দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। খুব অল্প স্থলভাগ থাকা দেশ থেকেই উঠে এসেছেন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুততম মানব হাসান সাঈদ। ২০১৯ এসএ গেমসে তিনি মালদ্বীপকে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণ এনে দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকস নিয়ে।

ঢাকা পোস্ট : সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। এত জনবহুল অঞ্চলে আপনি দ্রুততম মানব। কেমন লাগে?

সাঈদ: অবশ্যই দারুণ লাগে। প্রায় দুই বছর হতে চলছে গেমসের। কিন্তু এখনো মানুষ আমাকে দ্রুততম মানব হিসেবে ডাকে। শুধু মালদ্বীপ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই। এটা আমার জন্য দারুণ গর্বের।

ঢাকা পোস্ট : ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এক সময় বাংলাদেশের দাপট ছিল। তবে একুশ শতাব্দীতে সেই দাপটটা শ্রীলঙ্কার। আপনি কীভাবে নিজেকে সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন?

সাঈদ: আমি ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছি। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছি এরপর গৌহাটিতে রৌপ্য। সর্বশেষ গেমসে স্বর্ণ। ২০১৬ সালের পরই ঠিক করি আমার পক্ষে স্বর্ণ জেতা সম্ভব। এরপর খুব অনুশীলন করেছি।

ঢাকা পোস্ট : ২০১৬ সালের পর থেকে নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন?

সাঈদ : আসলে আমার ক্যারিয়ার ভিন্নতা পায় ২০১৩ সালের পর থেকেই। কারণ আমি জ্যামাইকায় একটি স্কলারশিপ পাই। সেই স্কলারশিপই আমাকে বদলে দিয়েছেন বলতে পারেন। আমি সেই স্কলারশীপের মাধ্যমে বোল্ট, ব্লেকদের মতো কিংবদন্তির সংস্পর্শ পেয়েছিলাম। বোল্টের সঙ্গে অনুশীলনও করেছি।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম কিংবদন্তির সঙ্গে কাটানো সময়গুলো কেমন ছিল?

সাঈদ: সে খুবই মজার মানুষ। বিশেষ করে জুনিয়রদের অনেক উৎসাহ দেয়। তার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সে কঠোর পরিশ্রমী। তার কাছ থেকে সফল হওয়র আগে পর্যন্ত পরিশ্রম করার মানসিকতা আমি পেয়েছি।

ঢাকা পোস্ট : বোল্ট তো ফুটবলপ্রেমি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক। আপনি?

সাঈদ : ফুটবল নিয়েও তার সঙ্গে অনেক আলাপ আলোচনা হয়েছে। সে ম্যানচেস্টারের অন্ধভক্ত। বোল্ট ফুটবলটাও ভালো বুঝে ও খেলে। আমি অবশ্য বার্সেলোনার ভক্ত।

ঢাকা পোস্ট : জ্যামাইকায় অনুশীলন ও বোল্টদের সংস্পর্শ আপনার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়ার অন্যতম রহস্য?

সাঈদ: অনেকটা বলা যায়। যে কোনো খেলায় উন্নতি প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। অ্যাথলেটিক্সের মতো খেলায় নিবিড় প্রশিক্ষণ করতে হয়। মালদ্বীপ অলিম্পিকের মাধ্যমে আমি জ্যামাইকায় বৃত্তি পাই। সেখানে বোল্ট ও বিশ্বসেরাদের সঙ্গে অনুশীলন করায় আমার অনেক উন্নতি হয়। প্রথম বছর আমার খরচ মালদ্বীপ অলিম্পিক বহন করেছিল। আমার টাইমিংয়ের উন্নতি হওয়ায় পরবর্তী তিন বছর আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস সংস্থা আমার খরচ বহন করে। জ্যামাইকার চার বছর আমি অনেক কিছু শিখেছি।

ঢাকা পোস্ট : দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে জ্যামাইকার অনুশীলনের পার্থক্য কী?

