ফাইল ছবি

সুপ্রিয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। ২০২১ সালের এসএসসি  ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সম্প্রতি এন.সি.টি.বি. ও মাউশি কর্তৃপক্ষ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে। বেশি টেনশন না করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী বোর্ড বইয়ের অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়বে। 

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে বেশি নম্বর পেতে : সৃজনশীল প্রশ্নের প্রত্যেক উদ্দীপকে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তরের প্রশ্ন থাকে। তোমাদের সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার।

() জ্ঞানমূলক : কোনো ঘটনার তথ্য, তত্ত্ব, নীতিমালা, প্রকারভেদ প্রভৃতি মুখস্ত করে লিখতে পারার ক্ষমতাকে বুঝায়। এ স্তরের প্রশ্নে কে, কী, কখন, কোথায়, সংজ্ঞা দাও, উল্লেখ করো প্রভৃতি দ্বারা হয়। উল্লেখ্য, এ স্তরের প্রশ্নটি সম্পূর্ণ পুস্তক নির্ভর এক বাক্যের বা এক শব্দের। অধ্যায়ের ভিতর থেকে যে বাক্যগুলো এক কথায় প্রশ্নোত্তর হয় সেখান থেকে, শব্দার্থ থেকে এবং লেখক পরিচিতি থেকে এ স্তরের প্রশ্ন হবে। কোনে ক্রমে উদ্দীপক থেকে প্রশ্ন হবে না। পাঠ্য-পুস্তকের বাইরের কোনো প্রশ্ন এ স্তরে হবে না। আর এ স্তরের নম্বর ১। পরীক্ষার্থীদের একটি বাক্যে এ স্তরের উত্তর লেখাই উত্তম।

() অনুধাবনমূলক : কোনো অনুচ্ছেদ, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ে বুঝতে পারা এবং তার মধ্যকার একটি বক্তব্যকে নিজের ভাষায় অনুবাদ করে সংক্ষেপে বুঝিয়ে লেখার ক্ষমতাকে বুঝায়। এ ধরনের স্তরে কেন, লেখক কী বুঝাতে চেয়েছেন, অর্থ ব্যাখ্যা করো ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন হতে পারে। এ স্তরের প্রশ্নও বই থেকে হবে। তবে যে বইয়ের অধ্যায়ের আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে, সেই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন হবে। প্রশ্নপত্রে অনুধাবন স্তরের মান ২। তোমরা দু’টি প্যারায় উত্তর লিখবে। অর্থাৎ প্রথম অংশে জ্ঞান স্তরের ১ নম্বরের জন্য একটি বাক্যে ভাবার্থে এবং দ্বিতীয় অংশে অনুধাবন স্তরের ১ নম্বরের জন্য বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে দু’টি থেকে চারটি বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখবে। এক্ষেত্রে কেউ  ইচ্ছা করলে অনুধাবন অংশটি আগেও লিখতে পারে এবং জ্ঞান স্তরের অংশটি পরে লিখতে পারবে।

() প্রয়োগমূলক : এটি হলো পাঠ্য-পুস্তক থেকে ও অনুধাবন নতুন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার দক্ষতা। এ ধরনের স্তরে সাধারণত প্রয়োগ দেখাও, মিল/সাদৃশ্য, অমিল/ বৈসাদৃশ্য কী, চিহ্নিত কর, ব্যাখ্যা কর, কীভাবে ইত্যাদি দ্বারা প্রশ্ন করা হয়। এ স্তরের প্রশ্ন পাঠ্য-বই থেকে হুবহু হবে না। উদ্দীপক ও বইয়ের কোনো অধ্যায়ের সাথে একত্র করে প্রশ্ন হবে। এ স্তরের মান-বণ্টন ৩ (জ্ঞান স্তর=১, অনুধাবন স্তর=১ ও প্রয়োগ স্তর=১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে ভাবানুবাদে, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে এবং প্রয়োগ স্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে (উদ্দীপকের কথা হুবুহু লেখা যাবে না, নিজের ভাষায় বর্ণনা করতে হবে) এবং শেষে তাই বলে প্রয়োগের জ্ঞানটি অর্থাৎ বই ও উদ্দীপক উভয় জায়গাতে যে দিকটি ফুটে উঠেছে সেটা সংক্ষেপে লিখলে ভালো হবে। (গ) নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তর ঠিক না হলে পরীক্ষক শূন্য নম্বর দিতে পারেন।

