বিশ্বজুড়ে ৪৫০ উদীয়মান প্রতিভাবান দাবাড়ুর মধ্যে ১২ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করেছিল বিশ্ব দাবা ফেডারেশন। সেই ১২ জনের মধ্যে একজন ছিলেন বাংলাদেশের ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ। ২৭ মার্চ-২ এপ্রিল স্পেনে বিশ্বখ্যাত দুই গ্র্যান্ডমাস্টার জুডিথ পোলগার এবং আর্থার ইউসুপোভ ১২ জন দাবাড়ু–কে অনুশীলন করাবেন। কিন্তু এমন এক মঞ্চে অভিভাবকের ভিসা জটিলতায় আর স্পেন যাওয়া হচ্ছে না সাকলাইনের।

১২ প্রতিভাবান দাবাড়ুর সকল ব্যয় বিশ্ব দাবা ফেডারেশনই বহন করবে। ১২ জনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের সঙ্গে একজন করে অভিভাবক সঙ্গে নেয়ার নির্দেশনা ছিল। সেই অভিভাবকের আবাসন ব্যয়ও আয়োজকরা নির্বাহ করতো,  শুধু যাতায়াত ব্যয় বহন করতে হতো তাদের। 

সাকলাইনের সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে প্রথমে যাওয়ার কথা ছিল তার কোচ আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিলের। তিনি স্পন্সর এবং ভিসা আবেদনে ডকুমেন্টস স্বল্পতা থাকায় ১০ মার্চ অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরপর দাবা ফেডারেশনের সদস্য মাহমুদা আক্তার মলি চেষ্টা করেছিলেন। তখন অবশ্য তার হাতে পাসপোর্ট ও হাতে তেমন সময় ছিল না, ‘আমাকে যখন জানানো হয় তখন আমার পাসপোর্ট ছিল ভারতীয় দূতাবাসে। সেই পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়। এরপর যখন আবেদনের উদ্যোগ নেই তখন স্পেন দূতাবাস বলেছিল কমপক্ষে ১৫ কর্মদিবস প্রয়োজন। সাকলাইেনের বয়স মাত্র ১৩ হওয়ায় পরিবারও একা ছাড়েনি। তাই শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হলো না সাকলাইনের।’

আবু সুুফিয়ান শাকিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করায় ভিসার ক্ষেত্রে সরকারি আদেশ (জিও) থাকা বাধ্যতামূলক। আবেদনের সময় জিও ছিল না শাকিলের, ‘২৭ ফেব্রুয়ারি ফিদে জানালেও সাকলাইন অবহিত হয় ১ মার্চ। এখানে দুই দিন সময় বিলম্ব হয়। স্পেনে অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। জিও পেতে সময় লাগায় এবং আমার স্পন্সর নিশ্চিত না হওয়ায় ১০ মার্চ মলিকে (ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য) জানাই। ’

সাকলাইনের বড় বোন সোহানা অত্যন্ত হতাশ কন্ঠে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবারই মন খারাপ। নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। কোচ শাকিল স্যার যখন অভিভাবক হিসেবে যেতে চেয়েছেন পরিবারের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে অভিভাবকের নানা কাগজপত্র নোটারী এবং সেটা স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদ করে দেয়া হয়েছে। তিনি যখন পারলেন না এরপর মলি ম্যাডামের ক্ষেত্রেও আমরা একই কাজ করেছি।’ 

সাকলাইনের বাবা, নিজ পরিবারের পরিবর্তে কোচ ও ফেডারেশনের সদস্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণটিও ব্যাখ্যা করেছেন তার বোন, ‘আমার বাবার পক্ষে ২-৩ লাখ ব্যয় করে স্পেন যাওয়াটা একটু কষ্টসাধ্যই। দাবা সংক্রান্ত বিষয় হওয়ায় দাবার সংশ্লিষ্ট একজন গেলেই সাকলাইন ও দেশের দাবার জন্য ভালো হতো। দুই জন চেষ্টা করেছে শেষ পর্যন্ত ভিসা আবেদন করতে পারেনি। এজন্য সাকলাইনও আবেদন করেনি। ’

ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন জাতীয় জুনিয়র দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন গত ডিসেম্বরে। আন্তর্জাতিক রেটিং দাবাতেও প্রথম হয়েছেন। যেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানও খেলেছিলেন। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনা করেই ফিদে সাকলাইনকে এমন আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। 

এজেড/জেএ