বিমানের বকেয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ বেবিচক, পরিশোধে কড়া বার্তা

দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে গড়িমসি এবং ভ্যাট ও কর সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এছাড়া প্লেনে ভ্রমণ করা যাত্রীসংক্রান্ত তথ্য যথাযথভাবে সরবরাহ না করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে স্পষ্ট আল্টিমেটাম দিয়েছে সংস্থাটি।
বেবিচক জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ ও সব অনিয়মের সমাধান না হলে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে বেবিচক সদরদপ্তরের অর্থ ও হিসাব বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য (অর্থ) ও যুগ্মসচিব মোহাম্মদ নাজমুল হক।
সভায় বেবিচকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে বেবিচের মোট পাওনা ৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে মূল বিল ৫৫৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বকেয়ার ওপর সারচার্জ চার হাজার ৭৯৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তারা পাওনা পরিশোধে বিমানকে তাগিদ দেন।
তবে, সভায় উপস্থিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, তাদের হিসাবে বিমানের বকেয়া মূল বিলের পরিমাণ ৩৭১ কোটি টাকা।
বিমান ও বেবিচকের মধ্যে দেনা-পাওনার হিসাবের মধ্যে ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার বড় পার্থক্য থাকায় বিষয়টিকে গুরুতর হিসেবে দেখছে বেবিচক। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দরভিত্তিক যৌথ রিকনসাইলেশন সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।
সভায় বেবিচকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিয়মিতভাবে ভ্যাট পরিশোধ করছে না এবং বিল থেকে উৎসে কর কর্তন করলেও তার চালানের কপি বেবিচককে সরবরাহ করে না। ফলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে গিয়ে বেবিচক সমস্যার মুখে পড়ছে।
সভায় বেবিচক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, ভ্যাট পরিশোধ থেকে অব্যাহতি সংক্রান্ত কোনো সরকারি আদেশ বা এসআরও দেখাতে না পারলে বিমানকে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
বেবিচক আরও অভিযোগ করে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিয়মিতভাবে প্যাসেঞ্জার ম্যানিফেস্ট সরবরাহ করছে না। মাস শেষে শুধু যাত্রী সংখ্যার একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়, তা-ও বিলম্বে। এর ফলে এম্বারকেশন ফি, যাত্রী নিরাপত্তা ফি এবং বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি— এই তিন খাতে প্রকৃত রাজস্ব নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। বেবিচক এটিকে সরাসরি রাজস্ব ক্ষতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে এবং প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্যাসেঞ্জার ম্যানিফেস্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সভায় আন্তর্জাতিক ল্যান্ডিং বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বেবিচক জানায়, বিমান বিল পরিশোধে নতুন ডলার রেট ব্যবহার না করে আগের রেট অনুসরণ করছে, ফলে সংস্থাটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন থেকে চলতি ডলার রেটে বিল পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রী বহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের এম্বারকেশন ফি, যাত্রী নিরাপত্তা ফি ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিশোধ না করে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে পরিশোধ করছে। এতে বেবিচকের আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে সভায় জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত বেবিচকের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চলতি সব বিল নিয়মিতভাবে পরিশোধ করবে, বকেয়া হিসাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিকনসাইল করবে এবং বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমান ডলার রেট অনুসরণ করবে। একই সঙ্গে ভ্যাট অব্যাহতির প্রমাণ না দিলে নিয়মিত ভ্যাট পরিশোধ বাধ্যতামূলক হবে। সভা শেষে বেবিচকের বার্তা ছিল স্পষ্ট— বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অর্থ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বকেয়ার পরিমাণগুলো আবারও যাচাই-বাছাই করে পরিশোধের উদ্যোগ নেব।
এআর/এমজে