শারীরিকভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী বর্তমানে আর সমাজের বোঝা নয়। নানা ক্ষেত্রে তারা দেশকে এনে দিচ্ছেন সফলতা। কার্যক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করছেন। বিশ্বমঞ্চ থেকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে এনে দিচ্ছেন পদক।

২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সেই আইন অতীতের এ অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে এখনো প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মেধা বিকাশের পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে আছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও তাদের মেধা, দক্ষতা এবং অংশগ্রহণের মানসিকতা থাকে স্বাভাবিক ব্যক্তির চেয়ে অনেকাংশেই বেশি। এজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। উন্নত দেশে যাকে বলে রিজনেবল অ্যাকোমডেশন অ্যান্ড কেয়ারগিভার সার্ভিস।

ডিজিটাল বাংলাদেশে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। একথা ভেবেই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে উদ্ভাবনী আবিষ্কার হলো ‘ক্রাউডভি মোবাইল অ্যাপ’। যেকোনো প্রয়োজনে দেশের যেকোনো স্থান থেকে মোবাইল ফোনের এক ক্লিকেই তারা পেতে পারেন সহযোগিতা।

‘ক্রাউডভি’ একটি মোবাইল সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শ্রুতিলিখন বা বুক রেকর্ড করার জন্য ভলান্টিয়ার খুঁজে নিতে পারবেন। ঘরে বসেই ভলান্টিয়ারদের ব্যকগ্রাউন্ড চেক, অতীত কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা যাচাই করতে পারবেন। এসব ভলান্টিয়ারদের কাছ থেকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইন অথবা সরাসরি যেকোনো ধরনের সাহায্য গ্রহণ করতে পারবেন।

অপরদিকে, পড়াশোনার পাশাপাশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভলান্টিয়ার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে সার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকাশ, উন্নত যোগাযোগ দক্ষতা ও নেটওয়ার্কিংসহ বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। পাশাপাশি তারা, সেবার জন্য সনদ, পুরস্কারসহ, বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনেরও সুযোগ পাবেন। এসব অভিজ্ঞতা উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি শেষ করেই ড. মিজানুর রহমান কিরণ মনোনিবেশ করেন উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আইডিয়া থেকে যেন প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী বাদ না পরে, সেক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি, ক্রাউডভি অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাজের দক্ষতা ও সুযোগ বৃদ্ধিতে আমরা ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট।’

ক্রাউডভির প্রজেক্ট লিড নাজমুস সাকিব খান জানান, ‘আমার জীবনের অভিজ্ঞতা আমাকে এ উদ্ভাবনী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। আমি চাইনা, আমি পরিবারের বাইরের মানুষের কাছে সাপোর্ট পেতে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি তা অন্যকোনো  প্রতিবন্ধী ব্যক্তির না হোক। বাংলাদেশে এ ধরনের অ্যাপ এটাই প্রথম ও একমাত্র। আমরা শতাধিক বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ফিডব্যাক থেকে ক্রাউডভি অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেস ডেভেলপ করেছি। একাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অ্যাপটিকে ইউজার ফ্রেন্ডলি ও অ্যাক্সেসিবল বলেছেন।’

এফকে