পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের গবেষণা

Dhaka Post Desk

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, হাবিপ্রবি

০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৭ পিএম


পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের গবেষণা

মাঠ পর্যায়ে গিয়ে শিক্ষা অর্জন করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। এরই ধারাবাহিকতায় মাঠ পর্যায়ের গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নেয় দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক বর্ষের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের এনজিও ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এবং গ্রামীণ সমাজের পরিবারের প্রকৃত চিত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণা করা হয়। 

প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান, শিক্ষার্থীদের পোশাক, প্রয়োজনীয় খাতা-কলম, পানির বোতল, ওষুধসহ প্রাসঙ্গিক বেশ কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিভাগীয় শিক্ষকরা। 'রুরাল সোসাইটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ও মাইনোরিটিজ অ্যান্ড ইন্ডিজেনাস সোসাইটি' কোর্সের অংশ হিসেবে ফিল্ডওয়ার্কে সার্বিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুর রশিদ এবং সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম।

ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থিত এনজিও ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি ব্যাচকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয় এবং সেই অনুযায়ী ইএসডিও প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এবং জায়গা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা।

গ্রুপ-১ এর শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ের শহরের পরিষদ পাড়া। সেখানে গিয়ে তারা মুসোহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন। তথ্যানুযায়ী মুসোহ আদিবাসীরা সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং ঋষি সম্প্রদায়ভুক্ত। অধিকাংশ মুসোহ আদিবাসী ধনিক গোষ্ঠীর জমিতে বসবাস করেন। 

গ্রুপ-২ এর শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল ওরাওঁ আদিবাসী গ্রামে। প্রধানত ওরাওঁ'রা খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে। মোট ২৯টি পরিবারের মধ্যে ২০টি পরিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ৯টি পরিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২৮ জন। ওরাওঁদের ভাষা ওরাওঁ এবং একক ও যৌথ পরিবার দুটিই রয়েছে তাদের মধ্যে। একই গোত্রে বিয়ের প্রচলন নেই। বরপক্ষ কনে পক্ষকে পণ দিয়ে বউ নিয়ে আসার নীতি রয়েছে ওরাওঁদের মধ্যে। বাৎসরিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে কারাম উৎসব, কারাম পূজা ও আসারী পূজা। তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

৩ নম্বর গ্রুপের শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রীকৃষ্ণপূর সাঁওতাল পট্টিতে। সেখানে তাদের সঙ্গে ইএসডিও'র প্রতিনিধির পাশাপাশি ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম। তারা সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের পূর্ববর্তী অবস্থা, সংস্কৃতি, জীবনচর্চা, খাদ্যাভাস, সামজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা।

গ্রুপ-৪ এর শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের সমৃদ্ধি কর্মসূচির শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্রে। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

গ্রুপ-৫ শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল সদর উপজেলার রহিমানপুরে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ঋষি সম্প্রদায়ের একটি পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠী, যারা বর্তমানে হতদরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপন করছে। তাদের প্রায় ৪২টি পরিবারে ১৩০ জন লোক বসবাস করে। 

গ্রুপ-৬ এর শিক্ষার্থীরা হাজির হয় ঠাকুরগাঁওয়ের ১০নং জামালপুর ইউনিয়নে। এলাকায় যে সমস্ত কাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সেখানকার সমস্যা এবং উন্নতি বা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন তারা।

গবেষণারত শিক্ষার্থীরা জানান, এ তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে লিখিত পরীক্ষাসহ একটি পেপার জমা দিতে হবে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের লিখিত পরীক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ বাস্তব জীবনের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ এবং তা জানা একজন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সমাজ ও সমাজের মানুষদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমরা সবাই একসঙ্গে উন্নয়নের পথে চলতে চাই।

এমএএস

Link copied