কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক করার তাড়া কেন?

আগামী মাসে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে উদ্বোধন করতে চায় সরকার। জুলাইয়ের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে এটি উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অথচ বিমানবন্দরটির অত্যাধুনিক টার্মিনালের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তড়িঘড়ি করেই এটি চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কেন এই তাড়াহুড়ো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এভিয়েশন অঙ্গনে।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান টার্মিনালে ইমিগ্রেশন কাউন্টার স্থাপন করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা প্রায় ‘অসম্ভব’।
বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে দিনে ১৯টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৪টি, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ৭টি, নভোএয়ার ৩টি এবং এয়ার অ্যাস্ট্রা ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমানবন্দরে প্রথম ফ্লাইটটি অবতরণ করে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে সর্বশেষ ফ্লাইটটি রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের চেক-ইন, সিকিউরিটি চেকিং ও বোর্ডিং করতে হুলুস্থুল লেগে যায়। একটি ফ্লাইট কোনো কারণে দেরিতে ছাড়লে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। অনেক সময় বসার সিটও পান না যাত্রীরা। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টির পুনর্বিবেচনা চান সংশ্লিষ্টরা।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফ্লাইট যারাই পরিচালনা করুক না কেন, এটাকে আমরা জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করে দেব। অনেক এয়ারলাইন্সকে বলা হয়েছে। এয়ার অ্যারাবিয়া ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তারা বলেছে, তারাই প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করবে। রুটটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জুলাই মাসের ২৭ ও ২৮ তারিখে সব এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কথা বলে আমরা চূড়ান্তভাবে ফ্লাইট নির্ধারণ করব।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান এয়ার অ্যারাবিয়া বর্তমানে ঢাকা থেকে শারজাহ রুটে সরাসরি ৪টি ও চট্টগ্রাম থেকে ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বেবিচক সূত্র বলছে, কক্সবাজার সদর, চকোরিয়া, কুতুবদিয়া, রামু, মহেশখালী ও টেকনাফে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে প্রবাসী হিসেবে আছেন। এসব উপজেলার বাসিন্দাদের ফ্লাইট ধরতে চট্টগ্রামে যেতে হয়। তাই তাদের জন্য সপ্তাহে অন্তত একটি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে এয়ার অ্যারাবিয়ার।
এর আগে কক্সবাজার বিমানবন্দর ইস্যুতে গত ২১ এপ্রিল বেবিচক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ চলতি জুন মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ না হয়, তবে প্রয়োজনে বর্তমান টার্মিনাল ভবন থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ রেখে সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
এতে কোন কোন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট কাটা পড়বে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
আরও পড়ুন
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আপাতত বর্তমান টার্মিনাল ভবন থেকেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) অনুমোদন নিতে হবে। এখনো সেই অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা হাসান বলেন, জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি টার্মিনালের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। উদ্বোধনের আগেই শেষ হবে মনে করছি। দেখা যাক কী হয়।

কক্সবাজার বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ শেষ হতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। বর্তমান টার্মিনাল থেকে দিনের বেলা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা প্রায় অসম্ভব। কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে সর্বশেষ ফ্লাইটটি ছাড়ে রাত সাড়ে ৮টায়। ২৪ ঘণ্টা যদি বিমানবন্দর খোলা রাখা যায় সেক্ষেত্রে মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে দুইশর বেশি যাত্রী হ্যান্ডেল করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিমান
এদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিমান কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক কোন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
তবে বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেবিচকের পক্ষ থেকে বিমানকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বেবিচক চায় বিমান যেন প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি পরিচালনা করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বিমানে এয়ারক্রাফটের সংকট রয়েছে। হজের মৌসুমে এ সংকটের কারণে অনেক রুটে ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হয়। এবারও তাই করতে হয়েছে। আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের রুট তৈরির কোনো সুযোগ নেই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্লাইট চালানো বা না চালানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। কিন্তু অবকাঠামোগত প্রস্তুতি, সেবার মান, নিরাপত্তা প্রটোকল এবং আন্তর্জাতিক অনুমোদন ছাড়া তা কতটা কার্যকর হবে— এ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। এটি হতে পারে রাজনৈতিক সময়সূচি ভিত্তিক সিদ্ধান্ত। বাস্তবসম্মতভাবে পরিকল্পনা না করা হলে প্রথম ফ্লাইটই হয়ে যেতে পারে সর্বশেষ ফ্লাইট!
এআর/এসএসএইচ