শিরোপা হাতে এমা রাদুকানু/গেটি ইমেজ

‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি’ - সুকান্ত ভট্টাচার্যের পঙক্তি চতুষ্টয় যেন এমা রাদুকানুর ক্ষেত্রে দারুণভাবে সত্য। 

পুরো ইউএস ওপেনে প্রতিপক্ষ তো বটেই, চোটের কাছেও একটি বারের জন্য নোয়ালেন না মাথা, শেষটায় পদাঘাতে ভাঙলেন পাথর বাধা। তাতেই গড়া হয়ে গেল ইতিহাস। বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসে শিরোপা জেতার কীর্তি যে ইউএস ওপেন টেনিসের ১৪০ বছরের ইতিহাসে নেই একটিও! 

অনেকগুলো মৌলিক মাইলফলকই ছোঁয়া বাকি রয়ে গেছে এমা রাদুকানুর। মাত্র মাস তিনেক আগে অভিষেক হয়েছে পুরোদস্তুর পেশাদার টেনিসে। এখনো ট্যুর পর্যায়ে তিন সেটের কোনো ম্যাচে খেলা হয়নি তার। এমনকি নারী টেনিসে ট্যুর ইভেন্টে একটা ম্যাচে জেতেনওনি। ইউএস ওপেনেই তো সরাসরি টিকিট পাননি তিনি। 

তবে তাতে কী! ইতিহাস তো গড়েই ফেলেছেন ১৮ বছর বয়সী এই কিশোরী। ইউএস ওপেনের ফাইনালে লেইলাহ অ্যানি ফের্নান্দেজকে উড়িয়ে দিয়ে জিতে গেছেন শিরোপা।

ইউএস ওপেনটা যেভাবে শুরু করেছিলেন, রাদুকানু শেষটাও করলেন সেভাবেই। বেজলাইনের ভেতরে থেকেই প্রতিপক্ষ ধসিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি ম্যাচে, পুরো টুর্নামেন্টে হারলেন না একটি সেটেও। এমন বিধ্বংসী রূপের দেখা মিলল ফাইনালেও। আরেক কিশোরী লেইলাহকে উড়িয়ে দিলেন ৬-৪, ৬-৩ গেমে, সরাসরি সেটে।

মাত্র প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল ছিল তার। কিন্তু তাতে স্নায়ুচাপের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না তার পারফর্ম্যান্সে। বেজলাইন থেকে শাসনটা ছিল, যেমন ছিল পুরো টুর্নামেন্টেই। দারুণ ক্ষিপ্রতায় সব রক্ষণকাজও ছিল বেশ, সঙ্গে এদিন যোগ হয়েছে বার বার পাশ বদলে প্রতিপক্ষকে থিতু হতে না দেওয়াটাও।

জবাবটা দিচ্ছিলেন লেইলাহও। কিন্তু রাদুকানুর তীব্রতার কাছে শেষমেশ আর পেরে ওঠা হয়নি তার। দারুণ লড়াই শেষে প্রথম সেটটা গেল ব্রিটিশ রাদুকানুর পকেটে। 

একই তীব্রতায় যখন দ্বিতীয় সেটেও ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে রাদুকানু, তখনই ঘটল অঘটন। লেইলাহর একটা ফোরহ্যান্ড শট রক্ষণাত্মক ব্যাকহ্যান্ডে ঠেকাতে গিয়ে পা ছড়ে যায় রাদুকানুর। জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচে এসে ৬-৪, ৫-৩ গেমে এগিয়ে থাকার সময় নিতে হয় মেডিক্যাল টাইম আউট। 

ফিরে এসে দুটো ব্রেক পয়েন্ট দিয়ে বসলেন প্রতিপক্ষকে। এরপরই একটা প্রত্যাবর্তন দেখল ফ্ল্যাশিং মিডোস। দারুণ এক শটে ব্রেক পয়েন্টটা দিলেন ঠেকিয়ে; এরপরই দুর্দান্ত ব্যাক হ্যান্ড শটে চলে গেলেন ম্যাচ পয়েন্টের দুয়ারে। শেষ শটে একটা এইস, তাতেই গড়া হয়ে গেল অজস্র ইতিহাস। ব্রিটিশ কিশোরী ১৮-তেই জয় করে বসলেন ইউএস ওপেন।

এনইউ