন্য সাতটি সিনিয়র টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে হয় এবং পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করতে হয়। মাবিয়া ছয়টি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পারফরম্যান্সের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। মাবিয়ার সাথে উজবেকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল আরও দুই ভারত্তোলক মনিরা কাজী ও জিয়ারুলের। তাদের সবারই টিকিট নিশ্চিত ছিল। 

আরিফুল, মাবিয়াদের মতো ক্রীড়াঙ্গনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকেই। জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ডেনমার্ক আছেন। ব্রাদার্স ইউনিয়ন তাদের জার্মান কোচ আনার সময়সূচি পরিবর্তন করেছেন। এ রকম আরও অনেকেই ফ্লাইট সংকটে পড়েছেন। 

এজেড/এটি/এমএইচ/জেএস