যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের ইতিহাসে শেষ ২৪ ঘণ্টা সবচেয়ে বাজে সময়গুলোর একটি। গতকাল স্টক-মার্কেট ও ব্যক্তিগত শেয়ারের অবস্থা ছিল হতাশাজনক। শেয়ার বাজারে অ্যাপল, অ্যামাজন ও গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের অবস্থাও ছিল বেশ নাজুক। অপরদিকে ব্যাংকিং স্টকগুলোর মধ্যে জেপিমরগান চেজ ৫ শতাংশ এবং ব্যাংক অব আমেরিকার ৬ শতাংশের বেশি দর কমে যায়।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে। আজ সকালে ১০ শতাংশ দর কমে বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়ায় গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আজকের ক্রিপ্টো প্রাইজ-চার্টের প্রায় প্রতিটি ক্রিপ্টোর দামের পাশেই লাল রঙ হয়ে আছে। এই লেখা পর্যন্ত বিটকয়েন, সোলানা ও ইথেরিয়াম প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। বিয়ান্সের ছিল প্রায় ৪ শতাংশের নিচে। অপরদিকে ডুজেকয়েনও ছিল প্রায় ১০ শতাংশের নিচে।

এই ঘটনার জন্য কিছুটা গতকালের নেতিবাচক স্টক মার্কেটের লেনদেন দায়ী হলেও প্রধান কারণ সিলভারগেট ব্যাংকের পতন। মূলত সিলভারগেট ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে ক্রিপ্টো বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সিলভারগেট ব্যাংকে যা হয়েছিল

সিলভারগেট ব্যাংক হচ্ছে সিলভারগেট ক্যাপিটাল করপোরেশনের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংকই মূলত ফিনটেক ও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক ব্যবসা নেতৃত্ব দিতো। যা এখন বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যাংকটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে। কয়েন টেলিগ্রাফের মতে সিলভারগেট ব্যাংক হচ্ছে অন্যতম সেরা একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, যারা ক্রিপ্টো কারেন্সি নিয়ে কাজ করতো। তবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণায় ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। যার নেতিবাচক ফল আজকের দরপতন।

সিলভারগেট ব্যাংকটি এসভিপির মতোই পতনের স্বীকার হয়েছে।

শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকিং খাতে কী ঘটেছিল

গেল বুধবার হঠাৎ শোনা যায়, গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। ঘাটতির পরিমাণ এতটাই যে, ব্যাংকের ব্যাল্যান্স শিটের কিনারা করতেই প্রয়োজন অন্তত ২২৫ কোটি ডলার।

এ গুজব ছড়িয়ে পড়তেই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রাহক টাকা তুলে নেন ব্যাংকটি থেকে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার এসভিপির সবগুলো শাখায় মোট ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের প্রায় সবাই টাকা তুলে নেওয়ার পর এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

শুক্রবার কর্তৃপক্ষ ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণার পর অবশ্য গ্রাহকদের অনেকেই আফসোস করছেন। ডিজিটাল ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা-খাতের বিনিয়োগকারী রায়ান ফ্ল্যাভেই বলেন, ইউনিয়ন স্কয়্যার ভেঞ্চার্স ও কোচুয়ে ম্যানেজমেন্টসহ কিছু মার্কিন আর্থিক ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত। বুধবার তারা এসভিবির বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছে ইমেইল পাঠিয়ে বলেন, ‘এসভিপি গুরুতর তারল্য সংকটে ভুগছে। যদি ব্যাংকটিতে আপনার টাকা থেকে থাকে- দ্রুত তুলে নিন।’

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ইমেইলের স্ক্রিনশট খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। গ্রাহকরাও কোনো কিছু চিন্তা না করে ব্যাংক কার্যালয় কিংবা এটিম বুথ থেকে সমানে নিজেদের আমানতের টাকা তুলে নেওয়া শুরু করেন।

এরপর থেকেই ব্যাংকিং খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে ধস নামতে শুরু করে।