অস্ট্রেলিয়ার নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দেশটির শিশু–কিশোরেরা বরং আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ বছরের নিচে কেউই ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। এ সিদ্ধান্তেই শিশুরা “নিয়ন্ত্রণহীনভাবে” প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউটিউব বলছে, আইন কার্যকর হলে কিশোর–কিশোরীরা কনটেন্ট দেখবে ঠিকই। কিন্তু ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট না থাকায় অভিভাবকদের পক্ষে সন্তানের দেখা কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ, ফিল্টার সেট করা বা কোন চ্যানেল ব্লক করা— এসব কিছুই আর সম্ভব হবে না।

গুগল ও ইউটিউব অস্ট্রেলিয়ার জননীতি ব্যবস্থাপক রাচেল লর্ড বলেন, “এ আইন আমাদের দশ বছরের তৈরি নিরাপদ ইকোসিস্টেমকে দুর্বল করে দেবে। বরং অস্ট্রেলিয়ার শিশুদের অনলাইনে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।”

ইউটিউবের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস। তিনি বলেন, “যদি ইউটিউব বলে যে তাদের প্ল্যাটফর্ম শিশুদের জন্য নিরাপদ নয় তাহলে সেটি ইউটিউবেরই সমাধান করতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্তকে দায়ী করা ‘অদ্ভুত’।”

ওয়েলস বলেন, জেনারেশন আলফা স্মার্টফোন হাতে পাওয়ার পর থেকেই অ্যালগরিদম–নির্ভর এক ধরনের ‘ডোপামিন ড্রিপ’-এর মধ্যে আটকা পড়ে। ফলে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা মনোযোগহরণকারী কনটেন্টের মুখোমুখি হয়। তার দাবি, নতুন আইন শিশুদের সেই “অ্যালগরিদমিক কারাগার” থেকে বের করে আনার প্রথম পদক্ষেপ।

নতুন আইন কী বলছে

  • ১৬ বছরের নিচে কেউ ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না।
  • বর্তমান সব অ্যাকাউন্ট ১০ ডিসেম্বরের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
  • ইউটিউব কিডস–এ এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
  • কোনো উপায়ে বয়স–সংক্রান্ত ফাঁকফোকর রেখে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না। 
  • আইন লঙ্ঘন করলে প্ল্যাটফর্মকে দিতে হবে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা।

ইউটিউবকে প্রথমে এই আইনের আওতায় আনা হয়নি। কিন্তু পরে জরিপে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ক্ষতিকর কনটেন্ট দেখার ক্ষেত্রে ইউটিউব “সর্বাধিক উল্লেখিত প্ল্যাটফর্ম”। এরপরই সিদ্ধান্ত পাল্টায় সরকার।

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তায় এটি সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। কিন্তু এটি সত্যিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, নাকি নতুন জটিলতা সৃষ্টি করবে— তা জানা যাবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরই।