ফিনিশিং লাইন ক্রস করার পর আর্মি স্টেডিয়ামে উল্লাস। নতুন এক অ্যাথলেটকে নিয়ে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডদের উৎসাহের কমতি নেই। লন্ডন থেকে এসেই ২৮ বছর বয়সী ইমরানুর রহমান ২২ বছর আগের ১০০ মিটারে মাহবুবের ১০.৫৪ টাইমিংয়ের রেকর্ড ভেঙে দিলেন। ১০.৫০ টাইমিং করে তিনি নতুন রেকর্ড গড়েছেন। 

দুই দশক আগের রেকর্ড ভাঙায় মিডিয়া, কর্মকর্তা সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও ইমরান খানিকটা নির্ভার, ‘আমি দেশের জন্য খেলতে এসেছি। আমি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদক এনে দিতে চাই।’ 

১৯৯২ সালে ইমরানের বাবা ইংল্যান্ড গিয়েছেন। তার বাবা-মা দুই জনই বাংলাদেশি তারা এখন ইংল্যান্ডে স্থায়ী। ইংল্যান্ডে থাকলেও বাংলাদেশের প্রতি টান রয়েছে ইমরানের, ‘আমি দ্বৈত নাগরিক। বাংলাদেশ আমার দেশ। বাংলাদেশকে অ্যাথলেটিক্সে আমি কিছু দিতে চাই, এজন্যই আসা।’ 

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের জন্য তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে এসেছেন। আবার সামনের সপ্তাহেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। লন্ডন গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে তার, জানান তিনি। বলেন, ‘আমার সাথে ফেডারেশনের বিশেষ করে মন্টু ভাইয়ের যোগাযোগ থাকবে। বাংলাদেশের কোনো খেলা বা টুর্নামেন্ট থাকলে আমি খেলব। আমার অনুশীলন ইংল্যান্ডেই হবে।’ 

ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে থাকেন ইমরান। সেখানে ইংলিশ কোচ স্টিভসের অধীনে করেন অনুশীলন। ইংল্যান্ডে ফুটবল, ক্রিকেট জনপ্রিয় থাকলেও দৌড়ের প্রতি তার ঝোঁক অনেক, ‘ফুটবলও ভালো লাগে। তবে দৌড়টা বেশি পছন্দ করি। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ছাড়াও ইনডোর ৬০ মিটার আমি ভালো করি।’

ইমরানের বয়স ২৮ হলেও তার উপর ভরসা রাখতে চান অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, ‘আমরা দেশ ও দেশের বাইরে মেধাবী অ্যাথলেট খুজেছি। তার সন্ধান পাওয়ার পরই দেশে এনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে কাজ করেছি। তার মাধ্যমে এশিয়ান পর্যায়ে পদক আনা সম্ভব।’

ইমরানের যে টাইমিং এতে দক্ষিণ এশিয়ার স্বর্ণপদক জয় অসম্ভব কিছু না। দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব সাঈদের টাইমিং ১০.৪৯। ইমরান তার চেয়ে ০.০১ সময় পিছিয়ে। তিনি এটাকে দুর্ভেদ্য মনে করেন না এই অ্যাথলেট, ‘আমি অনুশীলনের মধ্যে থাকলে এর চেয়ে ভালো টাইমিং করতে পারব আশা করি। ভালো লাগছে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় টুর্নামেন্টে এসেই পদক জিততে পেরে।’

গত এক দশকে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে প্রবাসী বাংলাদেশি এসেছিলেন দেশের হয়ে খেলতে। ফুটবলে জামাল ভূঁইয়া ছাড়া বাকিরা তেমন থিতু হতে পারেননি। কয়েক মাস যাবৎ অ্যাথলেটিক্সে ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ইমরান সেই আলোচনাকে আশায় রুপান্তর করেছেন আজকের জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতে। 

এক সময় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের ১০০ মিটারে বাংলাদেশ স্বর্ণ জিততো। ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরান আজকের পারফর্ম্যান্সে হারানো দিন ফিরিয়ে আনার, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা দেখালেন। ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে টাইমিং নির্ভর খেলাগুলোতে টাইমিং নিয়ে ঝামেলা হয়ই। এবার ভারত থেকে ফটোফিনিশিং এনেছে ফেডারেশন। সেই অনুযায়ী ইমরানের টাইমিং ১০.৫০। 

ফেডারেশনের ট্যাকনিক্যাল কমিটির প্রধান ফারুকুল ইসলাম প্রথম দিকে ইলেকট্রনিক টাইমিং নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তার যুক্তি ছিল ইলেকট্রনিক টাইমিং হতে হলে বন্দুকের মাধ্যমে স্টাটার হতে হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে বসে তিনি দেখেছেন কাঠের স্টাটার থাকলেও সেন্সর সঠিক সময় কাজ করে। ভারতীয় টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে আলোচনার পর ইলেকট্রনিক রেকর্ড ঘোষণা হয়। 

এজেড/এনইউ