স্বচ্ছ নীল জলের জন্য লোকমুখে লেকটি নিলাদ্রী নামে পরিচিত/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। সেখানে পাহাড়-পর্বতের মাঝে স্বচ্ছ জলের লেক। চারদিকে সবুজ মাঠ, সারি সারি গাছ। যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। ছবির মতো সুইজারল্যান্ডের মনোলোভা সৌন্দর্য কে না উপভোগ করতে চায়? কিন্তু সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে স্বপ্ন পূরণ সব সময় হয় না। সুইজারল্যান্ড দেখার স্বপ্ন যাদের হয়ে আছে অধরা, মন ভালো করা এক খবর তাদের জন্য। হ্যাঁ, ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই ঘুরে আসা যাবে স্বপ্নের ‘সুইজারল্যান্ড’!

নিলাদ্রীর স্বচ্ছ নীল জলে পা ভেজাবেন?

অবাক হচ্ছেন? তাহলে স্মরণ করুন সেই বিখ্যাত কবিতা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ একটি বাংলাদেশের মাঝে রূপসী ‘নিলাদ্রী’। বলছি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী পর্যটন এলাকা ট্যাকেরঘাটের কথা। এর পাশেই ভারতের মেঘালয়। তার পাদদেশে ট্যাকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেক। চারপাশে পাহাড় ও টিলার সবুজের সমারোহ। স্বচ্ছ নীল জলের জন্য লোকমুখে লেকটি নিলাদ্রী নামেই পরিচিত।

এখানে ঘাসের বুকে শুয়ে আকাশ দেখতে ভালোলাগে

নিলাদ্রীর কোলে ময়ূরের মতো সৌন্দর্যের পেখম মেলা ট্যাকেরঘাটে রোজ ভিড় বাড়ছে পর্যটকের। নরসিংদী থেকে ঘুরতে এসেছেন মো. রিপন মাহমুদ। সুনামগঞ্জে ‘সুইজারল্যান্ড’ দেখে তিনি মুগ্ধ। রিপন বলেন, লেকের উত্তরে নীল পাহাড়। তিন দিকে সবুজ মখমলি মাঠে ছোট ছোট টিলা। তার উপরে আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা। পারস্য কবি আমির খসরুর কবিতার একটি লাইন মনে পড়ছে- ‘যদি স্বর্গ কোথাও থাকে, তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই।’

চলুন না ভেজাই পা নিলাদ্রী জলে

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবর আলী বলেন, ২০১৭ সালে ট্যাকেরঘাটের লেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে পর্যটকের আনাগোনা। ২০১৮ সালে হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এরপর দ্রুত পরিচিত হয়ে ওঠে অপরূপা নিলাদ্রী। 

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, পর্যটকের সুবিধার জন্য ট্যাকেরঘাটে রয়েছে রেস্ট হাউজের ব্যবস্থা। লোকসমাগম বাড়ায় আশপাশে নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। এখানে ঘুরতে এসে যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করলে আমরা সহযোগিতা করব।

যেখানে ঝলমলে রোদ চুমু খায় নীল জলে

জানা যায়, চুনাপাথর সংগ্রহ করতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সিরাজ লেক ও টিলার সৃষ্টি। চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত এই খোয়ারী থেকে ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৬০ সালে ফের পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ছয় বছর মাইনিংয়ের মাধ্যমে খনিজ পাথর উত্তোলনের পর ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে শহীদ সিরাজ লেকের উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাবিরুল ইসলাম। পরে লেকসহ পুরো এলাকায় পর্যটকদের বসায় চেয়ার, বাচ্চাদের দোলনা স্থাপন করা হয়।

এইচকে