আগামী ৫ জুলাই অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন জেফ বেজোস

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজনকে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। গত ২৭ বছরে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এ পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ বলেছে, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ৫ জুলাই প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। 

পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর জেফ বেজোস কর্মীদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৭ বছর আগে অ্যামাজনে কাজ শুরু করেছি। আমার মনে পড়ছে, তখন অ্যামাজন ছিল শুধুই একটি ধারণা এবং এর কোনো নাম ছিল না।’ 

করোনা মহামারির মধ্যেও অ্যামাজন দুর্নিবার গতিতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে। কিন্তু এমন সময়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি কেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন? প্রশ্ন উঠছে সবার মনে।

পদত্যাগের কারণ কী?

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী জেফ বেজোস সম্প্রতি ইন্সটাগ্রামে এক পোস্টে বলেছেন, ব্লু অরিজিনের মানুষ নিয়ে আগামী মাসে তিনি প্রথমবারের মতো মহাকাশ যাত্রা করবেন। সঙ্গে থাকবেন তার ছোটভাইও। তৃতীয় আরেকজন কে তাদের সঙ্গে যাবে সে সিদ্ধান্ত নিলামের মাধ্যমে নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় জেফ বেজোস লেখেন, ‘আগামী ২০ জুলাই আমরা মহাকাশে যাত্রা শুরু করবো।’ এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি মহাকাশযাত্রা করবেন। একই সঙ্গে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদককে বলতে শোনা যায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় না হলেও তার অবস্থান অনেক প্রভাবশালী। বলা যায় না, শিল্পপতি জেফ বেজোস থেকে পরবর্তীতে আমরা রাজনীতিবিদ জেফ বেজোসকেও পেয়ে যেতে পারি।’

৫ জুলাইয়ের পর অ্যামাজনের নতুন প্রধান নির্বাহী কে হচ্ছেন?

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খুচরা বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠানটি অ্যামাজনের নেতৃত্ব পরিবর্তনের ব্যাপারটি আগে থেকেই জানতেন কর্মীরা। ফেব্রুয়ারিতে জেফ বেজোস প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানান। তবে তখনও জানাননি তিনি কবে পদত্যাগ করছেন। গত ২৭ মে শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সাধারণ বৈঠকে তিনি বলেন, ৫ জুলাই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন। 

অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহীর হচ্ছেন অ্যান্ডি জোসি। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে সেখানে কর্মরত রয়েছেন। 

জেফ বেজোস বলেন, ‘৫ জুলাই আমার কাছে আবেগের একটি দিন। কারণ ১৯৯৪ সালের এ দিনেই আমি অ্যামাজনের যাত্রা শুরু করেছি।

তিনি জানান, অ্যামাজানের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি নিজের অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের কাজে মনোযোগ দেবেন।

অ্যান্ডি জোসির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জোসি দীর্ঘ ২৪ বছর অ্যামাজনের সঙ্গে কাজ করেছেন। আমি আশা করছি, তিনি এ প্রতিষ্ঠানের একজন যোগ্য নেতা হয়ে উঠবেন।’

অ্যান্ডি জোসি কী অ্যামাজনের নিজস্ব ভাবধারা ধরে রাখতে পারবেন?

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যান্ডি জোসি হবেন অ্যামাজানের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী। কয়েকটি প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কী এর নিজস্ব ভাবধারা ধরে রাখতে পারবেন? অনেকেই বলছেন, একদিকে অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কড়া নজরে রয়েছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কার্যক্রম জটিল হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় অ্যান্ডি জোসি কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা প্রতিষ্ঠানটি চালাবেন- সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অ্যামাজনের নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘টেলিহেলথকেয়ার অফার’, ‘অ্যামাজন কেয়ার’ এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প ‘প্রজেক্ট কুইপার’। এগুলো অ্যান্ডি জোসিকেই পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু তিনি কী এত বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? এ প্রসঙ্গে জেফ বেজোস বলেন, ‘আমরা আগেও ঝুঁকি নিয়েছি এবং এখনও ঝুঁকি নেবো। মাঝেমধ্যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি- এ কথা সত্য। তাই বলে আমরা হাল ছেড়ে দেবো না। আমরা আরও বড় ঝুঁকি নিতে থাকবো।’

এইচএকে/টিএম/এএ