জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পিএবিএক্স সহকারী (এখন অর্থ বিভাগে নিযুক্ত) সালেহা সুলতানা নাজমা আজ (বৃহস্পতিবার) আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কর্মরত অবস্থায় অসুস্থবোধ করার পর পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন বলে দাবি তার সহকর্মীদের। পরে তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এনএসসির সচিব আমিনুল ইসলামের অপসারণ দাবি করেছে কর্মচারী ইউনিয়ন।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনের সামনে মানববন্ধন, এনএসসির অষ্টম ও নবম তলার অফিসে তালাও দিয়েছে কর্মচারীরা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের সংগঠন ইউনিয়ন। এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিব ও প্রচার সম্পাদক সেলিম মিয়া এই মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্লোগান দিয়েছেন সচিবকে অপসারণ চেয়ে।

প্রচার সম্পাদক সেলিম মিয়া বলেন, ‘সচিবের আচরণের জন্য আমরা আজ আমাদের বোনকে হারালাম। অফিসের সবাই তার ভয়ে তটস্থ। শোকজের ভয়ে অসুস্থ শরীরেও নাজমা এসেছিল। সে ছুটি পায়নি। আমরা কেউ তার পাশে থাকতে পারিনি তার (সচিব) জন্য। তার স্বামী এসে হাসপাতালে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। উচিৎ ছিল আমাদের সহকর্মীদের তাকে হাসপাতালে নেওয়া, কিন্তু আমরা তা পারিনি।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মচারীদের সঙ্গে একাত্মতা ছিল অন্য কর্মকর্তাদেরও। তারা আন্দোলনে সরাসরি না থাকলেও নেপথ্যে ছিলেন। ক্রীড়া পরিষদে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তাই সচিব আমিনুল ইসলামের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডে নাখোশ। এনএসসিতে সচিবের পাশাপাশি চারজন পরিচালক রয়েছেন। যারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাও। তাদের দুই-একজনকে এবং নিচের স্তরের অনেককে শোকজ-সতর্ক এবং পরামর্শমূলক চিঠি দিয়েছেন সচিব। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কর্মরত অনেকের মন্তব্য, সচিব চেয়ার-টেবিলে লাথি দেন ও অনেক সময় অসংলগ্ন মন্তব্য ও আচরণ করেন।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম উত্থাপিত অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, ‘এক সহকর্মীর বিদায়ে আমরা ব্যথিত। বিষয়টি শোনামাত্রই ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারের জন্য প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশনা দিয়েছি, পাশাপাশি তিনি আমাদের স্টাফ হওয়ায় আর্থিক সুবিধাদির বিষয়টিও দেখার কথা বলেছি। প্রথমত তার ছুটি মঞ্জুরকারী আমি নই। তার ছুটির চাহিদা নিয়ে মোটেও অবগত ছিলাম না। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা অনেক পিছিয়ে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সচেষ্ট থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে পরামর্শমূলক সর্তকতা চিঠি দেওয়া হয়েছে। অফিস পরিচালনায় শৃঙ্খলার স্বার্থে পোষাক ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ে নিয়ম-নীতির অনুসরণ করতে বলা হয়। এর বেশি কিছু বলা মানে সেটা বাড়িয়ে বলে আমার প্রতি অবিচার করা।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাধারণত হেলেদুলে কাজ করতে অভ্যস্ত। সকালে অফিস থাকলেও তারা আসতেন দুপুরের পর, অনেক সময় আসতেনও না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সদ্য বিদায়ী সচিব পরিমল সিংহ কঠোর হাতে অফিসের সময়সূচি পালনে সকলকে বাধ্য করেছেন। এরপর এতে অভ্যস্ত হয়েছেন অনেকেই। পরিমল সিংহ জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন। পরিমলের স্থলাষিভিক্ত হওয়া আমিনুল ইসলাম তিন মাসের মধ্যে ছুটিতেই ছিলেন এক মাস। মাত্র দুই মাসের মধ্যেই নতুন সচিবের কর্মকাণ্ড এবং বিশেষত আচরণ অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ।

আজ দুপুরের পর থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে তৈরি হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব (ক্রীড়া) সানাউল হক আসেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। তার সামনে ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সকল অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করতে বলেন, ‘আমরা আপনাদের বক্তব্য মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে অবহিত করব। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। মন্ত্রী ও সচিবের ওপর আপনারা ভরসা রাখেন।’

ইউনিয়নের অনেক নেতার কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আওতাধীন নির্মাণ কাজে এই ইউনিয়নের দুয়েকজনের বড় ভূমিকা থাকে। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও তারা আর্থিকভাবে বেশ স্বচ্ছল।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালযের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। যার চেয়ারম্যান যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী। ভাইস চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব হিসেবে দাপ্তরিক প্রধান হিসেবে কাজ করেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে সকল ফেডারেশন, জেলা-বিভাগীয় সংস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নতুন মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন প্রায় তিন মাসের বেশি সময়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে তিন-চার দিনের বেশি আসেননি।

এজেড/এএইচএস