দাবা ফেডারেশনের জায়গা সংকট বহু পুরনো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের তৃতীয় তলায় তিনটি কক্ষ ও একটি হল রুম মাত্র বরাদ্দ ফেডারেশনের জন্য। প্রশাসনিক কক্ষ ও মিটিং রুমের মাঝে ছোট্ট একটি আবাসন কক্ষ রয়েছে। সেই কক্ষে দুটি মাঝারি খাট, ছোট্ট একটি ফ্রিজ এবং কিছু আসবাবপত্র। চলমান প্রথম মহিলা দাবা লিগে সেই কক্ষে থেকেই খেলছেন দাবার ‘রাণী’ রাণী হামিদ।

শুধু এই মহিলা লিগে নয়, গত কয়েক বছর ধরে দাবা প্রতিযোগিতা হলের এই কক্ষেই নিবাস রাণী হামিদের। ৭৭ বছর বয়স হলেও দাবার জন্য পরিবার ছেড়ে টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় এভাবে থাকাকে মোটেও কষ্ট হিসেবে মানতে নারাজ রাণী হামিদ, ‘কষ্ট নয়, এখানে স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকি। আগে বাসা থেকে আসা যাওয়া করে খেলতাম। ঢাকায় তীব্র যানজটে আসা যাওয়া কষ্টকর। এর চেয়ে এখানে থেকে খেলা আরাম।’ 

দাবা ফেডারেশন পল্টনে আর রাণী হামিদের বাসা বনানী ওল্ডডিওএইচএসে।  বনানী থেকে পল্টন খুব বেশি দূরের পথ না হলেও যানজটে অনেক সময় কেড়ে নেয়। দাবা খেলা সাধারণত শুরু হয় বিকেল ৩টায়। অনেক সময় রাত ৭-৮ টা পর্যন্ত চলে। প্রতিদিন যানজট ঠেলে মধ্যরাতে বাসায় যাওয়া আবার সকালে জ্যাম ঠেলে দুপুরে ফেডারেশনে আসা কষ্টসাধ্য। 

সত্তরের উপর বয়স। এই বয়সে পরিবার থেকে দূরে থাকা কিছুটা ঝুকিপূর্ণও। কিন্তু দাবাকেই নিজের আরেক পরিবার হিসেবে দেখেন রাণী, ‘আমার স্বামী (মরহুম আব্দুল হামিদ) মারা যাওয়ার পর এবং যানজটের তীব্রতা থেকেই এখানে থাকা শুরু করি। পরিবার বিষয়টি আমার উপরই ছেড়েছে। এখানে আমি একা নই, আরো দুই-তিন জন মেয়ে থাকে। একসঙ্গে ভালোই সময় কেটে যায়।’ পরিবারের বাইরে থাকা মানে খাওয়া-দাওয়া আলাদা ব্যবস্থা। ফেডারেশনে স্বল্প পরিসরে নিজে রাঁধেন আবার জুনিয়ররাও দাবার রাণীকে বিশ্রামে রেখে রাঁধার দায়িত্ব নেন। 

রাণী হামিদের স্বামী কর্ণেল হামিদ বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেরও শীর্ষকর্তা ছিলেন। বনানী ডিওএইচএসে নিজেদের বাড়ি হামিদ পরিবারের। এক বাড়ির বিভিন্ন তলায় থাকেন তিন ছেলে। সাবেক স্কোয়াশ খেলোয়াড় ছেলে সোহেল হামিদের সঙ্গেই থাকেন রাণী হামিদ। মায়ের ফেডারেশনে থাকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আম্মার স্বাচ্ছন্দ্যই আমাদের কাছে বড় বিষয়। তিনি দাবায় সম্পূর্ণ মনোযোগ রাখতে চান। টুর্নামেন্টের সময় প্রতিদিন যাতায়াত আম্মার জন্য একটু কষ্ট হতো এর চেয়ে ফেডারেশনে থাকাই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং ভালো খেলেন বলে মনে করেন।’

রাণী হামিদের আরেক সন্তান কিংবদন্তি ফুটবলার কায়সার হামিদ। এই বয়সে মায়ের খেলার প্রতি টানকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন, ‘খেলাধূলা একটা সাধনা ও ভালোবাসার বিষয়। আম্মা এই বয়সেও দাবাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেন। আমরা পরিবার থেকে সবসময় তার পাশে থাকি। আশা করি আম্মা সুস্থ থেকে আরো খেলে যাবেন।’

সোহেল হামিদ স্কোয়াশ ফেডারেশন ও কায়সার হামিদ মোহামেডানের সঙ্গে যুক্ত। সপ্তাহে দু-তিন দিন তাদের স্টেডিয়াম ও ক্লাবপাড়ার দিকে আসা হয়। দাবা লিগ বা টুর্নামেন্ট চললে নিয়ম করে মাকে দেখে যান। তাদের আরেক ভাই ববি হামিদও আসেন। তিনি কোনো ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে ববি হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ছিলেন।  

এজেড/এটি/টিআইএস