ভারতের নতুন ডিজিটাল আইন নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটারের। একদিকে তারা কোনোভাবেই আইনটি মেনে নিতে চাইছে না। অন্যদিকে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার টুইটারকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছে।

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি আইন পাস করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং সম্মতির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে কয়েক মাস সময় বেধে দেয়।

নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর ফেসবুক মালিকানাধীন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করে। সে সময় তারা বলেছিল, এ আইন মেনে নিলে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে হবে। যা তাদের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু পরবর্তীতে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও গুগলসহ বড় বড় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে আইনটি মেনে নেয়।

কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হয় টুইটারের ক্ষেত্রে। নতুন ডিজিটাল আইন অনুযায়ী প্ল্যাটফর্মটি নোডাল অফিসার ও রিড্রেসাল অফিসার নিয়োগ করলেও এখন পর্যন্ত চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ করেনি। এখানে প্রশ্ন তুলছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি কিছুদিন ভাবার সময় চেয়েছিল।

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করছেন, ভারতের নতুন ডিজিটাল আইনটি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করার কাজে ব্যবহার করা হবে।

ভারতের নতুন ডিজিটাল আইনকে কেন্দ্র করে টুইটার বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সম্মতির জন্য ক্রমাগত তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। অন্যদিকে আইনটিকে সম্মতি দিলে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে হবে- এমন কথা বলছে টুইটার। সব মিলিয়ে টুইটার এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিষয়ক সংস্থা অ্যাক্সেস নাউয়ের এশিয়া পলিসি ডিরেক্টর এবং সিনিয়র ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সেল রামান জিত সিং চিমা বলেন, ‘চলতি বছরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ন্ত্রণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোকে বার্তা দিতে গিয়ে টুইটারকে বলির পাঠা বানানো হচ্ছে।’

ভারতের নতুন ডিজিটাল আইনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত টুইটার ও ফেসবুকের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গুগল বলেছে, তারা আইন অনুযায়ী ইতোমধ্যেই তিন জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছে।

মাঠে টুইটারের লোকবল কম

রামান জিত সিং চিমার বয়ানে জানা গেছে, ফেসবুক ও গুগলের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো ভারতে টুইটারের তেমন লোকবল নেই। রাজনীতি ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রভাব থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না তারা। ফেসবুক, গুগলের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের তুলনায় ভারতে প্ল্যাটফর্মটির জনবল একেবারেই কম এবং বাণিজ্যিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

ভারতে টুইটারের কেমন জনবল রয়েছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টুইটারের গত কয়েক মাস ধরে বাগযুদ্ধ চলছে। এক পর্যায়ে প্ল্যাটফর্মটি দেশটির সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদের অ্যাকাউন্ট লক করে দেয়।

উল্লেখ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ডিজিটাল ইনফরমেশন টেকনোলজি আইন মেনে নিয়ে ফেসবুক ৩ কোটি ও ইন্সটাগ্রাম ২ লাখ ব্যবহারকারী পোস্ট এবং গুগল ৫৯ হাজার লিংক সরিয়েছে।

এইচএকে/এএ