গোলের খেলা ফুটবল ও হকি। গোল সংক্রান্ত অনেক রেকর্ডই ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে। তবে বাংলাদেশে ঘরোয়া ফুটবল ও হকি লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড দীর্ঘদিন ধরেই অক্ষত। ১৯৮২ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে মোহামেডানের জার্সিতে ২৭ গোল করেছিলেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ১৯৯৫ সালে উষার হয়ে লিগে ৪০ গোল করেছিলেন রফিকুল ইসলাম কামাল। সালামের রেকর্ড ৪২ আর কামালের রেকর্ড ২৯ বছর ধরে অক্ষত।

হকির তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল চান কেউ তার রেকর্ড ভেঙে দিক, ‘কিসমত ভাইয়ের (কামরুল ইসলাম কিসমত) ২৮ গোলের রেকর্ড ভেঙে আমি ৪০ গোলের রেকর্ড গড়েছিলাম। সেটাও অনেকদিন হয়ে গেল। জিমি একবার কাছাকাছি গিয়েছিল, এবার সবুজের সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকদিন হলো আমার অধীনে এই রেকর্ড, এখনই ভেঙে দেওয়ার উপযুক্ত সময়।’

গত দুই দশকে বাংলাদেশ হকির সুপারস্টার রাসেল মাহমুদ জিমি। ২০১৬ সালে লিগে তিনি ৩৭ গোল করে দাবি করেছিলেন এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের। পরবর্তীতে কামাল তার ৪০ গোলের একটি পত্রিকার প্রতিবেদন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড না থাকলেও এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১১ গোল আর অনেক জাতীয়-আন্তর্জাতিক রেকর্ড রয়েছে জিমির। তাই মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা না হওয়া নিয়ে আফসোস নেই তার, ‘একজন তো আর সব রেকর্ড গড়বে না। একেক জনের একেক রেকর্ড থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক রেকর্ডই আছে। এটা নিয়ে তেমন আফসোস নেই।’

৩৭ বছর বয়সী জিমির ক্যারিয়ার এখন অবসরের দ্বারপ্রান্তে। কামালের এই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা এখন মেরিনার্সের ডিফেন্ডার সোহানুর রহমান সবুজের ওপরই। ২০২১ সালে লিগে করেছিলেন ৩৩ গোল। চলমান লিগেও তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা। সবুজ এবং তার ক্লাব মেরিনার্সের সতীর্থদের দাবি প্রথম পর্ব শেষে সবুজের গোলসংখ্যা ৩১। যদিও অফিসিয়িাল স্কোরশিটে সংখ্যাটা ২৮। সুপার সিক্সে আরও পাঁচ ম্যাচ রয়েছে। ফলে কামালকে টপকানোর সম্ভাবনা রয়েছে তার। তবে রেকর্ড নিয়ে বিশেষ কোনো ভাবনা নেই সবুজের, ‘আমি এখন ইনজুরি ও সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক খেলায় ফেরাটাই কাম্য। গত দুই ম্যাচে খানিকটা ইনজুরি নিয়েই খেলেছি।’

সুপার সিক্সে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল অ্যাজাক্স ও বাংলাদেশ পুলিশ। এই দুই ম্যাচে বেশি সংখ্যক গোল করে রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা দেখছেন হকির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা রফিকুল ইসলাম কামাল, ‘পাঁচ ম্যাচে দশ গোল খুবই সম্ভব। তাছাড়া সে পেনাল্টি কর্নারে খুবই দক্ষ। তার কাছে আমার রেকর্ড ভাঙলে কোনো আফসোস থাকবে না। একজন যোগ্য লোকের কাছেই ভাঙবে।’ রেকর্ড ভাঙলে কামালের আফসোস না থাকলেও দুই যুগের ব্যবধানে লিগের মানের তারতম্যের বিষয়টি বললেন অকপটে, ‘সেই সময় দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়, আম্পায়ারিংয়ের মান অবশ্যই এখনকার চেয়ে ভালো ছিল।’

কামাল, জিমি এরা মূলত ফরোয়ার্ড। সোহানুর রহমান সবুজ ডিফেন্ডার হয়েও ২০২১ সালে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। এবারও সেই স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায়। সবুজকে ডিফেন্ডার থেকে সর্বোচ্চ গোলদাতা বানানোর কারিগর মেরিনার্সের কোচ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সবুজ ডিফেন্ডার হলেও আমি তাকে ফ্রি খেলার লাইসেন্স দিয়েছি। সে সব পজিশনেই খেলতে পারে। আধুনিক হকি এমনই। এজন্য সবুজ পেনাল্টি কর্নারের পাশাপাশি ফিল্ড গোলও করছে অনেক।’

অন্যদিকে, ফুটবলে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর রেকর্ড ভাঙার দোরগোড়ায় ছিলেন হাইতির ফরোয়ার্ড ওয়েডসন এনসেলমে। ২০১৪ সালে তিনি শেখ জামালের হয়ে ২৬ গোল করেছিলেন (সেই মৌসুমে লিগ হয়েছিল তিন লেগের)। এরপর আর সালাম মুর্শেদীর রেকর্ডকে সেভাবে কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি।

১৯৭৩ সালে ঢাকা আবাহনীর জার্সিতে কাজী সালাউদ্দিন ২৪ গোল করেছিলেন। নয় বছর পর ১৯৮২ সালে ২৭ গোলের রেকর্ড গড়েন মোহামেডানের সালাম মুর্শেদী। সত্তর-আশির দশকে আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথ শুধু ম্যাচ জয়-পরাজয়ে ছিল না, ছিল রেকর্ডের ক্ষেত্রেও। আবাহনীর রেকর্ড মোহামেডানে ছিনিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর ছিলেন বাদল রায়, কোহিনূর ও গাফফার। তাই নিজেরা অনেক গোলের সুযোগ পেলেও সালামকে গোলের যোগান দিয়ে সালাউদ্দিনের ২৪ গোলের রেকর্ড ভাঙিয়েছেন।

এজেড/এএইচএস