বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের চালিকা শক্তি ফেডারেশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো। এই সংগঠনগুলোর দেখভাল করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হলেও প্রশাসনিক কাজের প্রধান সচিব। এই পদে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট মেয়াদের (সাধারণত ৩ বছর) জন্য আসেন আবার বদলি হয়ে যান। 

এই আসা-যাওয়ার পালাক্রমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবার প্রথমবারের মতো সচিব হিসেবে পেয়েছে একজন আদিবাসীকে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ১৫তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার পরিমল সিংহ গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব হিসেবে যোগদান করেছেন, তিনি একজন মণিপুরী।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আদিবাসীদের সম্পৃক্ততা ও অবদান অনেক। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। যেখানে পুরুষ ফুটবল ব্যর্থ সেখানে নারী ফুটবল অনূর্ধ্ব পর্যায়ে এশিয়ার সেরা আট দলের একটি। সেরা আট হওয়ার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা ছিল আদিবাসী নারী ফুটবলারদের। কাঠমান্ডু দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণ এনেছিল দীপু চাকমার মাধ্যমে। এ রকম অনেক ডিসিপ্লিনে আদিবাসীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। 

দীপু-মারিয়াদের মতো আরো অনেক মেধাবী আদিবাসী রয়েছেন কিন্তু তারা সেই মেধা বিকশিত করার সুযোগ পান না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রথম আদিবাসী সচিব পরিমল সিংহ এই বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে চান, ‘শুধু আদিবাসী নয়, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীরা যেন ক্রীড়াঙ্গনে সমান সুযোগ পায় নিজেদের বিকশিত করার আমার পক্ষ থেকে সেই প্রচেষ্টা থাকবে।’

পরিমল আগে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে। ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত হলেন এবার। অল্প দিনেই ক্রীড়াঙ্গনে মানিয়ে নেয়ার কথা বললেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ক্রীড়াপ্রেমী। আমরা ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছি খেলাধূলার মাধ্যমে। এখানে আমি মাত্র দুই দিন হলেও আশা করি ভালো সময় যাবে।’ 

সচিব হিসেবে মূলত সরকারের নীতি-পরিকল্পনা বাস্তবায়নই মূল কাজ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব হয়ে সরকারের নীতি অনুসরণ করার কথাই বললেন পরিমল, ‘সরকার ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাতেই মূলত পরিচালিত হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সরকারের নীতিগুলো বাস্তবায়ন করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। এই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ভিন্ন মাত্রা পাবে।’

খেলাধূলা বিনোদন ও উপভোগের বিষয় হলেও এখানে অনেক অর্থ-বিনিয়োগ-কূটনীতির বিষয় রয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে কনো সংগঠনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি যতটুকু শুনেছি এই সংগঠনে এই উপাদানগুলো যথেষ্টভাবে রয়েছে। তবে আমি বিশেষভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা করব।’

রিমল সিংহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোটানীতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের পর মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। মেহেরপুর জেলার প্রশাসক ছিলেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সর্বশেষ সচিব মাসুদ করিম অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন সম্প্রতি। 

এজেড