ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) আয়োজনে বৃহস্পতিবার ২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ১১তম বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ পর্যটন মেলা চলবে আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত। এবারের আন্তর্জাতিক এ পর্যটন মেলায় টাইটেল স্পন্সর হিসেবে থাকছে ফার্স্ট ট্রিপ। গতকাল থেকে শুরু হলেও মেলার দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির হওয়ায় দর্শনার্থী, ভ্রমণপিপাসু, উৎসুক মানুষের পদচারণায় জমে উঠেছে পর্যটন মেলা।

শুক্রবার (৩ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুব বেশি দর্শনার্থী না থাকলেও বিকেলে এসে দর্শনার্থী, ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ পর্যটন মেলা। মেলায় কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেউবা বন্ধু-বান্ধবসহ দলবেঁধে অথবা স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে। আবার কেউ কেউ একাই এসেছেন ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন ছাড়, অফার, ডিসকাউন্টের খোঁজ নিতে। এসব ভ্রমণপ্রেমী মানুষেরা মেলায় স্টলে স্টলে ঘুরছেন আর ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন প্যাকেজ, ছাড় এবং সেবা সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন। অন্যদিকে এসব ছাড়, প্যাকেজ, অফার নিয়ে মেলায় উপস্থিত রয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন >>> মেলায় শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপের টিকিটে মিলছে ১৫ শতাংশ ছাড়

রাজধানীর উত্তরা থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটন মেলায় এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। মেলায় স্টল ঘুরে যখন তারা ভ্রমণের বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কে জানছিলেন তখনই কথা হয় এ দম্পতির সঙ্গে। রফিকুল ইসলাম বলেন, আসলে আমারা যারা বেসরকারি চাকরি করি তাদের কাজের চাপসহ বিভিন্ন কারণে একঘেয়েমিতা চলে আসে। এজন্য আমরা চেষ্টা করি সুযোগ পেলে কোথাও ঘুরে আসতে। তাই আমরা এ পর্যটন মেলায় চলে এসেছি ভ্রমণের বিভিন্ন খোঁজ-খবর নিতে। যদি নিজেদের বাজেটের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে আমরা সে প্যাকেজে ঘুরতে যাই দেশে-বিদেশে। সে উদ্দেশেই আজ মেলায় এসেছি। তবে আজ ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ভিড় বেশি মনে হচ্ছে।

রফিকুল ইসলামের সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানাও একই বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গেলে মনের প্রশান্তি বাড়ে। যেহেতু এ মেলা পর্যটন মেলা তাই এখানে এক ছাতার নিচে ভ্রমণ বিষয়ক সব তথ্য জানা যায়। বাজেটের মধ্যেও অনেক ভ্রমণ বিষয়ক প্যাকেজ পাওয়া যায় এখানে। এছাড়া মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হয়। এসব ছাড়, অফার, ভ্রমণ প্যাকেজের খোঁজ নিতেই আমারা মেলায় এসেছি।

আরও পড়ুন >>> আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় ভারত ভ্রমণের দারুণ সব প্যাকেজ

রাজধানীর গুলশান ২ থেকে পর্যটন মেলায় এসেছেন সাফায়েত হোসেন এবং তার বান্ধবী নীলা আক্তার। তারাও ঘুরছিলেন বিভিন্ন স্টলগুলোতে। আলাপকালে সাফায়েত হোসেন বলেন, গতকালও মেলায় এসেছিলাম, তবে একা। কিন্তু আজ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। গতকাল তেমন ভিড় না থাকলেও আজ মেলায় অনেক মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অফারসহ ছাড় দিচ্ছে। আমরা মূলত মালদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশেই প্যাকেজগুলোর খোঁজ নিতে এখানে এসেছি।

এদিকে মেলায় স্টল নেওয়া সাজেক প্যাভিলিয়ন নামে একটি ট্যুর প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার সাপোর্ট অফিসার সাজেদুল ইসলাম বলেন, গতকালের তুলনায় আজ মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে বিকেলের পর থেকে মেলায় ভ্রমণপ্রেমী, দর্শনার্থীরা বেশি এসেছেন। সবাই বিভিন্ন স্টলগুলোতে ঘুরছেন, খোঁজ নিচ্ছেন। আজ বিকেল থেকেই প্রতিটি স্টলেই কাস্টমার সাপোর্টের লোকজন খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এদিকে শুরু হওয়া এবারের আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় টাইটেল স্পন্সর হিসেবে থাকছে ফার্স্ট ট্রিপ। আয়োজকরা জানান, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এ মেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ ফি লাগবে না। বাকিরা ৩০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মেলায় আন্তর্জাতিক ও দেশি এয়ারলাইন্স, ট্যুরিজম বোর্ড, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইনার ও হাসপাতাল অংশ নিয়েছে। মেলায় ৩টি হলে ১৪টি প্যাভিলিয়নসহ ১৫০টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা। এবার মেলায় আয়োজন করা হয়েছে দুইটি সেমিনার।

এবারের মেলা আগের বছরের তুলনায় আরও বেশি করে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেলায় সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, এফবিসিসিআই ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া মেলায় বিভিন্ন দেশের জাতীয় পর্যটন সংস্থা ও ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনও অংশগ্রহণ করেছে। ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, জাপান ও তুরস্কের ট্যুর অপারেটর এবং ট্রাভেল এজেন্টরা অংশ নিয়েছে ১১তম বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ারে (বিটিটিএফ)।

এএসএস/এফকে