দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আসরে লড়তে চান প্রীতি। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একাধারে চার বছর ছিলেন দেশসেরা লন টেনিস তারকা। তবে পায়ে ইনজুরি ও করোনা কালীন সময়ে পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাবে এবার বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস ২০২০ আসরের লন টেনিসে একক প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি তিনি। 

এককে ব্রোঞ্জ পদক পেলেও মিক্সড ডাবলসে ঠিকই অর্জন করেছেন স্বর্ণপদক। এখন স্বপ্ন দেখছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে দেশের সম্মান বয়ে আনার। লন টেনিস তারকা প্রীতির সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে তার খেলার জগতের আদ্যপান্ত।

২১ বছর বয়সী আফরানা ইসলাম প্রীতি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করতাম। একদিন টেনিস খেলা দেখে আগ্রহ জন্মায় এই খেলার প্রতি। বাগেরহাটে তখন অতটা সুযোগ ছিল না টেনিস খেলার। সুযোগটা আসে ২০১০ সালে। বাগেরহাট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে লন টেনিসের বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। 

তিনি আরও বলেন মায়ের জোরাজুরিতে আমি বাছাইয়ে অংশগ্রহণ করি। এখান থেকেই মূলত আমার যাত্রা শুরু হয়। আমি বাছাইতে টিকে সুযোগ পাই ঢাকায় যাওয়ার। এরপরে ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। অনূর্ধ্ব-১৪ এশিয়ান টেনিস ফেডারেশনে(এটিএফ) আমি একক ও দ্বৈত দুটোতেই চ্যাম্পিয়ন হই। ২০১১থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আমি বিকেএসপির শিক্ষার্থী ছিলাম।

প্রীতি আরও বলেন, ২০১৮-১৯ সালে ১৪ মাস চীনের গুয়ানজুতে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাবে কাজ করেছি লন টেনিস কোচ হিসেবে। স্বপ্ন ছিল দেশে ফিরে বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণ করব। কিন্তু এরপর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হই। শঙ্কার মুখে পড়ে যায় আমার খেলা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু মানসিক শক্তি আর মায়ের অনুপ্রেরণাতে আমি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এককে আমি ব্রোঞ্জ এবং মিক্সড ডাবলসে স্বর্ণ পদক পেয়েছি। স্বপ্ন দেখছি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক আসরে স্বর্ণ জয়ের।

সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও উপযুক্ত কোচের মাধ্যমে পরামর্শ, অনুশীলন ও সুযোগ-সুবিধা পেলে দেশের জন্য আরও বড় সম্মান বয়ে আনতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রীতি।

নতুন যারা টেনিস খেলতে আসতে চান তাদের জন্য প্রীতি বলেন, ভালো টেনিস খেলোয়াড় হতে হলে ১০ বছর বয়সের পর থেকেই নিয়মিত খেলা শুরু করা উচিত। কঠোর অনুশীলন ও নিয়ম মেনে খেলতে হবে এবং অধ্যবসায় থাকতে হবে স্বপ্ন পূরনের।

প্রীতির বাবা বাগেরহাট পৌরসভায় কর্মরত জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রীতি খেলার জন্য অনেক কষ্ট করে। এক্সিডেন্টে আহত হয়েও সে খেলা ছাড়েনি। রাত-দিন এই নিয়ে পড়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস-২০২০-এ তার সফলতায় পিতা হিসেবে আমি গর্বিত। কিন্তু এই খেলা অনেক ব্যয়বহুল। মেয়ের অনুশীলন চালিয়ে রাখতে আমার খুবই কষ্ট হয়। তার এই সফলতাকে ধরে রাখতে এবং দেশের জন্য আরও বড় সম্মান আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করলে ভালো হয়।

প্রীতির মা শামীমা আক্তার আখি বলেন, মেয়ে যদি চাঁদেও যেতে চায় আমি আমার সবটুকু দিয়ে সেই চেষ্টাই করবো। আমি নিজেও খুব খেলাধুলা পছন্দ করি। পারিপার্শ্বিকতার কারণে আমি ভালো জায়গায় খেলার সুযোগ পাইনি। আমার মেয়েকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে চাইনি। মেয়েকে উপযুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠতে যা করার আমি করেছি। আমার প্রত্যাশা প্রীতি তার সফলতা ধরে রাখবে এবং আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগীতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। 

বাগেরহাটের প্রবীণ টেনিস খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক অধ্যাপক বুলবুল কবীর বলেন, টেনিস একটি ব্যয়বহুল খেলা। বাগেরহাটে ইতিমধ্যে টেনিস এর প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। নতুন যারা টেনিসে আসতে চায় আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা করছি। প্রীতির সাফল্য নতুনদের অনুপ্রাণিত করছে বলে জানান তিনি।  

বাগেরহাট টেনিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্রিকেট-ফুটবলে বাগেরহাটের অনেক খেলোয়াড় দেশ-বিদেশ থেকে সম্মান বয়ে এনেছেন। পাশাপাশি টেনিসে আলো ছড়াচ্ছেন আমাদের গর্ব প্রীতি। আমরা তার উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করি। আমরা চাই সে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো খেলে বাগেরহাট তথা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করুক। তার চলার পথে বাগেরহাট টেনিস ক্লাব সবসময় পাশে থাকবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ.ন.ম ফয়জুল হক বলেন, বাংলাদেশ গেমসে বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতি একক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ এবং দ্বৈত ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রীতিকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। বাগেরহাটের টেনিস খেলোয়াড়দের সুবিধার্থে আমরা টেনিস ক্লাবের পক্ষে একটি তহবিল গঠন করব। বাগেরহাট থেকে যেসব খেলোয়াড় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বড় আসরে অংশগ্রহন করবে তাদেরকে এই তহবিল থেকে সহযোগিতা করা হবে। খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো বিষয়ে প্রীতিকে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।

তানজীম আহমেদ/এমএইচ