সিট বাণিজ্য বন্ধে মাঠে নামলেন রাবি শিক্ষকরাও
আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থী নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে অবস্থান নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সোমবার (১৩ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এসময় আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মুখ্য উদ্দেশ্য আজ ধ্বংসের মুখে। যার ফল আমরা ভোগ করছি। বৈধভাবে সিট বরাদ্দ পেয়েও দিনের পর দিন বাইরে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হলে অবস্থান না করেও হলের ভাড়া দিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা হলে উঠলেও নির্মমভাবে নির্যাতন করে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরতে গিয়ে মারধর ও নির্যাতন শিকার হতে হয়েছে। অনেকের ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও রুম দখল করে আছে। প্রচার সেল, প্রকাশনা সেল রুমে লিখে রুম দখল করে রেখেছে। ফলে একজন হলের মসজিদের ইমামও তার রুম পাচ্ছে না। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করুন, না হলে ছাত্র-শিক্ষকের আন্দোলন আরও ভয়াবহ হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, শুধু আবাসিকতার কথা বললে হবে না। শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ে কি খায় প্রশাসন কি কখনো খোঁজ খবর নিয়েছে? নেয়নি। বিশেষ বিশেষ লোকের জন্য বিশেষ বিশেষ রান্না হয় হলে। প্রভোস্টদের প্রত্যেক বেলা ডাইনিংয়ে খাওয়া উচিত। যখন প্রভোস্টরা হলে খেতে যান তখন খাবারের মান পাল্টে যায়। বাংলাদেশ ছাড়া এমন নিকৃষ্টতম কাজ আর অন্য কোনো দেশে হয় কি না আমার জানা নেই।
ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, আমি নিজেই হলের বৈধ সিট পেয়েও আমি তিন মাসের মধ্যে হলে উঠতে পারিনি। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ আবাসিক হলগুলোতে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বৈধ সিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে তারা এই সাহস পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান না করে তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব এবং হল ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্লা বলেন, আমি আমার মেয়ের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভয়াবহতার কথা শুনেছি। মেয়েদের জন্য সান্ধ্য আইন করা হয়েছে এর পেছনে কারণ কি? এর পেছনে কারণ হলো বখাটে ছেলেদের হাত থেকে মেয়েদেরকে রক্ষা করা। ক্যাম্পাস তো বখাটে ছেলেদের জন্য নয়। প্রশাসনের আশ্রয়ে ছাত্রলীগের অনেককর্মী বখাটে হয়ে উঠছে। তাদের এখন দমন করতে পারছে না বলে এই সান্ধ্য আইন। দেশে এরকম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার জন্যে আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। আজকের বাংলাদেশ আমাদেরকে হতাশ করেছে।
এসময় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন— পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ আহসান নকিব, অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসাইন, সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.আখতার মজুমদার, চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম, রয়াসন বিভাগের আব্দুল্লাহ শামসহ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মেশকাত মিশু/এসএসএইচ