শুদ্ধোধন ও মায়াদেবীর ছেলে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নেপালের লুম্বিনি গ্রামে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই গ্রামকে তীর্থের মতো ভক্তি করে। গৌতম বুদ্ধের ছবি, মূর্তি বা স্তুপ দেখতে পাওয়া যায় এখানে। নেপালের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর অন্যতম এই গ্রাম। লুম্বিনি গ্রাম কপিলাবস্তু জেলায় অবস্থিত। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্থাপনা এবং সনাতন ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীই এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। নেপালি প্রত্নতত্ত্ববিদরা ১৮৯৬ সালে এই গ্রামে অশোক স্তম্ভের সন্ধান পান। আজ আপনাদের জানাবো বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনি গ্রামে যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেসব সম্পর্কে- 

মায়া দেবী মন্দির

নেপালের লুম্বিনি গ্রামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরের নাম মায়া দেবী মন্দির। এই স্থানে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিলো। সেই কারণে তার মায়ের নামে মন্দিরটির নামকরণ করা হয়। বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে মন্দিরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। লুম্বিনি গ্রামের মূল আকর্ষণ এটি। মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি পুকুর যেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিয়মিত গোসল করেন। পাথরের তৈরি মূর্তি দেখার জন্য ও ভক্তি করার জন্য ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে বৌদ্ধরা ছুটে আসেন। 

অশোক স্তম্ভ

ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৪৯ অব্দে স্তম্ভটি নির্মাণ করেন। লুম্বিনি গ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এটি। ১৮৯৬ সালে এর সন্ধান পাওয়ার পর পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত পছন্দের স্থাপনা হিসেবে সমাদৃত হয়। এতে চারটি স্তুপ ও ঘোড়ার আদলে তৈরি একটি স্তম্ভ রয়েছে। নেপালের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি অশোক স্তম্ভ। 

মিয়ানমার স্বর্ণমন্দির

মন্দিরটি বার্মিজ স্থাপত্যে নির্মিত। প্রার্থনার জন্য রয়েছে তিনটি কক্ষ। হলরুমের মতো কক্ষ। স্থানীয়ভাবে একে লোকমনি পুলা প্যাগোডা ও শ্বেদাগন প্যাগোডা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২৬ শতাধিক বছর আগে মন্দিরটি নির্মিত হয়। কথিত আছে, টাপুসা ও ভালিকা নামে দুই ভাই গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং বুদ্ধের চুল দিয়ে মন্দিরটির আটটি স্তুপ তৈরি করেন। বর্তমানে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে মন্দিরটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। 

বিশ্বশান্তি প্যাগোডা

১০ লাখ ডলার ব্যয়ে জাপান বিশ্বশান্তি প্যাগোডা নির্মাণ করেছে। প্যাগোডাটিতে বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। নেপালের কাসকি জেলায় এটি অবস্থিত। বর্তমানে জেলাটি পোখারার অন্তর্গত। ১৯৪৭ সালে এর নির্মাণ করা হয়। বৌদ্ধদের কাছে এটি নানা দিক থেকে সমৃদ্ধির প্রতীক। বুদ্ধমূর্তিটি পোখারা উপত্যকার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পোখারার ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র মহেন্দ্রপুল থেকে এটি ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

চীন মন্দির

চীনা মন্দিরকে একাধারে প্যাগোডা, প্রার্থনা কক্ষ ও মেডিটেশন সেল হিসেবে অভিহিত করা হয়। এখানে কেবল বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরাই আসেন না। তাও ধর্মের অনুসারী ও চীনা সংস্কৃতিবান মানুষও এখানে ভ্রমণ করেন। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য দেশ যৌথভাবে মন্দিরটি নির্মাণ করে। 

লুম্বিনি মিউজিয়াম

বিশ্বের মানুষের জন্য গৌতম বুদ্ধের ছবি ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র লুম্বিনি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। বুদ্ধের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত মিউজিয়ামটিতে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও হিন্দু সন্ন্যাসী ভ্রমণ করেন। নেপালের প্রণিধানযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা এটি। বিশেষ করে মিউজিয়ামটির জন্য লুম্বিনি গ্রাম দর্শনার্থীদের কাছে অনেক পছন্দের।

এইচএকে/এএ