পাহাড়সম অভিযোগের জেরে ইভ্যালির সদস্যপদ কেন স্থগিত করা হবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সাত কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও নেতিবাচক অভিযোগ আসে সেসব প্রতিষ্ঠানকেই আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় ইভ্যালিকে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, `কারণ দর্শানোর নোটিশে আমরা মেনশন করেছি যে, আপনার প্রতিষ্ঠানের (ইভ্যালি) বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক ও গণমাধ্যমে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ই-ক্যাবের কাছে বেশ কিছু ভোক্তা ও মার্চেন্ট অভিযোগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ইভ্যালির আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা ই-কমার্স খাতের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে।

ই-ক্যাবের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৯, বি অনুসারে ইভ্যালির সদস্যপদ কেন স্থগিত করা হবে না তার কারণ দর্শানোর আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যথায় আপনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ই-ক্যাব গঠনতন্ত্র হিসেবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন ঢাকা পোস্টকে জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ইভ্যালিসহ গ্লিটার্স আরএসটি ওয়াল্ড, গ্রিন বাংলা ই-কমার্স লিমিডেট, অ্যানেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লিমিটেড, আমার বাজার লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রো ফুড অ্যান্ড কনজ্যুমার লি. এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেশ কিছু পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাউচারের বিপরীতে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করায় তারা পণ্য দিচ্ছে না। সম্প্রতি ইভ্যালির গিফট ভাউচারে কেনাকাটার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।

এর আগে নানা অনিয়মের কারণে ইভ্যালিসহ ১০টি অনলাইন মার্চেন্টে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন স্থ‌গিত করেছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এম‌টি‌বি), ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক একই নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি ইউসিবি ও সিটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের এসব অনলাইন মার্চেন্টে লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

ইভ্যালির সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা।

এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের ৪ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনতে গত ৪ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

একে/ওএফ