গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনী প্রথা শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সাল থেকে। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন পুরোপুরি ‘অ্যাডহকমুক্ত’ হয়নি। অনেক ফেডারেশন-ক্রীড়া সংস্থা অ্যাডহক কমিটি নির্ভর। আবার অনেক সময় নানা মুখী চাপে ও সমীকরণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে।

অ্যাডহক কমিটির মূল দায়িত্ব দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ। অনেক ক্ষেত্রে সেই অ্যাডহক কমিটির সদস্যরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। চলমান ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন নির্বাচনে অনেক প্রার্থী বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সদস্য। সম্প্রতি কাবাডি ফেডারেশনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন এদের অনেকে ছিলেন অ্যাডহক কমিটিতে। বিগত সময়ে এ রকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।

ফেডারেশনের মতো জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাতেও অনেক কারণে অ্যাডহক কমিটি হয়। সেই কমিটিতে যারা থাকেন তারা নির্বাচন করতে পারেন না গঠনতান্ত্রিক আইনের জন্য। জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায় এ রকম থাকলেও ফেডারেশনগুলোতে ভিন্ন চিত্র। অ্যাডহক কমিটিতে যারা থাকছেন তারাই আবার নির্বাচনে অংশ নেন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন নেই। 

ফেডারেশন-জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি )। অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের এই দ্বৈতনীতি সম্পর্কে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইন কর্মকর্তা কবিরুল হাসানের ব্যাখ্যা, ‘সকল উপজেলা,জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার একটি কমন গঠনতন্ত্র রয়েছে। সেই গঠনতন্ত্রের আলোকে অ্যাডহক কমিটি সাত সদস্য বিশিষ্ট হয় এবং এদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারার বিষয়টিও উল্লেখ্য। ফেডারেশনগুলোর জন্য মডেল বা কমন গঠনতন্ত্র নেই। ফলে অ্যাডহক কমিটির আকার এবং এখান থেকে নির্বাচন করার যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি অনুপস্থিত।’ 

জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি থেকেও নির্বাচন করছেন অনেকে। নির্বাচনের আগে অ্যাডহক কমিটি থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হওয়ার ঘটনা কম নয় জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। অ্যাডহক কমিটির কেউ নির্বাচন করতে পারবে না গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকলেও সেই কমিটির পদত্যাগ করা কেউ নির্বাচনে আসতে পারবে কিনা এটি উল্লেখ নেই এই সুযোগটি অনেকে গ্রহণ করে।

বিভাগ-জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির আকারেও পার্থক্য আছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি যেখানে সাত সদস্যের সেখানে ফেডারেশনগুলোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ কমিটি হয় বিশের অধিক সদস্য নিয়ে। অ্যাডহক কমিটির আকারের দিক থেকেও একটা বৈসাদৃশ্যতা রয়েছে। ফেডারেশনগুলোর বিস্তার দেশ ব্যাপী, জেলার আয়তন ছোট হলেও ততোধিক খেলা আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করতে হয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার।

নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু অ্যাডহক কমিটির এই বৈপরীত্য নিয়ে বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ফেডারেশনে কার্যক্রম ভিন্ন হলেও অ্যাডহক কমিটির গঠন উদ্দেশ্য একই। অ্যাডহক কমিটি থেকে ফেডারেশনে নির্বাচন করা যাচ্ছে, জেলা পর্যায়ে যাচ্ছে না এটা তো অবশ্যই একটা বৈষম্যমূলক বিষয়। কয়েক বছর আগে ফেডারেশনগুলোর জন্য একটি মডেল গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করা হয়েছিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হলেও সাধারণ পরিষদে (এজিএম ) না উঠায় আর অনুমোদন হয়নি। ক্রীড়াঙ্গনে আইনগত অনেক বিষয় সাংঘর্ষিক কিছু বিষয়ে দুর্বলতা, অস্পষ্টতা রয়েছে। এগুলো দূর করার সময় এসেছে।’ 

ক্রীড়াঙ্গনের আরো সংগঠকদের বক্তব্য, ‘অ্যাডহক কমিটি নিয়ে এনএসসির একটি নীতিমালা থাকা দরকার। সেই নীতিমালা থাকলে অনেক বিতর্ক ও সমস্যা এড়ানো সম্ভব।’ অনেকে অ্যাডহক কমিটির বদলে অন্তবর্তীকালীন কমিটির মতামতও দিয়েছেন। 

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পরিচালিত হতো ১৯৭৪ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী। সেই অ্যাক্টের ২০ ধারায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে কোনো প্রয়োজনে কমিটি ভাঙা গড়ার এখতিয়ার ছিল। ১৯৯৮ সাল থেকে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন ব্যবস্থা শুরু হয়। নির্বাচিত কমিটিকে সেই অ্যাক্টের মাধ্যমে ভেঙে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটি করে মামলার মধ্যেও পড়েছিল। আইনের রায় নির্বাচিত কমিটির পক্ষে ছিল। 

২০১৮ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাক্ট যুগোপযোগী করে নির্বাচিত কমিটির উপর প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অ্যাডহক কমিটি করার এখতিয়ার রেখে আইনী জটিলতা অনেকটা এড়িয়েছে। সেই এখতিয়ার রাখলেও অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অ্যাডহক কমিটি গঠন করা চিঠিগুলোতে সাধারণত তিন মাসের মেয়াদ থাকে। এই তিন মাসের মধ্যে কোনো কমিটিই নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হয় না। স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডহক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। অনেক সময় মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা এনএসসির কাছে চিঠি লেখে আবার অনেক সময় এনএসসি-সংশ্লিষ্ট সংস্থা উভয়ই নিশ্চুপ ভূমিকায় থাকে। 

এজেড/এটি