ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে ভ্রমণ যে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে তা কারও অজানা নয়। তাইতো প্রকৃতির কাছাকাছি ভ্রমণ পিপাসুদের বার বার ছুটে যাওয়ার যে অদম্য নেশা, ভ্রমনপিপাসু  না হলে আপনি তা কখনোই অনুভব করতে পারবেন না।

ভ্রমনপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় নাম কেওক্রাডং। পাহাড়ের প্রতি যাদের দুর্বলতা রয়েছে তাদের জন্য কেওক্রাডং হচ্ছে স্বর্গময় এক জায়গা। পাহাড়ের চূড়া থেকে পাহাড় ও মেঘের মিতালী আপনাকে আন্দোলিত করবে। আপনি যদি ট্র্যাকিং প্রেমিক হন তাহলে কেওক্রাডং আপনার জন্য আদর্শ জায়গা।

একসময় কেওক্রাডংকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মনে করা হলেও সম্প্রতি গবেষণায় তা ভুল প্রমাণিত হয়। কেওক্রাডং নামটি আদিবাসী মারমাদের থেকে এসেছে। যার অর্থ সবচেয়ে উচু পাঁথরের পাহাড়।

পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, ভ্রমণসঙ্গী অথবা আপনার প্রিয় ব্যক্তিকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। যেকোনো সময় ভ্রমণ করা গেলেও হালকা বৃষ্টি বা শীতের সময় যাওয়াই উপযুক্ত সময়।

ঢাকা থেকে কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে বান্দরবন যেতে হবে। বাস ও ট্রেন দু’ভাবেই যাওয়া যাবে। বান্দরবন থেকে রুমা বাজার এবং রুমা বাজার থেকে বগা লেক হয়ে কেওক্রাডং যেতে হয়। একদিনে বান্দরবন থেকে কেওক্রাডং পৌঁছানো কষ্টকর হতে পারে। ফলে একদিন বগা লেক থেকে পরের দিন রওনা হলে আপনার ভ্রমণ আরও বেশি আরামদায়ক হবে।

বান্দরবন থেকে রুমা বাজার আপনি লোকাল বাস অথবা চান্দের গাড়ি বা জিপে করে যেতে পারবেন। রুমা বাজার থেকে আপনাকে একজন গাইড সঙ্গে নিতে হবে। যেহেতু গাইড নেওয়াটা বাধ্যতামূলক তাই গাইড সমিতির রেজিস্ট্রেশন করা গাইড সঙ্গে নিবেন। তবে গাইডের থাকা-খাওয়ার খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে।

রুমা বাজার থেকে রওনা হওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই আর্মি ক্যাম্প থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন বিকাল ৪টা পর বগা লেক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। চাইলে রুমা বাজার থেকে বগা লেক চান্দের গাড়ির মাধ্যমেও যেতে পারবেন। বগা লেক পৌঁছানোর পর আপনাকে প্রথমে সেখানকার আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। সেই রাত আপনি বগালেক থেকে পরের দিন ভোরে রওনা দিলে কয়েকটি মাঝারি পাহাড় ট্র্যাকিং করার পর ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি কেওক্রাডঙ্গের চুড়ায় পৌঁছাতে পারবেন। পাহাড়ের চূড়ায় থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় উপভোগ করার মজাই আলাদা।

কেওক্রাডং যেতে খরচা-পাতি কেমন?

আপনি ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে সাউদিয়া, হানিফ, শ্যামলী, সেন্টমার্টিনসহ আরও বেশি কিছু পরিবহনে বান্দরবন যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে বান্দরবন যেতে বাসে ভাড়া জনপ্রতি ননএসি ৫৫০ টাকা এবং এসি ৯৫০-১৫০০ টাকা।

চাইলে ট্রেনেও যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি ইত্যাদি ট্রেনে শ্রেণিভেদে জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা পরবে। চট্টগ্রাম থেকে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় আপনি বান্দরবন যেতে পারবেন।

এছাড়া বান্দরবন থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত  বাস বা চান্দের গাড়ি এবং গাইড বাবদ জনপ্রতি বা দলগতভাবে একটি (আলোচনা সাপেক্ষে) নিদিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

কেওক্রাডংয়ে রাত কাটাতে চাইলে আপনাকে আদিবাসী কটেজ ভাড়া করতে হবে। চাইলে গাইডের সহায়তায় আগে থেকেই কটেজ ভাড়া করতে পারবেন। একেক রুমে জনপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। একসঙ্গে থাকা যাবে কয়েকজন। আলাদা কোন হোটেল না থাকায় আপনাকে আদিবাসীদের ঘরেই খাবার খেতে হবে। এখানে আলাদাভাবে ও প্যাকেজ (১০০ থেকে ২০০ টাকা) হিসেবে  ভাত,ডাল,আলুভর্তা, পাহাড়ি মুরগী পাবেন।

কেওক্রাডং না থেকে বগা লেকেও থাকতে পারবেন। এখানেও আপনাকে আদিবাসীদের ছোট ছোট কটেজে থাকতে হবে। কটেজগুলতে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হবে। তবে এক রুমে ৫ থেকে ৬ জন থাকতে পারবেন। চাইলে মহিলা বা কাপলদের জন্য আলাদা থাকার জায়গা করে নিতে পারবেন। এখানেও আপনি আলাদাভাবে ও প্যাকেজ (১০০থেকে ২০০ টাকা) হিসেবে  ভাত,ডাল,আলুভর্তা, পাহাড়ি মুরগী পাবেন।

যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে

পাহাড়ে ভ্রমণে আপনাকে অতিরিক্ত কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১। প্রয়োজনের থেকে বেশি কিছু নিবেন না। কারণ আপনি যত জিনিস কম নিবেন আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তত আরামদায়ক হবে। যেহেতু পাহাড়ে ভ্রমণ করবেন তাই ট্র্যাকিং এর জন্য কম জিনিস নেওয়াটাই শ্রেয়।

২। ট্র্যাকিংয়ের জন্য অবশ্যই ভালো গ্রিপের জুতা ব্যবহার করবেন।

৩। ট্র্যাকিংয়ের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, গ্লুকোজ, স্যালাইন সঙ্গে রাখবেন।

৪। পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় গোসলের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।