বাগেরহাটের মোংলায় কেটেছে ছেলেবেলা। নাম ছিল কামাল হোসেন। কামালের চলনে বলনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে থাকে। পরিবার, প্রতিবেশীসহ সবাই তার দিকে যেন ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকায়।

কামালের মধ্যে নারীর মতো চালচলন স্পষ্ট থেকে আরও স্পষ্ট হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কামাল থেকে তিনি হয়ে গেলেন শিশির। পুরো নাম তাসনুভা আনান শিশির।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সোমবার (৮ মার্চ) দুপুর ও বিকেলে দুইবার দুটি বুলেটিন পাঠ করেন। বাংলাদেশের রূপান্তরিত নারী হিসেবে তিনিই প্রথম সংবাদ পাঠক। বৈশাখী টেলিভিশনে নাটকের জন্য অডিশন দিতে গিয়ে তার স্পষ্ট উচ্চারণ কর্তৃপক্ষকে আকৃষ্ট করে। আর তিনি নিয়োগ পান সংবাদ পাঠক হিসেবে।

কামালের শিশির হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে কষ্টগাথা। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে শিশির জানালেন তার এগিয়ে চলার সংগ্রাম ও আত্মবিশ্বাসের কথা। 

ছেলেবেলার কথা মনে হলেই কষ্ট হয় শিশিরের। আশপাশের লোকজন কেমন করে যেন তাকাত। বলত কোমর দুলিয়ে হাঁটে। গালমন্দ শুনতে হয়েছে। সেটা পাঁচ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়েছিল। কেউ ‘হিজড়া’, কেউ ‘ছক্কা’ বলে ডাকত। কেউ বলত ‘হাফ লেডিস’। কামাল নামে তাকে কেউ আর ডাকত না। 

একসময় পরিবার ছাড়তে হয় সেই কামালকে। মোংলার পরিচিত পরিবেশ হয়ে ওঠে যন্ত্রণার, বিরক্তির। মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে বাগেরহাট ছাড়েন। পরে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে। সেখানে চাচার বাসায় থাকতেন। পরিবারের সঙ্গে এখন যোগাযোগ নেই। তারা চার বোন ও এক ভাই। অন্য ভাই-বোন সবাই বিবাহিত। ২০০৬ সাল থেকে তিনি নাটক করতেন।  

শারীরিক পরিবর্তন আরো স্পষ্ট হলে হেনস্তার শিকার হতে থাকেন। তিনি পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৬ সালে তিনি কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে পুরুষ থেকে রূপান্তরিত নারী হন। আর নাম পরিবর্তন করে রাখেন তাসনুভা আনান শিশির।

শিশির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নাটকের কাজে গিয়েছিলাম। আমার উচ্চারণ উপস্থাপন দেখে বৈশাখী টিভি থেকে আমাকে সংবাদ পাঠের জন্য অডিশন দিতে বলা হয়েছিল। আর চাকরি হয়ে গেল। 

সোমবার (৮ মার্চ) বেলা ১২টায় প্রায় ছয় মিনিটের বুলেটিন পাঠ করার পর বেশ ফুরফুরে ছিলেন শিশির। এরপর বিকেল চারটায় আবার সংবাদ পাঠ করেন শিশির। প্রায় ছয় মিনিট তিনি সংবাদ পাঠ করেন বেশ সাবলীলভাবে। উচ্চারণও ছিল স্পষ্ট। সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শিশির বলেন, আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সংবাদ পাঠ করব, এ সংবাদ পেয়ে আনন্দে সারারাত কেঁদেছি। বাঁধভাঙা আনন্দ আমার।
 
পিএসডি/আরএইচ /এমএমজে