মুঠোফোনে ফোর-জি গতিতে অনেক বেশি পিছিয়ে দেশের সব মোবাইল অপারেটর। কোনো অপারেটরই বিটিআরসির দেওয়া গতির শর্ত পূরণ করতে পারছে না। তবে কলড্রপসহ কয়েকটি বিষয়ে উন্নতি করেছে তারা।  

বুধবার (২৪ মার্চ) মুঠোফোন সেবার মান নিয়ে জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায়। এ লক্ষ্যে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা বা ড্রাইভ টেস্ট চালানো হয়। বিটিআরসি ২০১৮ সালে সেবার মান বেঁধে দিয়ে যে বিধিমালা জারি করেছিল, সে অনুযায়ী অপারেটররা গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।

ফোর-জি সেবার ক্ষেত্রে বিটিআরসির বিধিমালায় রয়েছে, ডাউনলোডের গতি হতে হবে সর্বনিম্ন ৭ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড)। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, মুঠোফোনে ফোর-জিতে ডাউনলোডের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন ও রবির গ্রাহকরা ৫ দশমিক ৭২ এমবিপিএস গতি পান। আর বাংলালিংকে গতি ৪ দশমিক ৯৪ ও টেলিটকে ২ দশমিক ৮২ এমবিপিএস গতি পান গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে কোনো অপারেটরই বিটিআরসির শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

ফোর-জিতে আপলোডের ক্ষেত্রে এক এমবিপিএসের চেয়ে বেশি গতি থাকার শর্ত রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অপারেটরগুলো অনেক এগিয়ে । গ্রামীণফোন ১০, রবি ১২ দশমিক ৬৯, বাংলালিংক ১০ দশমিক ৭২ ও টেলিটক ৪ দশমিক ৫২ এমবিপিএস গতিতে গ্রাহকদের এ সেবা দিচ্ছে।

জরিপ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে টেলিটক। তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবার (থ্রি-জি) গতিতেও পিছিয়ে রয়েছে এ অপারেটরটি। তবে বাকি তিন অপারেটর নির্ধারিত মানের চেয়ে ভালো সেবা দিচ্ছে। থ্রি-জির ক্ষেত্রে বিটিআরসি নির্ধারিত সর্বনিম্ন গতি ২ এমবিপিএসের বেশি। এক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের গতি ৩ দশমিক ৯৬, রবির ৪ এর সামান্য কিছু বেশি, বাংলালিংকের ৩ দশমিক ৯৯ এবং টেলিটকের ১ দশমিক ৭৪ এমবিপিএস।

থ্রি-জিতে আপলোডের ক্ষেত্রে সব অপারেটরের গ্রাহক ভালো গতি পাচ্ছেন। গ্রামীণফোনে থ্রিজির আপলোড গতি ৭ দশমিক ৮৪, রবিতে ৯ দশমিক ৪৩, বাংলালিংকে ৮ দশমিক ৪৫ এবং টেলিটকে ২ দশমিক ৩১ এমবিপিএস।

কলড্রপে উন্নতি করেছে অপারেটরগুলো 

বিটিআরসির জরিপে দেখা গেছে চার অপারেটরের কলড্রপের হারই নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে গ্রামীণফোন। এ প্রতিষ্ঠানের কলড্রপের হার সবচেয়ে কম, শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে বাংলালিংক শূন্য দশমিক ৩১, রবি শূন্য দশমিক ৩৭ এবং টেলিটক ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বিধিমালা অনুযায়ী, কলড্রপের হার ২ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

সংযোগে সব অপারেটর ভালো অবস্থানে আছে। তবে কল সংযোগ সময়ের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক মান রক্ষা করতে পেরেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে টেলিটক।

এ বিষয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেড এক্সটারনাল কমিউনিকেশনের প্রধান মুহাম্মদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সর্বশেষ বিটিআরসির সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকায় আমাদের শূন্য দশমিক ১৮ ভাগ কলড্রপ রয়েছে। এটি খুবই ইতিবাচক।

তিনি বলেন, গ্রাহকের উন্নততর অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে গ্রামীণফোন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন, নতুন টাওয়ার বসানো, বাড়তি তরঙ্গ ব্যবহার করা এবং অপটিক্যাল ফাইবার যথাযথভাবে রাখা নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু নানা উন্নয়নকাজে প্রায়ই ফাইবার কাটা পড়ে। এতে কিছুটা সেবা দেওয়া বিঘ্নিত হয়।

রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে পাওয়া মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতিকে আমরা যথেষ্ট ভালো বলে মনে করি। কেননা একটি মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এইচডি মানের একটি ভিডিও দেখা কিংবা অন্য যে কোনো প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ৩ এমবিপিএস গতিই যথেষ্ট, সে তুলনায় ৫ দশমিক ৭ এমবিপিএস গড় গতি গ্রাহকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট।

তিনি বলেন, আরও অধিক গতিসম্পন্ন মোবাইল ইন্টারনেট অভিজ্ঞতার জন্য বাংলাদেশে অপারেটর প্রতি কমপক্ষে ৮০ হতে ১০০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ থাকা প্রয়োজন। আমাদের বেশিরভাগ সাইট অথবা বিটিএস এখনো ফাইবার নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত নয়। এছাড়া সব গ্রাহকের কাছে এখনো মানসম্মত ডিভাইস নেই, ইন্টারনেট ব্যবহারে সেরা অভিজ্ঞতা পেতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে আমাদের ইন্টারনেটের গতি সন্তোষজনক বলে আমরা মনে করি।

সার্বিক বিষয়ে বিটিআরসির উপপরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রাহকরা যেন উন্নত সেবা পান, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই জরিপটি শুধু ঢাকায় পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে জরিপটি পরিচালনা করা হবে। শর্ত অনুযায়ী যারা সেবা দিতে পারবে না ও সেবার মান উন্নত করবে না তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থার কথাও ভাবছে বিটিআরসি।

একে/আরএইচ