() উচ্চতর দক্ষতামূলক : কোনো বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করার দক্ষতা হলো উচ্চতর দক্ষতা। এ স্তরের  প্রশ্নটি উদ্দীপক ও বই মিলে হবে। এ স্তরের মান-বণ্টন ৪ (জ্ঞান স্তর = ১, অনুধাবন স্তর = ১, প্রয়োগ স্তর = ১ ও উচ্চতর দক্ষতা = ১)। তোমরা উত্তরে জ্ঞান স্তরটি লিখবে সিদ্ধান্তের ভাব অনুযায়ী, অনুধাবন স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের আঙ্গিকে, প্রয়োগ স্তরটি লিখবে উদ্দীপক থেকে ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরটি লিখবে বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ এবং উদ্দীপকের অংশের সমন্বয় সাধন করে, জ্ঞান স্তরে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা পুনরাবৃত্তি করে। আবার (ঘ) নম্বর প্রশ্নের উত্তরে কেউ ইচ্ছা করলে (গ) নম্বরের মতো তিনটি প্যারার (জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগ স্তর) পর চতুর্থ প্যারায় উচ্চতর দক্ষতায় সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য লিখে উত্তরটি  শেষ  করতে পারো। (ঘ) নম্বর উত্তরে চারটি প্যারা করলে ভালো হয়। তবে কেউ যদি এক প্যারায় বা দু’টি প্যারায় বা তিন প্যারায় সব স্তরের উত্তর ঠিক লিখতে পারে, সেও পূর্ণ নম্বর  পাবে। কারণ সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে প্যারা করা বাধ্যতামূলক নয়। উল্লেখ্য, (ঘ) নম্বর প্রশ্নোত্তরের জ্ঞান স্তরের উত্তরটি খুবই সাবধানে লিখবে। কেননা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে ঐ প্রশ্নের অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতার দক্ষতা স্তরের ভুল উত্তরের প্রভাব পড়বে। তখন হয়তো পরীক্ষক ঐ প্রশ্নোত্তরে শূন্য নম্বর দিতে পারেন। 

উল্লেখ্য, (ঘ) নম্বর প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরে যদি উদ্দীপকের কোনো চরিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের কোনো চরিত্রের বিমূর্ত রূপ / প্রতিবিম্ব রূপ/ প্রতিরূপ / অনুরূপ / একই রূপ / প্রতিচ্ছবি- এ ধরনের কথা থাকে, তাহলে উদ্দীপকে বর্ণিত চরিত্রের এবং সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের ঐ চরিত্রের সব কয়টি বৈশিষ্ট্য/গুণ এক হলে যথার্থ; আর এক না হলে যথার্থ নয় লিখতে হবে। কিন্তু প্রশ্নে ‘প্রতিনিধিত্ব করে’ - এ ধরনের কথা থাকলে চরিত্রের সবকিছু বৈশিষ্ট্য / গুণ না থাকলেও চলবে। অবশ্য প্রায় ৫০% বৈশিষ্ট্য/গুণ মিলে গেলে যথার্থ লিখতে হবে; আর মাত্র দু-একটি বৈশিষ্ট্য মিলে গেলে ‘যথার্থ নয়’ লিখতে হবে। কারণ হয়তো ঐ  সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের চরিত্রের মধ্যে প্রায় ৫-১০টি বৈশিষ্ট্য / গুণ রয়েছে)।  আবার উদ্দীপকের মূলভাব এবং অধ্যায়ের মূলভাব / মূলকথা/সারকথা / মূল উপজীব্য একই ধারায় উৎসারিত- এ ধরনের কথা থাকলে সব দিক মিলানোর প্রয়োজন নেই, মূলকথা থাকলেই চলবে। এক্ষেত্রে যথার্থ লিখতে হবে। তবে প্রশ্নে যদি সামগ্রিকভাব / দিক প্রকাশ পায়- এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের এবং উদ্দীপকের সব দিক / ভাব মিলাতে হবে। একটি দিক / ভাব /বৈশিষ্ট্য কম হলেই (বিয়োগ অঙ্কের মতো করে পার্থক্য দেখাতে হবে) ‘যথার্থ নয়’ লিখতে হবে। আর মন্তব্য না দিয়ে যদি মূলভাব কিংবা সমগ্রভাব ফুটে উঠেছে কী? কিংবা কোনো চরিত্রের প্রতিবিম্ব /প্রতিচ্ছবি বলা যায় কী- এ ধরনের কথা থাকলে হ্যাঁ কিংবা না লিখতে হবে। যথার্থ / কিংবা যথার্থ নয় লেখা যাবে না। অনেকেই উদ্দীপকে কোনো চরিত্রের সংলাপ না থাকলেও প্রশ্নে ভুলে উক্তিটি লিখে থাকে যা মোটেও ঠিক নয়। মন্তব্য আর উক্তি একই হতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীরা মন্তব্যটি যথার্থ নাকি উক্তিটি যথার্থ প্রশ্ন দেখে লিখবে। তবে (ঘ) নম্বর প্রশ্নে উচ্চতর দক্ষতা স্তরের মধ্যে জ্ঞানের উত্তরের সাথে কারণটি লেখা উত্তম। আর শেষ প্যারায় প্রাসঙ্গিক নৈতিকতার কোনো কথা এক বাক্যে লিখলে আরো ভালো হবে।

