জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও লিগের পরই ঘরোয়া টেবিল টেনিসে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ। ২০২১ সালের পর এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে এই আসর। তিন বছর পর হওয়া ফেড কাপ টিটিতে প্রথমবারের মতো নারী ও পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন খৈ খৈ মারমা ও মুনতাহাসিন আহমেদ হৃদয়। 

খৈ খৈ ফাইনালে হারিয়েছেন একাধিকবার নারী ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া সোনাম সুলতানা সোমাকে। ফাইনাল ছিল একেবারে ফাইনালের মতোই। ৩-২ গেমে সোমাকে হারিয়ে শিরোপা জেতেন খৈ খৈ। প্রথম গেমে ১১-৪ পয়েন্টে জেতেন খৈ খৈ। পরের গেমে ১১-৯ পয়েন্টে সমতা আনেন সোমা। তৃতীয় সেট আবার ১১-৪ পয়েন্টে জিতে লিড নেন খৈ খৈ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চতুর্থ সেট ১১-৯ পয়েন্টে জিতে আবার সমতা আনেন সোমা। পঞ্চম ও শেষ সেটে সোমা প্রথমে লিড নিলেও পরবর্তীতে খৈ খৈ এগিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ১১-৭ পয়েন্টে জিতে প্রথমবার ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হন।

ফাইনালের আগে খৈ খৈ সেমিফাইনালে হারিয়েছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মৌকে। সেই জয়ই তার ফাইনালের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, 'আমার সেমিফাইনাল মৌয়ের সাথে ছিল, যিনি এখন বাংলাদেশের এক নাম্বার। তো ওনার সাথে জিতে আমার কনফিডেন্স চলে আসছিল যে আমি ফাইনালে ভালো খেলতে পারব। তো আমি কনফিডেন্স নিয়ে নামছিলাম যে আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করব। আমার টার্গেট ছিল যে আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তো আমি জয়ী হতে পেরেছি।'

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে টার্নিং পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন খৈ খৈ বলেন, 'সার্ভিস রিসিভে ওনার একটু সমস্যা হয়েছিল, আর আমার রাবার যেহেতু ওনাদের থেকে আলাদা। তো এখানে আর কি একটু ঝামেলা ছিল, এই জন্য আর কি আমি সার্ভিস, সার্ভিস রিসিভে অ্যাডভান্টেজ পাইছি।'

সোমা ও মৌ দুই জন জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট/লিগে একাধিকবারের চ্যাম্পিয়ন। গত বছর লিগে খৈ খৈ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এবার ফেডারেশন কাপে হলেন। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন মনে করছেন খৈ খৈ, 'আসলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যত কঠিন, তো চ্যাম্পিয়ন ধরে রাখা তার চেয়ে আরো কঠিন। তো সামনে চেষ্টা করব আমি যেন চ্যাম্পিয়নশিপটা ধরে রাখতে পারি। এখনো আমি উনাদের মতো এখনো ভালো হইতে পারি নাই। কারণ উনারা আমার চেয়ে অনেক বেশি গেমস খেলছে। অনেক মানে অভিজ্ঞ আমার চেয়ে অনেক। আমার আমি ছোটবেলা থেকেই উনাদের দেখে আসছি। তো আমি চেষ্টা করব আরো ভালো করার।'

নারী এককের ফাইনাল অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলেও পুরুষ এককে তেমন লড়াই হয়নি। হৃদয় সরাসরি ৩-০ গেমে রামহিমকে পরাজিত করেন। প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে হৃদয় বলেন, 'অনেক ভালো অনুভব করছি। যেখানে মানসদা পাঁচবার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন, তাকে আমি ন্যাশনালে হারাইছি ১৮ বছর ১৪ বছর বয়সে। তো ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে আমার ভালো লাগছে।'

রামহিম বাংলাদেশের টেবিল টেনিসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সেই রামহিমকে হৃদয়ের বিপক্ষে আজ লড়াই-ই করতে পারেনি। এ নিয়ে হৃদয়ের মন্তব্য, 'রামহিম অনেক ভালো প্লেয়ার, হ্যাঁ, ও হয়তো কোনো কারণে একটু টায়ার্ড মনে হইছে আমার কাছে। ও একটু আরকি কম খেলতে পারছে। যে যেই সেমিফাইনালে যে ফোর্সে খেলছে, ফাইনালে সেই ফোর্সে খেলতে পারেনি সামহাও। দ্যাটস হোয়াই আমার জন্য একটু ইজি হইছে ম্যাচটা।'

৫ নভেম্বর বাংলাদেশ টেবিল টেনিস দল ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে যাচ্ছে। দুই চ্যাম্পিয়ন খৈ খৈ ও হৃদয় দুই জনই এই টুর্নামেন্টকে ইসলামিক গেমসের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন, 'আসলে মেইন টার্গেট ছিল ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে আসলে অনেক ভালো ভালো টিমই আসবে সেখানে। ইসলামিক অনেক কান্ট্রি, যেমন ইরান আছে, ইরাক আছে, কাজাখস্তান আছে, বিভিন্ন কান্ট্রি আসবে। তো আমরা ট্রাই করব সেখানে আমাদের বেস্টটা দিয়ে দেশকে একটা পদক নিয়ে আসার ইনশাআল্লাহ। টিমস ইভেন্ট আছে, ডাবলস ইভেন্ট আছে, সিঙ্গেলস ইভেন্ট আছে, মিক্সড ডাবলস ইভেন্ট আছে। যেকোনো এক জায়গায় আমরা চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ পদক নিয়ে আসার। আগেরবার আমরা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিলাম। চেষ্টা করব এবার সেমিফাইনাল খেলার ইনশাআল্লাহ।'

সম্প্রতি ফেডারেশন ২৫ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের কোচ পাসারাকে এনেছিল। তার অধীনে দুই মাস অনুশীলন করেছেন খেলোয়াড়রা। থাই কোচের অনুশীলনের পর নিজেদের পারফরম্যান্সের প্রভাব নিয়ে খৈ খৈ ও হৃদয় বলেন, 'উনার (থাইল্যান্ড কোচ) মাধ্যমে উন্নতি হয়েছে। তিনি অনেক ভালো প্র্যাকটিস পার্টনার। তার সাথে গেম খেলে খেলে অনেক উন্নতি হয়েছে।'

ফেডারেশন কাপ টিটি নারী, পুরুষ একক ও দলগত খেলা ছিল। কোনো বিভাগে দ্বৈত এবং মিশ্র দ্বৈত ছিল না। পুরুষ দলগত, একক ও নারী এককে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী দলগত বিভাগে শুধু আনসার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। 

এজেড/এইচজেএস