টেনিসের জনপ্রিয় আসর ফ্রেঞ্চ ওপেন চলছে প্যারিসে। যেখানে কোর্টের খেলা ছাপিয়ে আলোচনার মঞ্চ দখল করেছে বাইরের ইস্যু। মূলত সার্বিয়ান টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচের জাতীয়তাবাদী আচরণকে ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র নিজ দেশের পক্ষে বললেই ঘটনা এতদূর গড়াত না, কসোভোকে নিজেদের দাবি করায় এই বিতর্কের উত্থান। কসোভো স্বাধীন দেশ হলেও সার্বিয়া তাদের স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। সে কারণে কোর্টে সার্বিয়া-কসোভোর বিতর্কিত ইস্যু টানার মাধ্যমে নিজেও বিতর্কে পড়েছেন ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা জোকোভিচ।

বিতর্ক মাথায় নিয়েই এই টেনিস তারকা দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে নেমেছিলেন। যেখানে হাঙ্গেরির মার্টন ফুসোভিসকে ৭-৬, ৬-০ ও ৬-৩ সেটে হারিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে ওঠে গেছেন তিনি। এদিন জোকোভিচকে একাধিকবার ব্রেক করে ৫-৫ সমতা এনেছিলেন ফুসোভিস। তুলনামূলক দূর্বল প্রতিপক্ষের কাছে এমন প্রতিরোধ পেয়ে কিছু সময়ের জন্য তিনি মেজাজও হারিয়ে বসেন। তবে টাইব্রেকারে সেট জিতে নেন তিনি। প্রথম সেটটি চলে ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিট।

পরের সেটের প্রথম গেমেই ফুসোভিসকে ব্রেক করেন জোকোভিচ। এরপর আর তাকে দাঁড়াতে দেননি। তেমনি তৃতীয় সেটও অনায়াসে পকেটে পুরে ফেলেন সার্বিয়ান তারকা। ম্যাচের পর বলেন, ‌‘পাশে থাকার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ। আশাকরি আজ আমার খেলা দেখে, বিশেষ করে প্রথম সেট দেখে সবাই মজা পেয়েছেন। আমি অবাক হইনি। ফুসোভিসকে আগে থেকেই চিনি। সব ধরনের কোর্টে সমান ভাবে খেলতে পারে সে।’

ম্যাচের পর আবারও ক্যামেরার লেন্সে স্বাক্ষর করেন জোকোভিচ। তবে এবার আর কোনো রাজনৈতিক বার্তা ছিল না। প্রথম রাউন্ডে জেতার পর জোকোভিচ এভাবেই ক্যামেরার লেন্সে লিখেছিলেন, ‘কসোভো সার্বিয়ার হৃদয়ে রয়েছে।’ এই বার্তা নিয়ে প্রচুর জলঘোলা ও সমালোচনা তৈরি হয়েছিল।

এর আগে প্রথম রাউন্ডে জয়ের পর জোকোভিচ ক্যামেরায় লিখে বসেন, ‘সার্বিয়ার হৃদয় কসোভো। সহিংসতা থামাও।’ এরপর তার এমন লেখার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ঘটনা কসোভো স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে (আইওসি) ওই ঘটনার জন্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে  দেশটির অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। আইওসির সভাপতি থমাস বাখকে লেখা চিঠিতে জোকোভিচের বিরুদ্ধে খেলাধুলার নীতি ও ‘অলিম্পিক চার্টার’ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, নোভাক জোকোভিচ আবারও সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদীদের হয়ে অপপ্রচার করেছেন। আর এটি করতে তিনি খেলাধুলার প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন >> ২ নম্বরের মেদভেদেভ হারলেন ১৭২ নম্বরের তরুণের কাছে

তবে এটি জোকোভিচকে দমিয়ে রাখতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘জানি না, এতে আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে কিনা...তবে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি না, আমি আবার এটা করব।’

২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন এলাকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কসোভো। তার আগে তারা সার্বিয়ারই একটি প্রদেশ ছিল। তবে সার্বিয়া এখনও দেশটিকে স্বাধীন বলে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। তবে জাতিসংঘ এবং আমেরিকাসহ ১১৫টি দেশ কসোভোকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এএইচএস