ছোট জেলা নড়াইল। চিত্রা নদীর পাড়ে জেলা শহরটি আরও ছোট্ট। এখানকার ‘বিশালতা’ জাতীয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। এই চিত্রার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। জাতীয় দলের ক্রিকেটার, অধিনায়কের পর এখন নড়াইলের একটি আসনের সংসদ সদস্যও তিনি।

জাতীয় সংসদ হলেও নড়াইল সদরে মাশরাফির বাড়িটি ক্রিকেটময়। পৈতৃক বাড়িটিকে খুব বড় অট্টালিকা না করে মাঝারি আকারে সুন্দর ছিমছাম ভাবে সাজিয়েছেন। 

বাড়ির বাইরে মাশরাফির ছবির এক প্রতিকৃতি। ভেতরের মূল ফটকে প্রবেশ করার পরই তার বিভিন্ন অর্জন সম্বলিত ছবির সমাহার। জাতীয় দলের অধিনায়ক, সংসদ সদস্য হলেও সাধারণ ড্রয়িং এবং ডাইনিং রুম। নিচতলায় রয়েছে আবাসিক এক কক্ষ ও কিচেন। দ্বিতীয় তলায় মূলত মাশরাফি ও তার পরিবার থাকেন। 

মাশরাফি ও মোরসালিন দুই ভাই। ছোট ভাই মোরসালিনের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান ১০ বছর হলেও সম্পর্কটা বন্ধুর চেয়েও বেশি। নিজের ভাইকে নিয়ে গর্বিত মোরসালিন, ‘আমি এমন একজন মানুষের ভাই এটা আমার জন্যে খুবই গর্বের।’ ক্রিকেটার মাশরাফির চেয়ে মানুষ মাশরাফি আরও অনেক বড় মোরসালিনের কাছে, ‘ক্রিকেটার বা ক্রীড়াবিদ হিসেবে একটা সময়ের জন্য। মানুষ হিসেবে সারাজীবন। আমার কাছে ব্যক্তি মাশরাফি ক্রিকেটার মাশরাফির চেয়ে অনেক অনেক বড়।’ 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিষয় নিয়ে হঠাৎ উত্তপ্ততা ছড়ায়। নড়াইল যেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দারুণ এক প্রতিচ্ছবি। নড়াইলের সন্তান মোরসালিন বলেন, ‘আমার ঘনিষ্ঠ ১০ জন বন্ধুর মধ্যে সাত-আট জনই সনাতন ধর্মের। ভাইয়ারও তাই। আবার অনেক সনাতন ধর্মের বন্ধুর কাছে আমি ও ভাইয়া তাদের সেরা বন্ধু। আমি ও ভাইয়া না শুধু, নড়াইলে আমরা, আমাদের আগের ও পরের প্রজন্মের সবাই এভাবে বেড়ে উঠে।’

নড়াইল মানেই চিত্রা নদী। তবে আগের সেই চিত্রা নেই। এজন্য খানিকটা আফসোসের সুর মাশরাফির ভাইয়ের কণ্ঠে, ‘আমরাও চিত্রার যৌবন কিছুটা পেয়েছি। ভাইয়ারা আরো বেশি। ছোটবেলায় ভাইয়ার অনেক সময় কেটেছে এই চিত্রা নদীতেই। এখন সেই নদী অনেক ম্রিয়মাণ।’
 
এখন নড়াইলের পরিচয় ক্রীড়াঙ্গনে মাশরাফির নড়াইল হলেও এক সময় টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলাতেও ছিল অনেক সাফল্য। সেই নড়াইল এখন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে ভাইয়ের মাধ্যমে আশায় বুক বাধছেন মোরসালিন, ‘ভাইয়া নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সমাজ ও ক্রীড়াঙ্গনে কিছু কাজ করার চেষ্টা করছেন। নড়াইল ডিএসএ তাদের মতো করে কাজ করছে জেলা ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য।’ 

মাশরাফি সব সময় বন্ধুবাৎসল। এমপি হওয়ার পরেও সেই আগের মাশরাফিই আছেন, ‘ভাইয়া অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। মাসে যেকোন এক সময় নড়াইল আসেন। নড়াইল আসলে গ্রামের দিকে বেশি সময় কাটান। বন্ধুদের সঙ্গে এখনো সেই আগের আড্ডায় মাতেন।’ 

এমপি হওয়ার আগে মাশরাফি নড়াইল আসা মানে তার বাসায় বন্ধুদের আড্ডা। এমপি হওয়ার পর ড্রয়িংরুম শান্ত হয় রাত দুটো তিনটার পর। মাশরাফির আসন ছাড়াও অনেকেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাড়িতে আসেন। করোনার সময় পরিস্থিতি অনেকটা এমনই ছিল, ‘আসলে সত্যিকার অর্থে ওই সময়েও আমাদের বাসায় মানুষ আসতো প্রায়ই।’

অনেক সময় খ্যাতির বিড়ম্বনায় পোহাতে হয় পরিবারকে। তবে মাশরাফির পরিবার এতেই ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা খুঁজে পান, ‘নড়াইলের মানুষের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই। বাবা নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বিশ বছরের বেশি সময়। মানুষের ভালোবাসায় আমার প্রিয়। এভাবেই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’ 

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের পরিবার সংশ্লিষ্ট অনেকেই ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করছেন। নিজে এক সময় খেলোয়াড় থাকলেও ক্রিকেট নিয়ে মন্তব্য করা থেকে দুরে থাকতে চান মোরসালিন, ‘হারলে আমাদের চেয়ে বেশি খারাপ খেলোয়াড়দের লাগে। তাদের সমালোচনা করার প্রকৃত যোগ্য লোক আমরাও না। তাই আমি শুভ কামনা ও সমর্থন ছাড়া তেমন মন্তব্য প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি না।’ 

মাশরাফি যেমন জনদরদী। তার ভাইয়ের হৃদয়ও অনেকটা তাই, ‘ক্রিকেটের পাশাপাশি দেশের আরও অনেক খেলা আছে। সেই খেলার খেলোয়াড়রা দেশের জন্য লড়ে। তাদের সুযোগ সুবিধা সম্মান মর্যাদা আরও বাড়ালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তারাও দেশকে আরো অনেক কিছু দিতে পারবে।’

মোরসালিনও মাশরাফির মতো ঢাকাতেই থাকেন বেশি। আগে মাশরাফির সঙ্গেই থাকতেন। বিয়ের পরও মোরসালিন ভাইয়ের সান্নিধ্যেই রয়েছেন। ঢাকায় মাশরাফি ও মোরসালিনের বাসার দুরত্ব দুই মিনিটেরও কম সময়ের।

এজেড/এমএইচ