অনলাইনে ডিজিটাল কোরবানির হাটে পশুর দাম পরিশোধে পরীক্ষামূলকভাবে এস্ক্রো সেবা চালুর প্রস্তাব করেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

রোববার (২৭ জুন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ই-কমার্সের অনলাইন ও ডিজিটাল কোরবানি হাটের লেনদেন প্রক্রিয়া নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ প্রস্তাব করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের জিএম মো. মেজবাউল হক। ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন সংগঠনটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়োহেদ তমাল ও পরিচালক আশিষ চক্রবর্তী।

সভায় ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বর্তমান অর্থ ছাড় ব্যবস্থায় ক্রেতার নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বিক্রেতা কর্তৃক নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণের পাশাপাশি আসন্ন ডিজিটাল কোরবানির হাটে পরীক্ষামূলক তথা পাইলট প্রকল্প হিসেবে এস্ক্রো সেবার মাধ্যমে পশুর মূল্য পরিশোধের ব্যাপারে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবনার ব্যাপারে এটুআই থেকে সমর্থন জানানো হয়। এস্ক্রো পাইলটিং এর ব্যাপারে এটুআই থেকে কারিগরি সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এস্ক্রো সেবা বলতে এমন একটি সেবার কথা বলা হয়েছে। যাতে অনলাইনে ক্রেতারা অর্ডার করার পর তার দেওয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এস্ক্রো-তে জমা থাকবে। তাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতার সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ই-কমার্স শপকে অর্থ ছাড় দেবে ব্যাংক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এস্ক্রোর মাধ্যমে ক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা বিধান করে।

ই-ক্যাবের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, কুরবানি পশু একটি ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়। সাধারণ মানুষ করোনা সংক্রমণরোধে হাটে না গিয়ে অনলাইনে কুরবানি পশু ক্রয় করবে। তাদের সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাই ঝুঁকি রোধ করতে হলে সীমিত পরিসরে সাময়িক ও পরীক্ষামূলকভাবে এস্ক্রো সেবা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

তিনি জানান, পরবর্তীতে এস্ক্রো সেবা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে ই-ক্যাব ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

ই-ক্যাবের ডিরেক্টর আশিষ চক্রবর্তী প্রস্তাব করেন, যেসব ক্ষেত্রে সাত দিনের বেশি সময় নিয়ে পণ্য-সেবা দেওয়ার নিমিত্তে অগ্রিম মূল্য নেওয়া হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে শিপিং কনফারমেশন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক বা তফসিলি ব্যাংক বা পেমেন্ট এগ্রিগেটর যেন বিক্রেতাকে অর্থ ছাড় দেয়।

তিনি জানান, এতে করে বিক্রেতা বা ই-কমার্স শপ শিপিংয়ের জন্য পণ্য-সেবা হস্তান্তর করলে পণ্য মূল্য পেতে পারবে। অন্যদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া ই-কমার্সকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেবা বিশেষ করে খাদ্য পণ্য ও ঔষধ সেবা দেয় তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা যথাযথ নয় বলে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন। এছাড়া যারা নিজেরা কাঁচামাল সংগ্রহ করে ব্যবসা করেন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এ ধরনের বিধির আওতামুক্ত রাখতে হবে।

ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮ তে ই-ক্যাবের অনুরোধে এস্ক্রো সেবা চালুর বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়। গত ২৭/১১/২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট পলিসি কো-অডিনেশন কমিটির ১৩তম সভায় ১০ নং প্রস্তাবনায় এস্ক্রো সেবা চালুর বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ২৫/২/২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ই-ক্যাবের যৌথসভায় এস্ক্রো সেবা বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চলতি বছর ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এস্ক্রো বাস্তবায়নে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।

ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্প্রতি অগ্রিম মূল্য আদায় নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সভায় এস্ক্রো সেবা বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত ক্রেতার নিশ্চিতকরণ মেসেজ ব্যতীত অনলাইন লেনদেনের অর্থ ছাড় না দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া সাময়িক প্রস্তাবনা গ্রহণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারই আলোকে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

একে/ওএফ