এআই ফোনের বছর ২০২৫ : প্রসেসরের চেয়ে বুদ্ধিমত্তার লড়াই
২০২৫ সাল স্মার্টফোনের ইতিহাসে আলাদা করে মনে রাখার মতো এক বছর। এই বছর ফোন আর শুধু ক্যামেরা, ব্যাটারি বা পাতলা নকশার প্রতিযোগিতায় আটকে থাকেনি। স্মার্টফোন মানেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা— এমন এক বাস্তবতা সামনে এনে দিয়েছে ২০২৫। সংক্ষেপে বললে, এটি ছিল ‘এআই ফোন’-এর বছর।
বছরজুড়ে বাজারে আসা প্রায় সব স্মার্টফোনের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এআই। নতুন প্রসেসর, উন্নত ক্যামেরা সেন্সর কিংবা আকর্ষণীয় নকশা— সবই ছিল। তবে এগুলোকে ছাপিয়ে গেছে সফটওয়্যারভিত্তিক বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। ফোন কেবল যন্ত্র নয়, ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে ব্যবহারকারীর সহকারী।
বিজ্ঞাপন
বছরের শুরুতেই আলোচনায় আসে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৫ আলট্রা। অনেকেই এটিকে আখ্যা দেন ‘আলটিমেট অ্যান্ড্রয়েড ফোন’ হিসেবে। শক্তপোক্ত নকশা, এস পেনের উপস্থিতি ও উন্নত ক্যামেরা থাকলেও সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে এআই ব্যবহারে।
এই ফোনে স্যামসাং একসঙ্গে ব্যবহার করেছে দুটি এআই ব্যবস্থা— নিজস্ব গ্যালাক্সি এআই এবং গুগলের জেমিনি। ছবি সম্পাদনা, ভিডিও তৈরি, লেখা সাজানো কিংবা ভয়েস কমান্ড— সবখানেই এআইয়ের ছাপ স্পষ্ট। হার্ডওয়্যারে বড় কোনো বিপ্লব না ঘটলেও সফটওয়্যার অভিজ্ঞতায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। ২০২৫ সালের স্মার্টফোন জগতের মূল সুর ছিল এখানেই।
বিজ্ঞাপন
ফোল্ডেবল ফোনেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭ ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত ডিভাইস। মাত্র ৪.২ মিলিমিটার পুরু এই ফোন ওজনে হালকা, ভাঁজ করা অবস্থাতেও ব্যবহারযোগ্য। অনেকের চোখে এটি ছিল বছরের সেরা ফোন।
এই ফোনে এস পেন বাদ পড়ায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। তবে বড় স্ক্রিন, উন্নত ক্যামেরা আর এআই-ভিত্তিক মাল্টিটাস্কিং— সব মিলিয়ে জেড ফোল্ড ৭ নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে।
গুগলও পিছিয়ে ছিল না। পিক্সেল ১০ সিরিজে এআই আরও গভীরভাবে যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে জেমিনি এআই ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথোপকথনে সক্ষম হয়েছে। দৈনন্দিন সিদ্ধান্তে সহায়তা, ছবি বিশ্লেষণ— সবখানেই এআইয়ের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
পিক্সেল ফোনগুলোর ক্যামেরা বরাবরের মতোই শক্তিশালী। মেগাপিক্সেলের দৌড়ে না গিয়েও গুণগত মান ধরে রেখেছে গুগল। তবে ১০০ গুণ জুম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এআই কখনো কখনো বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি মিল রাখতে পারে না।
অ্যাপলের দিকেও ছিল সবার নজর। আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত ফোন। নতুন রং, বড় ক্যামেরা মডিউল ও উন্নত জুম সুবিধা— সব মিলিয়ে এটি নিজের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে।
তবে এআইয়ের ক্ষেত্রে অ্যাপল কিছুটা পিছিয়ে। সিরি এখনও গুগল বা স্যামসাংয়ের তুলনায় দুর্বল। তবু শক্তিশালী এ১৯ প্রো চিপ আশা জাগিয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, বড় ধরনের এআই আপডেট আসতে পারে ২০২৬ সালে।
পাতলা ফোনও ছিল আলোচনায়। আইফোন এয়ার ও গ্যালাক্সি এস২৫ এজ দেখতে আকর্ষণীয়, হাতে ধরতে আরামদায়ক। তবে অতিরিক্ত পাতলা নকশার কারণে ব্যাটারি ও ক্যামেরায় আপস করতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, খুব পাতলা ফোন এখনো মূলধারার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে— ভবিষ্যতের স্মার্টফোন হবে এআইনির্ভর। হার্ডওয়্যার ধীরে ধীরে পরিপক্বতার দিকে যাচ্ছে, আর নতুনত্বের মূল উৎস হয়ে উঠছে সফটওয়্যার। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালেও এই ধারাই অব্যাহত থাকবে।