করোনা মহামারি তাণ্ডবে মানুষ এখন অনলাইনেই অফিসের কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। কিন্তু বেশিরভাগ দেশেই নারীরা প্রযুক্তিগত সুবিধা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। 

সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনলাইন সুবিধা পাচ্ছেন কম। 

নারী-পুরুষের মধ্যে এ অসমতার চিত্র সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে আফ্রিকা মহাদেশে। তারা বলছে, সেখানে ৩৭ শতাংশ পুরুষ ও ২০ শতাংশ নারী ইন্টারনেট সুবিধা পান। আফ্রিকায় এ অসমতা শুরু হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। 

ঘানায় নারীদের একটি প্রযুক্তি শিক্ষা কেন্দ্র সোরোনকো একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা রেজিনা হোনু বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তিতে পারদর্শী না হলে বর্তমান পৃথিবীতে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। করোনা মহামারির আগে আমাদের শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি হতেন ১০০ থেকে ২০০ নারী। কিন্তু মহামারি আসার পর এ চিত্র পাল্টে যায়। বর্তমানে ২ সহস্রাধিক নারী এখানে ভর্তি হয়েছেন।’ 

রেজিনা আরও বলেন, ‘করোনা আমাদের একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে দক্ষতা না থাকলে পেছনেই পড়ে থাকতে হবে।’ 

রেজিনা হোনু বলেন, ঘানায় অনেক নারীই রয়েছেন যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী নন। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো পরিবারের সদস্যদের লিঙ্গবৈষম্য। 

বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সামাজিক দূরত্ব মেনে মানুষকে প্রযুক্তিতে পারদর্শী করে তোলা সহজ নয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের উন্নত স্মার্টফোন না থাকলে ভিডিও কলে প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া বেশ কঠিন। তবে রেজিনা হোনু একটি সমাধান বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম ব্যবহার করতে পারি।’ 

লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য কী করা উচিত?

প্রযুক্তিতে দক্ষ না হওয়ার কারণে বেশিরভাগ নারীই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, চাকরি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন। বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক বোউথিনা গুয়ারমাজি বলেন, আফ্রিকা ছাড়া বিশ্বের সুনির্দিষ্ট কিছু দেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ অসমতার কারণ এক কথায় বোঝানো অসম্ভব। তবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীর দুর্বল অবস্থানের কারণে এ অসমতা সৃষ্টি হয়েছে।

গুয়ামাজি বলেন, ‘আমি মনে করি এর সঙ্গে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণও এর অন্যতম কারণ। অনেক দেশে নারীরা এখনও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পায় না। বিশেষ করে চাকরির বাজারে নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার না দেওয়াটিও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’ 

যুক্তরাজ্যের মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি জিএসএমএ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারীরা পুরুষের তুলনায় স্মার্টফোন কম ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের হার আরও কম। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় নারী-পুরুষের বৈষম্য অনেকটা কমে এসেছে। কিন্তু আঞ্চলিক বৈষম্য এখন পর্যন্ত রয়েই গেছে। 

নারীর প্রতি সহিংস মনোভাব বেড়েছে

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে নারীর প্রতি পুরুষের সহিংস হয়ে ওঠার প্রবণতাকে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন ‘ছায়া-মহামারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

পাকিস্তানের সাইবার-নিরাপত্তা হেল্প লাইনের নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জান্নাত ফজল বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অফলাইন ও অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি বৈষম্য হু হু করে বাড়ছে।’ 

বিবিসি জানায়, পাকিস্তানে লকডাউন আরোপ করার পর থেকে লাহোরের হেল্প লাইন নাম্বারগুলোতে নারীদের প্রতি অপরাধের অভিযোগ আসা বেড়ে গেছে। 

অনলাইনে নারীর অবস্থা

পাকিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ-কাঠামোতে ভুক্তভোগী নারীকেই দোষারোপ করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধ ঢাকার জন্য তারা হত্যাকাণ্ডের শিকারও হয়ে থাকেন। জান্নাত বলেন, ‘অনেক পুরুষ নারীদের সঙ্গে অনলাইনে বন্ধুত্ব করতে চান। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় নারীরা এসব এড়িয়ে চলতে চান। এর কারণ তারা পুরুষদের ভয় পান।’ 

জান্নাত আরও বলেন, ‘ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। নারীরা যাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সুস্থ পরিবেশ পান সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ 

তবে গুয়ারমাজি বলেন, ‘আমি আশা করছি করোনা পরিস্থিতিতে নীতিনির্ধারকরা নারীর প্রতি সহিংস মনোভাব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।’ 

সূত্র : বিবিসি।

এইচএকে/আরআর/এএ