সাঈদ: খুব বেশি পার্থক্য নেই। ওখানে অনুশীলন আর অনুশীলন, অনুশীলনই প্রথম ও শেষ কথা।  

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ এক সময় অ্যাথলেটিক্সে বিশেষ করে আপনার ইভেন্টে রাজত্ব করত। এখন অবশ্য ১০০ মিটারে কোনো পদক নেই গত কয়েক আসরে। বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

সাঈদ : এসএ গেমস ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশি অ্যাথলেটদের সঙ্গে দেখা হয়। বিভিন্ন আসরে বিভিন্ন জনকে দেখেছি। আমার দৃষ্টিতে  আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে এক-দুই জন অ্যাথলেটকে নিয়মিত রাখা উচিত। আমি ধারাবাহিক খেলে গেছি এজন্য সাফল্য পেয়েছি। বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা বোল্টদের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে অনুশীলন বা মেশার সুযোগ পেলে তারাও ভালো করবে।

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের দ্রুততম ইসমাইল। সে তো টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে না পেরে ফেডারেশনের সমালোচনা করে এখন এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ...

সাঈদ: তাই নাকি। টোকিও অলিম্পিকে আমার সঙ্গে বাংলাদেশের একজনের দেখা হয়েছিল। সে অবশ্য ৪০০ মিটারে খেলেছে। আমি জানি না কেন কী কারণে দেশের দ্রুততম মানবকে বহিষ্কার এক বছরের জন্য। আমিও একজন দ্রুততম মানব। আরেক জন দ্রুততম মানবের এমন ঘটনা শুনে ব্যথিত। ফেডারেশনগুলোর এই বিষয়ে আরো যত্মবান হওয়া উচিত।

ঢাকা পোস্ট : মালদ্বীপে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল। আপনি ফুটবলে না ঝুঁকে অ্যাথলেটিক্সে আসলেন কীভাবে?

সাঈদ : অবশ্যই মালদ্বীপে জনপ্রিয় ফুটবল। আমিও অন্য সবার মতো ফুটবল ভালোবাসি। স্কুলে আমি অ্যাথলেটিক্সে অংশ নিতাম। শিক্ষকরা আমাকে অ্যাথলেটিক্স করতে মনোযোগী হতে বলে। তখন থেকে আমি অ্যাথলেটিক্সে যাই এবং ভালো করি।

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশে অ্যাথলেটিক্সে একটু দুর্দশা। অ্যাথলেটরা তেমন অর্থকড়ি পায় না, ইনজুরিতে পড়লে ক্যারিয়ার শেষ। সবার ভাগ্যে চাকরিও জুটে না। অবসরের পরও নানা বিড়ম্বনা। এজন্য ভালো অ্যাথলেটও আসে না। মালদ্বীপের কী অবস্থা?

সাঈদ: মালদ্বীপে যারা জাতীয় অ্যাথলেট তাদের সরকার মাসিক ভাতা দেয়। সেই ভাতার অঙ্ক মোটামুটি স্বচ্ছলই বলা যায়। আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলতে পারছি। জাতীয় খেলোয়াড়রা অবসরের পরও ভাতা পায়।

ঢাকা পোস্ট : আপনার বয়স এখন প্রায় ৩০ বছর। কোথায় নিজেকে রেখে অবসর নিতে চান এবং অবসর পরের পরিকল্পনা কী?

সাঈদ: আমি প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি কোয়ালিফাই করতে চাই। সেই লক্ষ্যে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি। অবসরের পর আমি তরুণ খেলোয়াড়দের তৈরি করতে চাই্। কোচিং করব এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

ঢাকা পোস্ট : আপনি অনেক কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। আপনার জনপ্রিয়তা তো অনেক...

সাঈদ: ২০১৯ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের পর সরকার থেকে আমাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়। আর্থিক সম্মাননাও ছিল। অনেক কোম্পানি আমাকে দূত বানায়। ভালোই উপভোগ করি।

ঢাকা পোস্ট : আলী আশফাক সাফ ফুটবল জিতেছে আপনি দেশের হয়ে এসএ গেমসে প্রথম স্বর্ণ জিতেছে। আপনি নাকি আশফাক কে বেশি জনপ্রিয়?

সাঈদ: আশফাক এ দেশের সকল খেলোয়াড়দের কাছেই কিংবদন্তি। তার উচ্চতা অনন্য। আমিও তার খুব বড় ভক্ত। সে আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

এজেড/এমএইচ