প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে তোমরা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর  সরাসরি খাতায় লিখবে না। সম্পূর্ণ প্রশ্নটি কমপক্ষে একবার ভালোভাবে পড়ে নেবে এবং যে উদ্দীপকের প্রশ্নগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ মনে হবে, সেগুলো ক্রমানুসারে আগে দেয়ার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ সৃজনশীল উত্তর লেখার সময় (ক, খ, গ ও শেষে ঘ নম্বর প্রশ্নের উত্তর) ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করবে। তা না হলে তোমাদের পরীক্ষার খাতায় তথা উত্তরপত্রে মূল্যায়নের সময় পরীক্ষকদের নম্বর পোস্টিং দিতে সমস্যা হয়। খাতায় প্রশ্নের নম্বর নীল সাইনপেন দিয়ে কিংবা কালো কলম দিয়ে নিচে দাগ দিয়ে এভাবে লিখতে পারো-  () নম্বর প্রশ্নের উত্তর: 

বানানের ব্যাপারেও খুব সতর্ক থাকবে। বিশেষ করে (ক) নম্বর প্রশ্নের জ্ঞান স্তরের উত্তরে বানান ভুল হলে সাধারণত নম্বর দেয়া হয় না। বিরামচিহ্নের ব্যাপারেও ঠিকভাবে লক্ষ রাখতে হবে। কেননা শুদ্ধভাবে বিরামচিহ্নের ব্যবহার না করলে অনেক সময় অর্থ পরিবর্তন হতে পারে। আর হ্যাঁ, যে কোনো কবিতা / প্রবন্ধ/ গল্প / উপন্যাস / নাটকের নাম লিখতে হলে অবশ্যই উদ্ধোরণ চিহ্ন (যেমন: ‘সুভা‘ গল্প) দেয়া উচিত।

যা মনে রাখা জরুরি : ১. মূল পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি গল্প/প্রবন্ধ/কবিতাসহ  কবি/লেখক পরিচিতি, মূল বক্তব্য, উৎস, শব্দার্থ ও টীকা মনোযোগ সহকারে পড়বে।

২. বেশি নম্বর পেতে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ কথা লিখবে।

৩. হুবহু প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ না করে প্রতিটি গল্প/প্রবন্ধ/কবিতার উদ্ধৃত অংশটুকু বারবার রিডিং পড়ে প্রশ্নের উত্তর সর্ম্পকে স্পষ্ট ধারণা নেবে এবং নিজে নিজে প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টা করবে।

বহুনির্বাচনি প্রশ্নে বেশি নম্বর পেতে : পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়া থাকলে সাধারণ তোমাদের নির্বাচনি অংশে জ্ঞান স্তর ও অনুধাবন স্তর শুদ্ধ উত্তর নির্বাচন করতে তেমন সমস্যা হবে না । তবে বহুপদী সমাপ্তিসূচক ও অভিন্ন তথ্য ভিত্তিক অংশে প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা স্তরে একাধিক শুদ্ধ উত্তর থাকতে পারে বলে একটু কঠিন মনে হতে পারে; অবশ্য একটু ভেবে-চিন্তে উত্তর নির্বাচন করলে তেমন কোনো কঠিন মনেই হবে না । উল্লেখ্য, বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্নের উত্তর সাধারণত একটি না হয়ে দু’টি কিংবা তিনটি উত্তর হয়। তাই বোর্ড বইয়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অধ্যায়ের দিক তথা শিখনফল ও চরিত্র ভালোভাবে আত্মস্থ করবে।

পরীক্ষার খাতার প্রথম অংশে সঠিক উত্তরের বৃত্তটি যথাযথভাবে ভরাট করবে। এরপরেও যদি ভুল হয়, তাহলে কাটাকাটি না করে ঐ কক্ষের কর্মরত ইনভিজিলিটর স্যারকে অবশ্যই অবহিত করবে। ঘাবড়াবে না। ঠান্ডা মাথায় খাতায় পেন্সিল দিয়ে মার্জিন দেবে। আর বহুনির্বাচনি পরীক্ষার সময় একটি প্রশ্নোত্তরে কখনই কালো বলপেনে একাধিক বৃত্ত ভরাট করবে না। বহুনির্বাচনি প্রশ্নে বেশি নম্বর পেতে পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় আন্ডারলাইন করে মনোযোগসহকারে পড়বে।

সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরে  পূর্ণ নম্বর পেতে  অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য। পাঠ্য-পুস্তক খুব ভালো করে পড়বে । পরীক্ষায় যেকোনো উদ্দীপক / দৃশ্যকল্প এবং প্রশ্ন দেয়া হোক না কেন, পাঠ্য-পুস্তকের প্রতিটি অধ্যায়ের শিখনফল ভালোভাবে আত্মস্থ করা থাকলে তার উত্তর দেয়া তোমাদের  জন্যে সহজ হবে। পরীক্ষার খাতায় হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করবে এবং শুদ্ধ ও যথার্থভাবে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে। তাহলেই আশা করি তোমরা পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

এমকে